♦শতবর্ষী যশোর জেলা পরিষদ ভবন ভাঙার অপতৎপরতা রুখে দিতে কর্মসূচি ঘোষণা
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক শতবর্ষী জেলা পরিষদ ভবন রক্ষার দাবিতে যশোরের ঐতিহ্য রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরের দ্বিতীয়তলার অডিটোরিয়ামে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে শতবর্ষী যশোর জেলা পরিষদ ভবন ভেঙ্গে ফেলার অপতৎপরতা রুখে দিতে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ২৯ এপ্রিল সকাল সাড়ে নয়টায় জেলা প্রশাসকের সাথে এবং ২ মে সন্ধ্যা সাতটায় যশোরের সুধী সমাজ, সাংবাদিকসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় ও জনমত গঠন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন যশোরের ঐতিহ্য রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক প্রবীণ সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন যশোরের ঐতিহ্য রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব অ্যাড. মাহমুদ হাসান বুলু। তিনি বলেন, যশোরে যে ক’টি পুরোনো ভবন ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে মাথা উঁচু করে আছে তার মধ্যে জেলা পরিষদ ভবন অন্যতম। যশোর জেলা পরিষদ ভবনটি যুক্ত বাংলার প্রথম জেলা যশোরের দ্বিতীয় প্রশাসনিক ভবন। স্থানীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য ১৯১৩ সালে এ ভবনটি নির্মিত হয়।
তবে জেলা পরিষদের বর্তমানে দাপ্তরিক কার্যক্রম চালানো এই প্রাচীন ভবনটি ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি জেলা পরিষদের জেলা কনডেমনেশন কমিটির সভায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। জেলা পরিষদ ভবন ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় সচেতন মহলে। তারা এই প্রাচীন ভবনটি রক্ষার দাবিতে রাজপথে নামেন। আন্দোলনের মধ্যে ভেঙ্গে ফেলার প্রক্রিয়া থেমে যায়।
কিন্তু এখন আবার এই ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু হয়েছে। ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার জন্য ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদ যশোর যৌথভাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবারও চিঠি দেয়। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে চলতি বছরের গত ৫ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমিন প্রধানের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ভবনটিকে অকেজো ঘোষণা করে তা নিলামে বিক্রি করার নির্দেশ দেয়।
তিনি বলেন, আমরা যশোরবাসী এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা মনে করি এটি ইতিহাস-ঐতিহ্য বিরোধী সর্বনাশী সিদ্ধান্ত। তবে জেলা পরিষদ ভবনটি সংস্কারের প্রয়োজন হতে পারে। এক্ষেত্রে মূল নকশা অপরিবর্তিত রেখে সংস্কার করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যশোরের ইতিহাস জানার সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করি।
তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মতামত ব্যক্ত করেন- যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা একরাম উদ দ্দৌলা, শ্রমিক নেতা মাহবুবুর রহমান মজনু, যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান ভিটু, দৈনিক লোকসমাজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আনোয়ারুল কবীর নান্টু, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনোতোষ বসু, সাধারণ সম্পাদক এইচআর তুহিন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যশোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাজেদ রহমান বকুল, প্রেসক্লাব যশোরের যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিলন, নাগরিক কমিটির নেতা আহসানউল্লাহ ময়না, উদীচী যশোরের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব, সাংবাদিক প্রণব দাস, ইন্দ্রজিৎ রায়, এনজিও সমন্বয়কারী শাহজাহান নান্নু প্রমুখ। শতবর্ষী জেলা পরিষদ ভবনসহ যশোরের জেলা জজ আদালত, পুলিশ সুপারের কার্যালয়ও ইতিহাস ঐতিহ্যের স্মারক। এগুলোও সংরক্ষণের দাবি করে ধারাবাহিক আন্দোলনের পক্ষে মতামত দেন বক্তারা।
প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ ভারতের প্রথম জেলা হলো যশোর। যশোরকে জেলা করা হয় ১৭৮১ সালে। আর অবিভক্ত বাংলার সেলফ গভর্নমেন্ট অ্যাক্টের আওতায় ১৮৮৫ সালে যশোর ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকেই ১৮৮৬ সালে যশোর ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৫৯ সালে তা পরিবর্তন করে ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল করা হয় এবং ১৯৭৬ সালে স্থানীয় সরকার আইনে করা হয় জেলা পরিষদ। যশোর ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পর ১৯১৩ সালে নিজস্ব ভবন স্থাপন করা হয়। ওই বছর ১৩ মার্চ এর উদ্বোধন করেন ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান। এখনো অবিকৃত অবস্থায় সেই ভবনটি দাঁড়িয়ে আছে। এটি এখন কালের সাক্ষী, গর্বিত ঐতিহ্যের স্মারক।