বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর সদরের দায়তলায় ভৈরব নদের উপর অবৈধভাবে পুননির্মাণাধীন সেতুর পাদদেশে ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন যশোর এক সং
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের ভৈরব নদে নিয়ম লঙ্ঘন করে পাঁচ সেতুর নির্মাণকাজ অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে এই নির্মাণ বন্ধসহ তিন দফা দাবিতে নির্মাণাধীন সেতুর পাদদেশে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন কমিটি। রোববার দুপুরে যশোর সদরের দায়তলায় ভৈরব নদের উপর পুনর্নির্মাণাধীন সেতুর পাদদেশে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক আফসার আলীর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন- ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন যশোরের উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু। সংবাদ সম্মেলন থেকে অবিলম্বে ভৈরবের উপর এলজিইডি কর্তৃক নির্মাণাধীন ৪টি ব্রিজ (দায়তলা, ছাতিয়ানতলা, রাজারহাট, বসুন্দিয়া) ও সড়ক জনপথ কর্তৃক নজরুল ইসলাম কলেজের পাশে ব্রিজের কাজ বন্ধ করে বিআইডব্লিউটিএ’র ছাড়পত্র নিয়ে নৌ-চলাচল, নদী প্রবাহ এবং ব্রিজের উলম্ব ও প্রশস্থতা নিশ্চিত করা; নদী তট আইন লঙ্ঘনকারী ও প্রশ্রয়দাতা কর্তৃপক্ষের বিচার ও নদ খননে দুর্নীতির তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং উজানে নদী সংযোগ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন ও ফারাক্কার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমানে যে খরতাপের পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, নদী হত্যা তার অন্যতম কারণ। ভারত কর্তৃক ফারাক্কার পানি প্রত্যাহার, জিকে প্রজেক্টসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদীসমূহের পানি প্রবাহ ভয়ঙ্কর সংকটের মধ্যে ফেলেছে। আমরা তার ভুক্তভোগী। ভৈরব নদও এর থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। দীর্ঘ ৪০ বছর লাগাতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভৈরব নদ সংস্কার প্রকল্প গৃহিত হয়। এই দাবি আদায় করতে গিয়ে আমাদের রক্ত গিয়েছে, জেল-জুলুম-নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, নদী সংস্কারের লক্ষ্য ছিল নদ প্রবাহমান ও নৌ-চলাচলের উপযোগী করা। কিন্তু নদী খননে সে ব্যবস্থা না করে নদী গর্ভেই মাটি ফেলা হয়েছে। যাতে পানিতে আবার নদী ভরাট হয়ে যেতে পারে। নদী তট আইন মানা হয়নি। অবৈধ দখলদারদের সাথে যোগসাজছে তাদের রক্ষা করা হয়েছে। যশোর শহর অংশ তার সুস্পষ্ট প্রমাণ।
এছাড়া নৌ-চলাচল ও প্রশস্থতা নিশ্চিত করে নদীর উপর অবস্থিত সংকীর্ণ ৫৩টি ব্রিজ পুনর্নির্মাণ করার বিষয়টি যুক্ত রয়েছে। এক্ষেত্রে বিআইডব্লিউটিএ’র সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। এই সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করেছে এলজিইডি। বারবার বিআইডব্লিউটিএ আপত্তি করলেও তারা তা কর্ণপাত করেনি। শেষ পর্যন্ত তারা থানায় জিডি করেও তাদের (এলজিইডি) নিবৃত্ত করতে পারেনি। এমনকি তারা হাইকোর্টের নির্দেশনা পালন না করার ধৃষ্টতা দেখিয়ে দায়তলা, রাজারহাট, ছাতিয়ানতলা ও বসুন্দিয়ায় সংকীর্ণ ব্রিজ নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে, যশোর-ঝিনাইদহ রোডে সাতমাইলে নজরুল ইসলাম কলেজের পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বিআইডব্লিউটিএ’র ছাড়পত্র ছাড়াই ব্রিজ নির্মাণ করছে। ফলে নদী সংস্কারে সরকারের লক্ষ্য সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠান বানচাল করে চলেছে।
একইসাথে নদীর উজানে মাথাভাঙ্গা-ভৈরব সংযোগ প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। এটি বাস্তবায়নের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন চলছে। সেটি বাস্তবায়িত হলে ভৈরব নদ প্রবাহমান ও নৌ-চলাচলের প্রধান ধারা হিসেবে কাজ করবে। নীতিবর্হিভূত এ সকল ব্রিজ নির্মাণে সরকার ঘোষিত নীতিমালা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কার্যকর ব্যবস্থা নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড নদীর উপর এই অনিয়মের বিরুদ্ধে কোন ভূমিকা নিচ্ছে না। জেলা প্রশাসককে বারবার তাগিদ ও অনুরোধ করা স্বত্ত্বেও জেলা নদী রক্ষা কমিশনের সভাপতি ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে এই জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতায় ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, এ কারণে আমরা অবিলম্বে ওই তিনদফা বাস্তবায়নের দাবি তুলে ধরেছি। এই দাবিতে আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে ২৫ মে পর্যন্ত মাসব্যাপি নদী অববাহিকায় নওয়াপাড়া, বসুন্দিয়া, ছাতিয়ানতলা, রূপদিয়া, দায়তলা, রাজারহাট, যশোর, চুড়ামনকাঠি, চৌগাছা, তাহেরপুর, মহেশপুর, খালিশপুর, জীবননগর ও দর্শনায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও এলজিইডি কার্যালয়, যশোর অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। এরপরও দাবি মানা না হলে ২৬ মে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। নদী ধ্বংসের সকল কার্যকলাপ বন্ধ না হলে উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য কর্তৃপক্ষই দায়ী থাকবেন বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন যশোরের অন্যতম নেতা তসলিম-উর-রহমান, নাজিম উদ্দিন, মিজানুর রহমান (বসুন্দিয়া), নাসির উদ্দিন শেফার্ড, সুজন দত্ত লাল্টু, মাস্টার অনিল বিশ্বাস (ভবদহ আন্দোলনের নেতা), সুখদেব মজুমদার (নীমতলী), আসাদুজ্জামান পিল্টু, পলাশ বিশ্বাস প্রমুখ। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন অধ্যাপক আফসার আলী ও ইকবাল কবির জাহিদ।
এ প্রসঙ্গে এলজিইডি যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র নির্দেশনায় যেসব নদীর কথা উল্লেখ আছে, তার মধ্যে এই নদের কথা উল্লেখ নেই। এজন্য অনুমোদন নেয়া হয়নি। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ’র নিয়ম মেনেই এসব ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে।
বাদ সম্মেলন করেছে।
সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক আফসার আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন শেষে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বক্তব্য রাখেন- ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন যশোরের উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের অন্যতম নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন যশোরের অন্যতম নেতা তসলিম-উর-রহমান, নাজিমউদ্দিন, মিজানুর রহমান (বসুন্দিয়া), নাসির উদ্দিন শেফার্ড, সুজন দত্ত লাল্টু, মাস্টার অনিল বিশ্বাস (ভবদহ আন্দোলনের নেতা), সুখদেব মজুমদার (নীমতলী), আসাদুজ্জামান পিল্টু, পলাশ বিশ্বাস প্রমুখ।
আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে ২৫ মে পর্যন্ত মাসব্যাপি নদী অববাহিকায় নওয়াপাড়া, বসুন্দিয়া, ছাতিয়ানতলা, রূপদিয়া, দায়তলা, রাজারহাট, যশোর, চুড়ামনকাটি, চৌগাছা, তাহেরপুর, মহেশপুর, খালিশপুর, জীবননগর ও দর্শনায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও এলজিইডি কার্যালয় যশোরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
দাবি মানা না হলে ১৬ মে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। নদী ধ্বংসের সকল কার্যকলাপ বন্ধ না হলে উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য কর্তৃপক্ষই দায়ি থাকবেন বলেও জানান নেতৃবৃন্দ।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন, অধ্যাপক আফসার আলী ও ইকবাল কবির জাহিদ।