# কৃষকের ক্ষেতের পাকা ধান তছনছ
# ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে আহ্বান
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
আধা ঘন্টার শিলাবৃষ্টিতে যশোরে ফসলের মাঠ তছনছ হয়ে গেছে। কেটে রাখা ধান পানির নিচে, আর যে সকল ধান কাটা হয়নি অধিকাংশ শিলার আঘাতে ঝরে পড়েছে। ধান ছাড়াও পাট, তিল, কলাসহ রবি মৌসুমের ফসলও ক্ষতির শিকার হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা বলছেন, রেলগাড়ির মতো মাঠের ভেতর দিয়ে ছুটে গেছে শিলাবৃষ্টি। যেদিক দিয়ে গেছে, সর্বনাশ করে গেছে। ডানে-বাঁয়ে তেমন কিছুই হয়নি। ধানক্ষেত হয়ে গেছে খড়ের খেত! কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, আকস্মিক এই শিলাবৃষ্টিতে যশোরে ৭ হাজার ৯২ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বোরো ধান ৫ হাজার ১১ হেক্টর। এদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে জেলা কৃষক খেতমজুর সংগ্রাম সমিতির নেতৃবৃন্দ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর ও কৃষকেরা বলছেন, গত দুই সপ্তাহের তীব্র তাপদাহ শেষে সোমবার দুইটার দিকে আকাশ কালো মেঘে ঢাকা পড়ে। এরপর শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। কিছুক্ষণের মধ্যেই ২২ নটিক্যাল মাইল বেগে কালবৈশাখির ঝড়ের সঙ্গে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। একপর্যায়ে বৃষ্টি কম হলে প্রচুর পরিমাণে শিলা পড়তে থাকে।
দীর্ঘ সময় ধরে শিলাবৃষ্টি কারণে যশোরে বোরো মৌসুমে উঠতি ধানের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সবেচেয়ে বেশি ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে চৌগাছা, সদর ও বাঘারপাড়া উপজেলাতে। শেষ সময়ে ধান শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াতে চিন্তিত হাজারো চাষি। শিলাবৃষ্টিতে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
চৌগাছার সিংহঝুলী মাঠপাড়াতে গ্রামের কৃষক টনিরাজ তার জমির ক্ষেতে ধানগাছ শুধু দাঁড়িয়ে আছে, শীষ থেকে ধান ঝরে পড়ে রয়েছে মাটিতে। শিলার আঘাতে ঝরে পড়া ধানের ক্ষেতের মাটিতে সোনালী রঙের হয়ে আছে। টনিরাজ বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে ধান করেছিলাম। ১৫ কাঠা কেটেছিলাম। ২৫ কাঠা কাটা হয়নি। শিলাবৃষ্টির পর মাঠে গিয়ে দেখি একটি ধানও নেই। তিনি বলেন, এখনও জমির লিজের ২০ হাজার টাকা দিতে হবে ক্ষেত মালিকের। সব শেষ হয়ে গেছে।’
একই গ্রামের কৃষক শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, ‘এবার ১১ বিঘা ধান করেছিলাম। ৪বিঘা কাটা হয়নি, দেড় বিঘা কেটে ক্ষেতেই রেখেছিলাম। এই ধান সব শেষ হয়ে গেছে। যেগুলো কাটা হয়নি সব ঝরে গেছে। এতে সাড়ে তিন লাখ টাকার অধিক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।’
একই এলাকার কৃষক দশাল মন্ডল, ফারুক দফাদার, জামশেদ আলীসহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, সিংহঝুলী, বলিদাপাড়া, ঝাউতলা, জামালতা, জগন্নাথপুর, কয়ারপাড়া মাঠের ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এসব এলাকার ২ থেকে ৩ হাজার হেক্টর জমির বাসমতি ধানের সবচে বেশি ক্ষতি হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেতেই বাসমতি ও মিনিকেট ধান সব ঝরে গেছে। আর এক সপ্তাহ সময় দিলে আমাদের মাঠের ধানেগুলো সব বাড়িতে নেয়া যেত। তারা বলেন, শুধু ধানেরই না এসব মাঠের পটল, কচুসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি, আম লিচুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে, সদর উপজেলার, সালতা গ্রামের কৃষক ইউসুফ আলী, ডহরপড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক জানান, কাশিমপুর গ্রামের মন্টু মিয়া, কাশিমপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক, ডহরপাড়া গ্রামের কৃষক বাকাজ্জেল জানান, এত পরিমাণ শিলা বৃষ্টি হয়েছে যে গাছের সবজি ছিড়ে ছিড়ে মাটিতে পড়েছে। সবজি গাছের পাতা এবং ডগা ছিড়ে গেছে। মাঠের ধানের শীষ কেটে পড়েছে।
এছাড়া বাঘারপাড়াতে কৃষকের পাকা ধান কেটে স্তুপ করা গাদায় বজ্রপাতে কয়েকটি মাঠে আগুন ঝরে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আকস্মিক এই শিলাবৃষ্টিতে যশোরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চৌগাছাতে। মাঠে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ধানের ক্ষতি হয়েছে। এ বছর এক লাখ ৫৭ হজার ৫০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছিলো। এর মধ্যে সোমবার পর্যন্ত কাটা হয়েছে ৫১ ভাগ জমির ধান।
তিনি জানান, আধা ঘন্টার শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধানের ৫ হাজার ১১ হেক্টর জমির ধান, তিল ১৩ হেক্টর, কলা ৩ হেক্টর, মরিচ ৮ হেক্টর, আম ১৭ হেক্টর, পাট ১ হাজার ৪৩৪ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন কেটে রাখা ধান ক্ষেত থেকে পানি বের করার পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করছি, আগামীকাল থেকে আবহাওয়ার উন্নতি ঘটবে। তাই আমরা চাষিদের পাকা ধান দ্রুত কেটে নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।’
এদিকে, জেলার বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে সরকারকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে এক বিবৃতি দিয়েছে কৃষক খেতমজুর সংগ্রাম সমিতির যশোর জেলা শাখা। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন কৃষক খেতমজুর সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও জাতীয় কৃষক খেতমজুর সমিতির জেলা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিজানুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক মফিজুর রহমান নান্নু, সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ভিটু, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির জেলা সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম, বাংলাদেশ খেতমজুর কৃষক ফ্রন্টের অন্যতম নেতা রফিউদ্দিন ও বাংলাদেশ খেতমজুর সমিতির জেলা নেতা মহিব। আজ মঙ্গলবার ১০ টায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতার দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকে অনুরোধ করতে কৃষক খেতমজুর সংগ্রাম পরিষদের এক প্রতিনিধি দল জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করবে।