♦ দুদকের চেয়ারম্যানের উচিত ভারতে আ.লীগ নেতাকর্মী পার করার
কাজে জড়িতদের নাম প্রকাশ করা: দেলোয়ার হোসেন খোকন♦ অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ না করে যশোরের রাজনৈতিক
নেতাদের প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন দুদক চেয়ারম্যান: জিল্লুর রহমান ভিটু♦ আ.লীগের দোসরদের কারা ভারতে পার করেছে যশোরবাসী জানে: রাশেদ খান
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের রাজনীতিক এলিটদের মাধ্যমে স্বৈরাচারের দোসর ভারতে পার হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন দুদক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন। রোববার দুপুরে যশোর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দুর্নীতি দমন কমিশনের গণশুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আবদুল মোমেন বলেন, দুর্নীতির ধরণ চেঞ্জ হচ্ছে। মানুষ পারাপার করেও টাকা আদায় করা যায়, দুর্নীতি করা যায়- এই যশোরে এসে দুর্নীতির নতুন ধরণ শুনলাম। স্বৈরাচারের দোসর হোক, মামলার আসামি হোক, তারা যশোরের রাজনীতির এলিটদের মাধ্যমে ভারতে পার হচ্ছে।
দুদক চেয়ারম্যানের এমন বিস্ফোরক বক্তব্যে তোলপাড় যশোরের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সচেতন মহল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ চায়ের আড্ডা সর্বমহলে এখন একটাই প্রশ্ন কারা এই রাজনীতিক এলিট ?
জানা যায়, ছাত্র-জনতার ওপর বর্বর হত্যাকাণ্ড চালানোর পর অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। কঠিন বিপদে ফেলে যান তার দল আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সংসদ-সদস্য, মন্ত্রী ও দলীয় নেতাকর্মীদের। জনরোষ থেকে প্রাণ বাঁচাতে নেতাকর্মীরা আকাশ, জল ও স্থলপথে ভারতে পালিয়েছেন। পালাতে গিয়ে কেউ কেউ আটকও হচ্ছেন। তাদের পারাপারে বিভিন্ন সীমান্তে গড়ে উঠেছে একাধিক পাচারকারী চক্র। এ চক্রের সদস্যরা প্রভাবশালীদের কাছ থেকে অর্থ, সোনা-গহনা হাতিয়ে নিচ্ছে। ৫ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত বেনাপোল ইমিগ্রেশনের প্রভাবশালী ও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ করে’ আওয়ামী লীগের অর্ধশতাধিক পদধারী নেতাকর্মী ও সাবেক সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তারা ভারতে গেছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র বলছে, দেশে আওয়ামী লীগের যত নেতাকর্মী ভারতে পালিয়েছে বড় একটি অংশ পার হয় যশোর ঝিনাইদহ সীমান্ত দিয়ে। গণমাধ্যমসহ নেতাকর্মীদের ভাষ্য দলটির সেকেন্ড ইন কমান্ড সাবেক মন্ত্রী ও দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক সাংসদ শেখ হেলাল, শেখ তন্ময়সহ খুলনা শেখ পরিবারের সদস্যরা। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক যুগ্ম-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। টানা চারবার শার্শার সংসদ সদস্য ছিলেন শেখ আফিল উদ্দিন। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় শার্শার সীমান্তে চোরাচালান তার অনুসারীরাই নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে শেখ আফিলের সহযোগিতায় ভারতে গেছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং খুলনার সাবেক সংসদ সদস্য এস এম কামাল। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের ঘনিষ্ঠ এবং ‘ফার্মগেটের রাজা’ নামে পরিচিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ওরফে ইরানও এ পথে ভারতে গেছেন। পুটখালি সীমান্ত দিয়ে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার ভারতে গেছেন। শহরের একটি পাঁচ তারকা হোটেলের ম্যানেজার কলকাতার বাসিন্দা হওয়ায় তার মাধ্যমে তিনি কলকাতায় পাড়ি জমিয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর ঘিবা সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাওয়া অন্যদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক এমপি (মণিরামপুর-৫) ও প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, রণজিৎ রায় (যশোর-৪); সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদ, যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল ও শার্শার স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা আকুল হোসাইন। সেই সাথে নাম না জানা অনেক নেতাকর্মী ও মামলার আসামি সীমান্ত দিয়ে পার হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এছাড়া ভারতে যাওয়ার পথে শতাধিক নেতাকর্মী আটক হয়েছে ইমিগ্রেশনে। সূত্র বলছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে যশোরের এসব সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করতেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। গণঅভ্যুত্থানের দিন থেকেই সীমান্তের এসব অবৈধ ঘাট নিয়ন্ত্রণ শুরু করে একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। যা বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতাদের সীমান্ত দিয়ে পার করে দেয়া নেতাকর্মীদের নাম ইতোমেধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার হাতে রয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে গত রোববার যশোরে আসনে দুদকের চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন। জেলার গণশুনানির একপর্যায়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে যশোরের রাজনীতিক এলিটদের মাধ্যমে স্বৈরাচারের দোসর ভারতে পালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এদিকে, যশোরের রাজনৈতিক নেতাদের দিকে বিস্ফোরক মন্তব্যের এই তীর ছোড়া নিয়ে যশোরের সর্বমহলে চলছে আলোচনা সমালোচনা। অনেকেই রাজনৈতিক নেতাদের ইঙ্গিত দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করছেন। এখন সবার মনে এখন একটাই
প্রশ্ন কারা সেই রাজনীতিক এলিট?
প্রতিক্রিয়ায় যা বলছেন রাজনৈতিক নেতারা :
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোরের সাবেক আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘দেশের যত আওয়ামী লীগের দোসর ভারতে অবস্থান করছে, তাদের বড় একটি অংশ পার হয়েছে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে। পার করে দেয়ার সঙ্গে বিএনপি জামায়াত ও নতুন দলগুলোর কোন না কোন নেতা পর্যায়ের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এটা যশোরবাসী জানে। ৫ আগস্টের পর কারা সীমান্তগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। নিশ্চয় বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো এসবের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এসব দলগুলোর স্থানীয় নেতাকর্মী ও শ্রমিক সংগঠনগুলো এসব কাজে জড়িত ছিল।’
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, ‘দুদকের চেয়ারম্যানের উচিত ভারতে আ.লীগ নেতাকর্মী পার করার কাজে জড়িতদের নাম প্রকাশ করা। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
বামগণতান্ত্রিক জোট যশোরের সমন্বয়ক জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, দুদকের চেয়ারম্যানের বক্তব্য গুরুত্ব দিয়েই দেখছি। তবে তিনি কোন দল বা ব্যক্তির নাম বলে যাননি। দায়িত্ববান লোক হয়ে ভাসা ভাসা বলে চলে গেলেন। তিনি যশোরের রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্নবিদ্ধ করে রেখে চলে গেলেন। তার কাছে যদি কোন প্রমাণ থাকে; তাদের নাম প্রকাশ করা উচিত। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। আর যদি তার কাছে প্রমাণ না থাকে তার অবশ্যই ক্ষমা চাওয়া উচিত। যশোর নাগরিক সচেতন কমিটির সভাপতি পাভেল চৌধুরি বলেন, ‘দুদকের চেয়ারম্যানের মন্তব্যটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পষ্টকাতর বিষয়। তিনি সাধারণ লোক না। তিনি এমন একটি মন্তব্য করেছেন, কারা জড়িত বা কোন দল সেটা প্রকাশ করেননি। তাদের নাম প্রমাণসহ প্রকাশ করা উচিত ছিল। তিনি যদি তা না করতে পারেন, তাহলে সেটা গর্হিত অপরাধ করেছেন বলে আমি মনে করি।

