বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর চাঁচড়া এলাকার রিজিয়া বেগম (৬০) স্বামী নেই। উপার্জনক্ষম তিন ছেলে থাকলেও বেঁচে থাকার এখন একমাত্র অবলম্বন এক মেয়ে। মেয়েও আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। তারপরেও মেয়ের বাড়িতে রয়েছেন আশ্রয়ে। বয়সের ভারে রিজিয়ার শরীরে বেঁধেছে নানা রোগ। এরমধ্যে চোখেও দেখেন কম। অর্থের অভাবে নিতে পারেন না চোখের চিকিৎসা। এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার চাঁচড়ায় বসে ফ্রি চক্ষু ক্যাম্প। সেখানে নিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসকের চিকিৎসা। রিজিয়া বেগম বলেন, ‘স্বামী নেই আড়াই বছর। সন্তানেরা দেখে না, এক মেয়ে আছে সে দেখে আমারে। রোগ বালাইয়ের শেষ নেই। এর মধ্যে চোখে ব্যাথা, কম দেখি ও যন্ত্রনা করে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারি না। আজ ফ্রি চক্ষু ক্যাম্পে ডাক্তার দেখিয়েছি, তারা চোখ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ড্রপ ওষুধ দিয়েছে। কয়েকদিন পর ছানি পড়া চোখ অপারেশন করবে।’ শুধু রিজিয়া বেগম নয়; এদিন যশোর শহরের শতাধিক হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষ চক্ষু রোগের চিকিৎসা পেয়েছে। সাথে পেয়েছেন ওষুধও।
শুক্রবার দিনব্যাপী শহরের চাঁচড়াস্থ ইকো-একে ট্রেনিং সেন্টারে এই ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। যুক্তরাষ্টভিত্তিক সংস্থা ইকোর আয়োজনে বিনামূল্যে চোখের চিকিৎসা পেয়ে খুশি এসব হতদরিদ্র পরিবারেরা। দিনভর চিকিৎসা দিয়েছেন বাংলাদেশ চক্ষু বিজ্ঞাণ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক চিকিৎসক যশোরের স্বনামধন্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহমুদুর রহমান।
আয়োজকরা জানান, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সমান্বয়ে এখানে শতাধিক চক্ষু রোগীদের বিনামূল্যে সেবা ও ওষুধ দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে থেকে বাছাই করা ১০ জন রোগীকে পরবর্তীতে চোখের ছানি অপারেশন ও লেন্স স্থাপন করা হবে। এছাড়াও প্রাথমিক পর্বে রোগীদের বিনামূল্যে চক্ষু পরীক্ষা, পরামর্শপত্র, ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে।
সেবা পেয়ে খুশি চাঁচড়ার বেলতলা এলাকার রোকেয়া বেগমের। ৭০ বছর বয়সী নারীর স্বামী মারা গেছে তিন বছর আগে। এই নারী বলেন, ‘ছেলেরা দেখলেও তাদের অবস্থা দিন এনে দিন খাওয়ার মতো। ফলে আমার রোগ বালাইয়ে তেমন চিকিৎসার খরচ মেটাতে পারেন না। অনেকদিন ধরে চোখে যন্ত্রনা করে। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। তবে আজকের ক্যাম্পে ফ্রি চিকিৎসা দিয়েছে। ওষুধও দিয়েছে। দ্রুত উন্নতি হবে বলে জানিয়েছে চিকিৎসক।
এর আগে সকালে এই ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার বিভাগ যশোরের উপ পরিচালক ও যশোর পৌরসভার প্রশাসক মো: রফিকুল হাসান। এসময় তিনি বলেন, ‘নিঃসন্দেহ ইকোর এই চক্ষু ক্যাম্প মানবিক ও মহতি উদ্যোগ। অনেক হতদরিদ্র মানুষেরা অর্থের অভাবে সুচিকিৎসা পায় না। এই ধরণের ক্যাম্পে তারা তাদের চিকিৎসা মেটাতে পারছেন। অনেকেই নতুন করে দেখবেন। কারোও বা কমবে তাদের যন্ত্রনা। এই ধরণের উদ্যোগে এলাকায় আরোও বেশি বেশি ছড়িয়ে পড়া উচিত।
তিনি বলেন, সমাজে কেউ আলাদা নয়। যে যার জায়গা থেকে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য কাজ করলে সমাজে আর বৈষম্য থাকবে না। একটা সময় এই দেশ সমৃদ্ধ শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হবে। এই ধরণের আয়োজন করাতে সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান তিনি। একই সাথে ইকোর মানবিক ও সামাজিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার আহবান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাক্তার নাজমুস সাদিক রাসেল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা আরিফ নূর, যশোর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সামাজিক ব্যক্তিত্ব অ্যাডভোকেট হাজী আনিছুর রহমান মুকুল, ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মিলন, ইকোর প্রজেক্ট অফিসার আবদুল কাদের, প্রকৌশলী আশিফ চৌধুরী জুয়েল প্রমুখ। অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা ইকো জিএল ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেন। সেখানে থাকা এতিম অসহায় শিশু শিক্ষার্থীদের সাথে তারা শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
ইকোর প্রজেক্ট অফিসার আবদুল কাদের জানান, ইকোর অর্থায়নে সমাজে পিছিয়ে পড়া হতদরিদ্রদের সচেতন করতে এবং আর্থসামাজিকভাবে স্বচ্ছল করতে সংগঠনটি কাজ করছে। পাশাপাশি সমাজের হতদরিদ্র মানুষকে প্রতিষ্ঠা করা এবং তাদের কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে যশোরের চাঁচড়াস্থ ইকো ট্রেনিং সেন্টার কাজ করছে। একই সাথে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে ইকো জিএল ইনস্টিটিউট। এই প্রতিষ্ঠানে এতিম শিশু ও হতদরিদ্ররা বিনামূল্য থাকা-খাওয়াসহ লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি সংস্থাটি দেশের বিভিন্ন জেলায় ফ্রি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অধ্যায়নরত মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চতর শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের মতো কার্যক্রম করে আসছে।