বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর-১ (শার্শা) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন চার জন। গত বছরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই এই চারজনই নিজ নিজ বলয় নিয়ে মাঠ গোছানোর কাজ করেছেন। কিন্তু আসনটিতে দলের সম্ভাব্য মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি। মনোনয়ন পেয়ে তিনি ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। মনোনয়ন না পাওয়ায় হতাশ শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির, সাবেক সভাপতি খায়রুজ্জামান মধু, সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটনের অনুসারীরা। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তারা তৃপ্তির প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন না। চূড়ান্ত মনোনয়নের আশায় এই তিন প্রার্থীই কোমর বেঁধে নতুন করে মাঠে নেমেছেন। ফলে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন প্রকাশ্যে। দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে আসনটিতে বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করেছে, যার প্রভাব এখন প্রান্তিক পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যেও।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে যশোরের ৬টি আসনের পাঁচটিতে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। ফাঁকা আসন নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। ঘোষিত পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটি আসনে চূড়ান্ত মনোনয়ন নিয়ে বিরোধ তুঙ্গে। ঘোষিত প্রার্থীর সঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা থাকলেও মনোনয়ন বঞ্চিতরা মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটের মাঠে জামায়াতের পাশাপাশি মনোনয়ন বঞ্চিতদের সাথে লড়তে হচ্ছে ধানের শীষের প্রার্থীদের। বঞ্চিতরা নিজ দলের প্রার্থীকে ব্যর্থ প্রমাণে প্রতিদিনই সভা সমাবেশে একে অন্যকে ঘায়েল করে দিচ্ছেন বক্তব্য। এতে একদিকে যেমন কর্মী সমর্থকদের মধ্যে বাড়ছে উত্তাপ- উত্তেজনা; অন্যদিকে বিপক্ষ দলের কাছে ক্ষুণ্ন হচ্ছে দলের ইমেজ। তবে নির্বাচনের আগে দলীয় বিবাদ মিটিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবে এমন প্রত্যাশা তৃণমূলের।
শার্শা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির বলেন, ‘তৃপ্তিকে দল প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছেন। তার মনোনয়নে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা খুশি নয়। এজন্য তৃণমূলের নেতাকর্মীদের এখনো স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটের মাঠে নামানো সম্ভব হয়নি। আমরা ধানের শীষের পক্ষে কাজ করছি।’
মনোনয়ন পুনর্মূল্যায়নে বঞ্চিতদের ঐক্যমত
যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানা মুন্নী। দলীয় মনোনয়ন পেয়েই একবার ঝিকরগাছা আরেকবার চৌগাছার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাইতে ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি। তবে আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্যরা। নিজেরা প্রার্থী হওয়ার মনোবাসনা নিয়ে চাইছেন, প্রতিদ্বন্দ্বির মতো বিএনপির প্রার্থীও যেন শক্তিশালী হয়! এ কারণে তারা এখন পর্যন্ত দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামেননি। প্রার্থী পরিবর্তনের আবেদন জানিয়ে গত ১০ নভেম্বর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছেন ঝিকরগাছা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমরান সামাদ নিপুন ও চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম। নতুন করে মনোনয়নের দাবিতে গত শুক্রবার ও রোববার আসনটিতে মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়েছেন যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যাণ্ড ইণ্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান। পৃথক কর্মসূচি করে বেড়াচ্ছেন আরেক প্রার্থী চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলামও। মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীদের কর্মীরা বলছেন, আসনটিতে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বি জামায়াতের ডা. মোসলেহউদ্দিন ফরিদ। ইতোমধ্যে তিনি শক্তিশালী অবস্থান জানান দিয়েছেন। মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা না করলে আসনটিতে বিএনপির পরাজয় নিশ্চিত। এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরে জনসংযোগ চালিয়ে আসা মিজানুর রহমান খান এখনো মনে করছেন দল প্রার্থী পুনর্বিবেচনা করবে। তিনি বলেন, মনোনয়ন দেয়ার আগেই তারেক রহমান নিজে আমাকে এলাকায় কাজ করতে বলেছেন। সে অনুযায়ী কাজ করছি। জানতে চাইলে সাবিরা সুলতানা বলেন, ‘জনসংযোগে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছি। প্রতিটি পথসভায় নারী ও পুরুষের উপস্থিতি প্রায় সমান।’
যশোর-৩ (সদর) আসনের মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ও সাবেকমন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ছেলে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি একমাত্র মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায় এই আসনে কোন্দল নেই। অমিতকে ঘিরে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন। যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন কৃষকদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব। তিনি জোরেশোরে নির্বাচনি প্রচারণায় মাঠে নেমে পড়েছেন। এই আসনে আরও দুইজন মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তাদের একজন ঢাকা মহানগরের (দক্ষিণ) যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ মনোনয়ন না পেলেও টিএস আইয়ুবের পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। তবে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারাজী মতিয়ার রহমানকে দল মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না।
যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেনি। এই আসন জোটের শরিক দলের জন্য ছেড়ে দেয়া হবে, নাকি শেষ মুহূর্তে দলের কোনো চমক থাকছে, সেটি পরিস্কার নয়। গুঞ্জন রয়েছে জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহকারী মহাসচিব ও এই আসনের সাবেক এমপি, সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মুফতি ওয়াক্কাসের ছেলে মাওলানা রশিদ আহমাদকে আসনটি ছেড়ে দেয়া হবে। যদিও আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার দাবি তৃণমূলের। শেষ পর্যন্ত বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা হবে এমন আশায় এখনও মাঠে কাজ করছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. শহিদ মোহাম্মদ ইকবাল, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিন্টু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখার সেলিম অগ্নি।
যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ। প্রায় একযুগ পরে এলাকায় ফিরে তিনি গণসংযোগ শুরু করেছেন। এই আসনের দুজন প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় সহধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু ও কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ মনোনয়ন না পাওয়ায় তাদের অনুসারীদের এখনো শ্রাবণের পক্ষে কাজ করতে দেখা যায়নি।
যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘মনোনয়ন না পাওয়া মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ক্ষোভ হতাশা রয়েছে। তবে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়ার পর থেকে নেতাকর্মীরা ব্যক্তি নয়; সবাই ধানের শীষের পক্ষে কাজ করবেন।’
