বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের দুঃখ হিসেবে পরিচিত ভবদহ জলাবদ্ধ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে পরিদর্শনে আসছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের তিন উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সকালে তারা ভবদহ এলাকায় চলমান প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করার পাশাপাশি দুর্ভোগ লাঘবে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলবেন। ভবদহ নিয়ে দীর্ঘদিন আন্দোলন করা নেতারা বলছে, ‘এক সঙ্গে তিন উপদেষ্টা ভবদহ এলাকা পরিদর্শন ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। কেননা বিগত সময়ে এভাবে একসাথে তিন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষকর্তাদের পা পড়েনি ভবদহে। এবারে তিন উপদেষ্টার আগমনের মধ্যে দিয়ে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী আগামিতে পদক্ষেপ নিয়ে ভবদহের দুঃখ ঘোছাবে এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ভবদহ এলাকা পরিদর্শনে আসছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, পরিবেশ বন ও জলবালয়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিন উপদেষ্টার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও উপস্থিত থাকবেন। উপদেষ্টারা এদিন সকাল সাড়ে নয়টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে নওয়াপাড়া সরকারি কলেজ মাঠে অবতরণ করবেন। এরপর সেনাবাহিনী প্রতিনিধি টিম, স্থানীয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উর্ধতনদের নিয়ে ভবদহ এলাকার বিভিন্ন স্থানে পরিদর্শন করবেন।
সেখানে বছরের পর বছর ভোগান্তিতে পড়া মানুষেদের সঙ্গে কথা বলবেন। ভোগান্তি লাঘবে আগামীতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণে সেনাবাহিনীর প্রস্তাবিত নকশা পরিদর্শন ও সরেজমিনে মতামত গ্রহণ করবেন। এরপর বিকেলে যশোরের জেলা প্রশাসকের মিলনায়তনে সুধী সমাজ, ভবদহ সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। পলি পড়ে এই অঞ্চলের পানি নিস্কাশনের মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী নাব্য হারিয়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে নদী দিয়ে পানি নামতে পারে না। বর্ষায় জলাবদ্ধতায় ক্ষেতের ফসল, ঘেরের মাছ সবই কেড়ে নেয় পানি। জলাবদ্ধতায় মগ্ন থাকে শতাধিক গ্রামের ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, কৃষিজমি এবং মাছের ঘের। এই অঞ্চলের ৪ লক্ষাধিক মানুষের ঠাঁই হয়ে মহাসড়কের ধারে বা স্কুল কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে। অথচ বিগত চার দশকে ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হয়নি।
অভিযোগ, বিগত সরকারগুলোর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তারা সিংহভাগ লুটপাট করেছে। তাই বছরের পর বছর জলাবদ্ধতায় ভোগা মানুষেরা দীর্ঘদিন স্থায়ী সমাধানে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালু ও আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছে।
এমন পরিস্থিতিতে প্রথমবারের মতো সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রণালয়ের তিন উপদেষ্টা আগমনে আশার আলো দেখছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও ভবদহ সংগ্রাম কমিটি। আর জনপ্রতিনিধিদের আশারবাণী না শুনিয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
ভবদহ পাড়ের মানুষ না হলেও ভবদহের দুঃখ দুর্দশা লাঘবে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেছেন বাম নেতা ও ভবদহ সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ। আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পুলিশের হামলায় রক্তও ঝরিয়েছেন তিনি। এই নেতাও তিন উপদেষ্টার আগমনে আশান্বিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর সরেজমিনে ঘুরে গেছেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি ওই সময় বলে গেছিলেন জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভবদহের স্থায়ী সমাধান হবে। সেই অনুযাযী ভবদহ এলাকার আমডাঙ্গা খাল খননের টেণ্ডার শুরু হয়েছে। আমাদের দীর্ঘদিনের যে দাবি ছিলো সেচ পাম্পের মাধ্যমে পানি সরানো বন্ধ করা। সেই জায়গায় স্থায়ী সমাধানে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালু। সেই জায়গাও উপদেষ্টার আগ্রহ আছে। সবমিলিয়ে ত্রাণ, কৃষি ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার আগমনে আমরা আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘বিগত সময়ে বিভিন্ন প্রকল্পে নামে যারা লুটপাট করেছে, তাদেরও বিচার দাবি করবো আমরা। উপদেষ্টারা ভবদহ এলাকা পরিদর্শন করবেন, সেনাবাহিনীর নকশা অনুযাযী স্থানগুলো পরিদর্শন করবেন। তারপর তাদের মতামত আমাদের সাথে দিবেন, আমরাও মতামত প্রদান করবো। তাদের মতামতের উপর ভিত্তি করেই আমরা আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ জানাবো।’
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ভবদহ জলাবদ্ধতার কারণে চার দশকের বছরের বেশি সময় ধরে তারা ভুগছেন। বিশেষ করে বিগত সরকারের প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্যের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা। বর্তমান সরকার আমডাঙা খাল সংস্কার ও টিআরএম বাস্তবায়ন করলে তারা স্থায়ীভাবে জলবদ্ধ মুক্ত হতে পারবেন।
ভবদহ পানি নিস্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী বলেন, ‘এর আগে উপদেষ্টার নির্দেশে কিছুটা পানি নিস্কাশনের কাজ শুরু হয়েছে। এবার কৃষি, ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টারাও আসছেন। আমরা কৃষকদের ক্ষতিপূরণ চাইবো, কৃষি ঋণ মওকুফের দাবি জানাবো। একই সাথে পানি সেচের নামে লুটপাটকারীদের বিচার দাবি জানাবো। নতুন করে উপদেষ্টারা আসায় আমরা আশার আলো দেখছি। তবে আমরা সরকারের কাছে দ্রুত সফল বাস্তবায়নের দাবি জানাই।