কমছে না শীত ও ঘন কুয়াশা
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
টানা দুই দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকার পর রোববার সারাদিন সূর্যের দেখা মেলেনি যশোরে। দিনভর ছিল ঘন কুয়াশা ও মেঘলা আকাশ। সূর্য না ওঠায় শীতের তীব্রতা বেড়ে গিয়ে জনজীবনে চরম ভোগান্তি নেমে আসে।
যশোর বিমান বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এদিন যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সূর্যের দেখা না যাওয়াতে গত দুই দিনের চেয়ে এদিন শীত বেশি অনুভূত হয় প্রাণীকূলে।
এতে দিনমজুর, কৃষি শ্রমিকসহ খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। সকাল থেকেই জেলার আকাশ ছিল কুয়াশাচ্ছন্ন ও মেঘে ঢাকা। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ ও শ্রমজীবীরা।
বিশেষ করে ভোর থেকে কাজে বের হওয়া দিনমজুর, ভ্যানচালক ও শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন। এদিকে টানা কুয়াশা ও শীতের কারণে শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
বাঘারপাড়া উপজেলার দোহাকুলা গ্রামের মজিবুর রহমান বলেন, আমাদের এদিকে আলু লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। শীতের প্রকোপে সকালের দিকে মাঠে কাজ করতে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, গত দুই দিন ধরে প্রচণ্ড শীত।
তবে আজকে সারাদিন ধরে একবারও সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি। ফলে শীতটা আজ অনেক বেশি মনে হচ্ছে। একই গ্রামের নুরনবি বলেন, ‘শীতের সঙ্গে যে কুয়াশা পড়ছে কয়েকদিন ধরে। এতে বোরো ধানের বিজতলা নষ্ট হওয়ার উপক্রম।
বিজতলা নষ্ট হলে কিভাবে বোরো ধান রোপন করবো, সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। এদিকে দিনভর সূর্যের দেখা না মেলাতে বিভিন্ন স্থানে খড়কুটা জ্বালিয়ে নিজেদের গরম করতে দেখা গেছে ছিন্নমূলদের।
বাঘারপাড়া রায়পুর সড়কে কয়েকজন নছিমন চালককে বিকেলে সড়কের উপরে খড়কুটো জ্বালিয়ে নিজেরা গরম হওয়ার টেষ্টা করছিলেন। সড়কের পাশেই ছিলো তাদের নছিমনগুলো।
তারা এই প্রতিবেদককে জানান, তারা তিনটি নছিমনে চুকনগরে গিয়েছিলেন ধানের বিচালি নিয়ে। ফেরার পথে তাদের শরীর ঠাণ্ডায় জমে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায় উপায়ন্তর না পেয়ে সড়কের ধারে বিচালি ও কিছু শুকনা পাতা খড় দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে তাপ নেয়ার চেষ্টা করছেন।
এদিকে যশোরের মতো সারাদেশে জেঁকে বসেছে শীত। তবে দুঃসংবাহ হচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। এর সঙ্গে পড়বে ঘন কুয়াশা।
রোববার বেলা ১১টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাসে এসব কথা জানানো হয়েছে। পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, রোববার সকাল ৬টায় সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের নিকলীতে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় রাজধানী ঢাকায় ছিল ১৪ দশমিক ৩। বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে সকালে তাপমাত্রা ছিল রাজশাহী, রংপুর, বরিশালে ১৩; ময়মনসিংহে ১৩ দশমিক ৩, সিলেটে ১৪ দশমিক ৮, চট্টগ্রামে ১৬, খুলনায় ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোববার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রোববার অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও আবার দুপুর পর্যন্ত কুয়াশা থাকতে পারে।
ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। সারা দেশে আজ রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক জায়গায় শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া ঢাকায় পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার গতিতে বাতাস বয়ে যেতে পারে।
২৯ ডিসেম্বরও পরিস্থিতির পরিবর্তন তেমন হবে না উল্লেখ করে আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানায়, মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
তবে নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এদিন রাতে তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। পরদিন ৩১ ডিসেম্বর সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে দিনের বেলা তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
