বাংলার ভোর প্রতিবেদক
সনাতন ধর্মবিশ্বাসীদের প্রাণপুরুষ যুগাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি, শুভ মহা জন্মাষ্টমী আজ। সারা বিশ্বের সাথে একযোগে যশোরেও সনাতন ধর্ম বিশ্বাসীরা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানসহ উৎসাহ উদ্দীপনায় বর্ণাঢ্য নানা আয়োজনে উদযাপন করবেন এ বিশেষ দিনটি। সনাতন ধর্মে ভগবান বিষ্ণুর একটি বিশেষ রূপ হিসেবে মানা হয় শ্রীকৃষ্ণকে। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে পৃথিবীতে সাকার রূপে আবির্ভূত হন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তার আবির্ভূত হওয়ার এই দিনটিই কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী নামে পরিচিত। অরাজকতা, নিপীড়ন, অত্যাচার চরম পর্যায়ে পৌঁছালে অশুভ শক্তির বিনাশ করতে এবং দুষ্টের দমন করতে তিনি পৃথিবীতে জন্ম নেন শিষ্টের পালন আর সাধুজনদের রক্ষার জন্য।
ঐতিহাসিকদের বিবেচনায় খ্রিষ্টপূর্ব ৯০০ থেকে ১০০০ সালে সনাতম ধর্মের প্রাণপুরুষ শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। তার জন্মের সময় এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড পাপ ও অরাজকতায় পরিপূর্ণ ছিল। তাই মানব জাতিকে রক্ষার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। নানা ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে শ্রীকৃষ্ণ মানব জাতির কাছে জীবনধারণের অনন্য উদাহরণ রেখে গেছেন বলে বিশ্বাস করেন সনাতন ধর্ম বিশ্বাসীরা। শ্রীকৃষ্ণ হলেন দেবকী এবং বাসুদেবের অষ্টম সন্তান। পুরাণ, মহাভারত, ভাগবতের বর্ণনা এবং জ্যোতিষশাস্ত্রের গণনা অনুসারে, কৃষ্ণ মথুরার যাদব বংশের বৃষ্ণি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তার জন্ম তারিখ খ্রিষ্টপূর্ব ৩২২৮ সালের ১৮ জুলাই এবং তার মৃত্যুর দিন খ্রিষ্টপূর্ব ৩১০২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। তবে সনাতনধর্মে গ্রেগরিয়ান তারিখ নয়, প্রাধান্য পায় গ্রহ, নক্ষত্রের গতিপথ।
উল্লেখ্য, শুভ জন্মাষ্টমীর তিথি সাধারণত সৌর ও চন্দ্র উভয়ের তথ্যের ওপর নির্ভর করে। এ বছর আজ ১৬ আগস্ট জন্মাষ্টমী উৎসবের তিথি নির্ধারিত হয়েছে।
সনাতন ধর্মানুসারে, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অত্যাচারীর বিরুদ্ধে দুর্বলের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন করতেই এ পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। শান্তিহীন পৃথিবীতে শান্তি আনতেই শান্তিদাতা শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব।
ধর্মানুসারে, ঈশ্বর তত্ত্বের মহান প্রতীক হলেন শ্রীকৃষ্ণ। বেদে তিনি ঋষি কৃষ্ণ, দেবতা কৃষ্ণ। মহাভারতে রাজর্ষি কৃষ্ণ, শাসক ও প্রজাপালক কৃষ্ণ, অত্যাচারী দমনে যোদ্ধা কৃষ্ণ। ইতিহাসে যাদব কৃষ্ণ, দর্শনশাস্ত্রে সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ কৃষ্ণ। শ্রী ভগবদ্গীতায় অবতার কৃষ্ণ, দার্শনিক কৃষ্ণ, পুরুষোত্তম কৃষ্ণ, ঈশ্বরায়িত কৃষ্ণ।
দিনটিতে সনাতন ধর্মবিশ্বাসীরা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে দিনটি উদযাপন করে। এই দিন ভক্তরা শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভালোবাসা ব্যক্ত করার জন্য ধর্মীয় গান করেন। দরিদ্রদের দুঃখ অনুধাবন করতে এবং কৃষ্ণের সান্নিধ্য লাভের আশায় অভুক্ত থাকেন।
প্রতিবছরের ন্যায় এ উৎসবকে কেন্দ্র করে এ বছরও বিশেষ শোভাযাত্রা বের হবে। আয়োজন করা হবে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।
যশোরে এ আয়োজন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রস্তুতি সম্পর্কে শুক্রবার পূজা উদযাপন পরিষদ যশোর জেলা কমিটি এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। যশোর লালদিঘি পূর্বপাড়স্থ শ্রীশ্রী হরি মন্দিরের দ্বিতীয়তলায় পরিষদের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পূজা উদযাপন পরিষদ যশোর জেলা শাখার সভাপতি দীপংকর দাস রতন। স্বাগত বক্তব্য দেন ও লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পূজা উদযাপন পরিষদ যশোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ।
লিখিত বক্তব্যে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, সূর্যোদয়ের পরপরই মন্দিরে মন্দিরে এবং বাসা-বাড়িতে বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জন্মাষ্টমী উদযাপন শুরু হবে। এরপর সকাল ৯টায় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ যশোর জেলা ও সদর কমিটির উদ্যোগে স্থানীয় ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দানে হবে ভক্ত সমাবেশ, শতকণ্ঠে গীতা পাঠ, দেশ ও জাতির কল্যাণে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বালন, ভক্তিগীতি ও শাস্ত্রীয় নৃত্য পরিবেশন, আলোচনাসভা এবং মঙ্গল শোভাযাত্রা।
মঙ্গল শোভাযাত্রা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বেজপাড়া মন্দির সংলগ্ন ঘোষ বাড়ির মাঠে সমবেত হবে। এখানে জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে আয়োজিত গীতা পাঠ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ এবং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য রান্না করা খাবার বিতরণ করা হবে। সমস্ত অনুষ্ঠানে সকলকে অংশ নেয়ার জন্য সংবাদ সম্মেলন থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। সন্ধ্যায় হবে বেজপাড়া পূজা সমিতি মন্দিরে কীর্তন পরিবেশন করবেন সুলতা মল্লিক।
এদিকে, পূজা উদযাপন পরিষদ যশোর জেলা শাখার উদ্যোগে এ উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে বগচর শ্রীশ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ বিগ্রহ মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় গীতা পাঠ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।