বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর সদরের আবদুলপুরে আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি মেম্বর আনিসুর রহমানসহ অন্তত ৮ জনের বাড়িতে আগুন, ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার রাত ও বুধবার সকালে সদর উপজেলার আবদুলপুর গ্রামে কয়েক দফায় এ ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর মধ্যে রয়েছে-আবদুলপুর গ্রামের ইউপি মেম্বর আনিসুর রহমান, সাবেক মেম্বর মহসীন আলী, রমজান আলী, লাল্টু মিয়া, মিন্টু মিয়া, ইসরাফিল প্রমুখ। খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। যৌথ বাহিনীর সদস্যরা সাড়াশি অভিযান শুরু করেছে। ইতিমধ্যে লুট হওয়া ১১টি ছাগল ও ৮টি গরু উদ্ধার করেছে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর ও হৈবতপুর ইউনিয়নের বড় হৈবতপুর গ্রামবাসীর মধ্যে জমিতে সেচের পানি দেয়া নিয়ে কথাকাটি হয়। এ সময় আব্দুলপুর গ্রামের ইউপি সদস্য আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে মাইকে ঘোষণা দিয়ে হৈবতপুর গ্রামবাসীর উপর হামলা চালানো হয়। এতে জখম হন হৈবতপুর গ্রামের বিএনপি ও যুবদলের চার নেতা। এ ঘটনার জের ধরে মঙ্গলবার রাতে আবদুলপুর গ্রামে ইউপি মেম্বর আনিসুর রহমান, সাবেক ইউপি সদস্য মহাসিনসহ চারজনের বাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই আব্দুলপুর গ্রামে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। বুধবার সকালে ফের আবদুলপুর গ্রামে হামলা চালায় দেড় শতাধিক লোকজন। এ সময় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে আব্দুলপুর গ্রামের রমজান আলী, লাল্টু, মিন্টু, ইসরাফিলের বাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। হামলাকারীরা গরু, ছাগল, হাঁস মুরগি, নগদ টাকা লুট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ও পরিস্থিতি শান্ত করে। পরে আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযানে লুট হওয়া ১১টি ছাগল ও ৮টি গরু উদ্ধার করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, রাজনৈতিক কারণে নিরীহ মানুষের বাড়ি ঘরে আগুন ও হামলা চালিয়েছে একটি পক্ষ। আগুনে অনেকের বাড়ি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গোটা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। হামলা মামলার ভয়ে আব্দুলপুর ও হৈবতপুর গ্রামের অনেকেই বাড়ি ঘর রেখে পালিয়ে গেছে।
চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাস্টার মিজানুর রহমান উভয় গ্রামবাসীকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে কেউ সাধারণ মানুষের উপর যেনো অন্যায়ভাবে হামলা না করে সেই জন্য তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সজাগ থাকারও অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, আবদুলপুরে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাটের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ইতোমধ্যে লুট হওয়া ১১টি ছাগল ও ৮টি গরু উদ্ধার করে সেগুলো মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে, বিএনপি, যুবদলের নেতাকর্মী জখমের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে হৈবতপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সহসভাপতি হুমায়ুন কবীর রাজু বাদী হয়ে ইউপি মেম্বর আনিসুর রহমানসহ ২০জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। এ মামলায় বুলবুলি ও নজরুল ইসলাম নামে দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে, আটক দুইজন দাবি করেছেন তারা বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ঘটনার সাথে তাদের সম্পৃক্ততা নেই।
এ বিষয়ে কোতয়ালি থানার ওসি কাজী বাবুল জানান, মঙ্গলবার মারামারির ঘটনায় ২০ জনের নামে মামলা হয়েছে। দুইজন আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় মামলা কিংবা কেউ আটক হয়নি। যৌথবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।