♦ মামলায় অজ্ঞাত আসামি হিসেবে ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে অর্থবাণিজ্য
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের আলোচিত সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারী রমজান শেখ হত্যাকাণ্ড’কে পূঁজি করে ‘ষড়যন্ত্রের ছক’ এঁকেছে রেলগেট এলাকার সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারে জড়িত চিহ্নিত চক্র। চক্রটি এলাকার সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারিদের বাগে আনতে রমজান হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। হুমকি দিয়ে তাদের দলে ভেড়ানোর পাশাপাশি অর্থবাণিজ্যও শুরু করেছে। আর এই চক্রটি নিহত রমজানের শেল্টারদাতা তার চাচা শিকদার নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। রেলগেট এলাকার একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, গত ৮ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে শহরের রেলগেট কলাবাগাজ এলাকায় ‘শিষ্য পিচ্চি রাজা’র হাতে গুরু রমজান’ খুন হয়। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। নিহত রমজানের পরিবারের দাবি, এলাকার পিচ্চি রাজা ও তার সহযোগীরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় ৯ মার্চ সন্ধ্যায় ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন নিহত রমজানের মা রেখা বেগম।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রমজান হত্যা মামলা দায়েরের পর র্যাব-৬ যশোরের ক্যাম্পের সদস্যরা ১১ মার্চ যশোরের শংকরপুর, বাঘারপাড়া ও শার্শা এলাকা থেকে রমজান হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি আলোচিত সন্ত্রাসী পিচ্চি রাজাসহ ৫ জনকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে দেশি বিদেশি ৯টি অস্ত্র উদ্ধার করে র্যাব। এছাড়া রমজান হত্যা মামলায় দেলোয়ার হোসেন নামে আরেক আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আসামিদের মধ্যে কয়েকজন আদালতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন।
সূত্র আরও জানায়, এ পর্যন্ত আটক আসামিদের মধ্যে যারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন তারা হামলার কারণ ও বিবরণ বর্ণনা করেছেন। বিবরণ অনুযায়ী, রমজান হত্যাকাণ্ড কিভাবে সংঘটিত হয়েছে এবং কারা-কেন জড়িত তার মোটামুটি চিত্র আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রয়েছে। তারপরও স্থানীয় একটি চক্র এই হত্যা মামলা নিয়ে ষড়যন্ত্রের ছক কঁষেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রমজান হত্যা মামলায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও কয়েকজন অজ্ঞাত আসামি রাখা হয়েছে। এই অজ্ঞাত ‘আসামি’ নিয়ে অর্থ বাণিজ্যে নেমেছেন নিহত রমজানের শেল্টারদাতা তার চাচা শিকদারের নেতৃত্বে চিহ্নিত একটি চক্র। চক্রটি এলাকার সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারিদের বাগে আনতে রমজান হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে এবং মোটা টাকা চাঁদা দাবি করছে। চক্রের সদস্যরা এলাকার বিভিন্ন মামলার আসামিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করে আপোস-রফার প্রস্তাব দিচ্ছে বলেও সূত্র জানিয়েছে। পাশাপাশি তাদের সাথে থেকে মাদকের কারবার করার জন্যও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
এদিকে, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও আলোচিত মাদক কারবারী ৩২ মামলার আসামি রেলগেট এলাকার রমজান শেখ (৩০) হত্যাকাণ্ডের পর নিহত রমজানের অস্ত্র-সস্ত্র ও মাদকের চালান নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। সূত্র মতে, গত এক বছর ধরে রেলগেট এলাকার মাদক কারবারে আধিপত্য ছিল রমজান শেখের। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার থেকে তার কাছে ইয়াবার চালান আসতো। আর চৌগাছার ছুটিপুরসহ সীমান্ত এলাকা থেকে আসতো ফেনসিডিলের চালান। এছাড়া অন্যান্য মাদকের কারবারও ছিল।
সূত্রের দাবি, রেলগেট এলাকায় প্রতিদিনই কয়েক লাখ টাকার মাদকের কারবার ছিল নিহত রমজানের। রমজানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জনের একটি চক্র এই মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করতো। এই মাদকের কারবারে আধিপত্য বজায় রাখার জন্য দেশি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল রমজান চক্রের। রমজানের এই কারবারে সহযোগী ছিল, রমজানের ছোট ভাই সবুজ, রেলস্টেশন পাড়ার কুরবান, জোসনার ছেলে রকি, একই এলাকার জুয়েল, রুবেল, মুন্না পিচ্চি বাবুসহ অন্তত ১৫ জন।
অভিযোগ রয়েছে, রমজানের নেতৃত্বে এই মাদক-সন্ত্রাসী চক্রের শেলটারদাতা ছিলেন তার চাচা শিকদার। শিকদারের বিরুদ্ধে সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান মুকুলের গাড়ি চালক কামাল হত্যা, শহিদ ড্রাইভারের ছেলে রুবেল হত্যাকাণ্ড ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতা তপু হত্যাচেষ্টা মামলাও রয়েছে। শিকদার এখন রমজানের অস্ত্র ও মাদকের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। আর এজন্যও তিনি রমজান হত্যা মামলাকে ব্যবহার করছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, রমজান হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত পিচ্চি রাজা সহযোগীসহ গ্রেফতার হয়েছে। পাশাপাশি অস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত বাকীদেরও গ্রেফতার এবং অস্ত্র-মাদক উদ্ধারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নিহত রমজানের অস্ত্র-মাদকের চালানের ব্যাপারেও তারা অনুসন্ধান করছেন।