মনিরুজ্জামান মনির
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের প্রধান ফটক সংলগ্ন সড়কের ফুটপাত দখল ও যত্রতত্র পাকিং করায় যানজট তীব্র হচ্ছে। অপরদিকে, হাসপাতাল চত্বরের ইজিবাইক, অটো রিক্সা হাসপাতাল চত্বরে এলোমেলো পার্কিং করায় চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এতে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের সামনের সড়কে রিক্সা, অটোরিক্সা, ব্যাটারিচালিত রিক্সা, কাভার্ড ভ্যান, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন প্রকারের যানবাহন এ সড়কে চলাচল করে। হাসপাতালের সামনে বা ভিতর থেকেও রোগীসহ রোগীর স্বজনরা ওঠানামা করে। আবার বিভিন্ন যানবাহনের চালক যাত্রী পাওয়ার আশায় হাসপাতালের সামনে তাদের যানবাহন দাঁড় করিয়ে রাখছে। এদিকে ফুটপাত বা সড়কের কিছু অংশ নিয়ে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী খাবারের দোকান। অনেকে ভ্যান গাড়ীতে দাঁড়িয়ে বিক্রি করছে বিভিন্ন খাবারের আইটেম।
অন্যদিকে, হাসপাতালের মেইন গেট হতে জরুরি বিভাগের সামনে খালি জায়গায় বিভিন্ন ইজিবাইক, অটো রিক্স্রা এবং বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ও মাইক্রোবাস দাঁড় করিয়ে রেখেও যানজট সৃষ্টি করে। হাসপাতালে কর্তব্যরত আনসার এবং পুলিশ সদস্যরা এসব যানবাহন সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও কার্যত তাদের চেষ্টা ব্যহত হচ্ছে।
অ্যাম্বুলেন্স চালক কবির হোসেন, ছুটির দিন ছাড়া সকাল ৯ টা হতে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের সামনে যানজট থাকেই। অনেক সময় জরুরি রোগী আনতে যাওয়া সময়ও যানজটে পড়তে হয়। আবার ভিতরে ঢোকার সময়ও যানজটে পড়তে হচ্ছে। এ সময় আমাদেরও খুব খারাপ লাগে রোগী এবং রোগীর স্বজনদের আহাজারিতে।
অ্যাম্বুলেন্স চালক তানভীর হোসেন নান্নু জানান, আমি সদর হাসপাতালের রোগী আনা নেয়া করি। তবে হাসপাতালের সামনে প্রতিনিয়ত যানজট সৃষ্টি হয়। এটা হওয়ার কারণ বেপরোয়া গাড়ি চলাচল। অনেক সময় রোগী নিয়ে আধা ঘন্টা হাসপাতালের সামনের রাস্তায় দাঁড়ায় থাকতে হয়।
রেবেকা ড্রাগের আব্দুল্লাহ জানান, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত সদর হাসপাতালের সামনে যনজট তৈরি হয়। অনেক সময় অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে দাঁড়িয়ে হর্ণ বাজানো দেখে আমাদেরও খারাপ লাগে।
বাচ্চু ড্রাগের স্বাধীন রেজা জানান, সদর হাসপাতালের সামনে প্রতিদিন সকাল ৯ টা হতে দুপুর পর্যন্ত যানজট থাকে। অনেক সময় দেখা যায় গুরুত্বতর রোগী অ্যাম্বুলেন্সে যানজটে পড়ে। এর কারণ হচ্ছে এ রাস্তার ইজিবাইক এবং অটো রিক্সার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। আমরা তো অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ শুনলেই রাস্তা ফাঁকা করে দেওয়ার চেষ্টা করি। অথচ এদের মধ্যে মনে হয় এ অনুভূতিটা নেই।
হাসপাতালের জরুরি সেবা নিতে আসা নজরুল ইসলাম জানান, হাসপাতালের প্রধান গেটের সামনের রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের যানবাহন এলোমেলো দাঁড়িয়ে আছে। আমি ঝিনাইদাহ কালিঞ্জ থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসছি। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আসলেও হাসপাতালের সামনে যানজটে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। বিষয়টি শুধু আমি না গুরুত্বতর রোগীর ক্ষেত্রে আরো বড় সমস্যা। এ বিষয়টি দ্রুত নিরসন হওয়া প্রয়োজন।
রোগীদের স্বজনরা জানান, শুধু রোগী নিয়ে আসার সময় নয়, গুরুতর অবস্থায় রোগীকে অনেক সময় ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। তখনো হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নেওয়ার সময় দীর্ঘ সময় হাসপাতালের সামনেই যানজটে আটকে থাকতে হয়। এসব কারণে সময়মতো রোগী যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ায় তাঁদের মৃত্যুর ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
যশোর শহর ও যানবাহন পুলিশ পরিদর্শক (সদর ট্রাফিক-১) মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, যশোর সদর হাসপাতালের সামনের রোডে আগের মত যানজট নেই। অনেক সময় ইন্টার্নি ডাক্তারদের এবং স্কুলের বাস যখন যায়, তখন একটু যানজট হয়। আমাদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মো. হুসাইন শাফায়াত বলেন, হাসপাতালের ভিতরে রোগী ছাড়া ইজিবাইক বা অটো রিক্সা প্রবেশ নিষেধ রয়েছে। তবে ভিতরে ইজিবাইক সিরিয়াল দিয়ে লোক উঠাচ্ছে এ বিষয়ে আমার জানা নেই। যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাসপাতালের লোকসহ পুলিশ এ বিষয়ে কাজ করছে। তবে হাসপাতালের বাইরের সড়কটির বিষয়ে আমাদের কোন করণীয় নেই। আমার মন্তব্য হলো এ হাসপাতালে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগীসহ রোগীর সাথে স্বজনরা যাওয়া আসা করে। সেখানে হাসপাতালের সামনের সড়কটি চাপ বেশি থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু সেখানে আমাদের দেখতে হবে এ সড়কটি কতটুকু প্রস্থ আছে। সেটা আগে দেখা প্রয়োজন।