এস এম জালাল
যশোর সদর উপজেলার রামনগর নামেজ সরদার মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বিএনপির কয়েকশ’ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সমাগম। খোলা আকাশের নিচে মাদুর পেতে বসেছেন সবাই। অতিথি ও সামনের সারির সবাই একই কাতারে। নেই কোন ভেদাভেদ। ব্যতিক্রমী এই আয়োজন পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে রামনগর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলের। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে ইফতার করার সুযোগ পায়নি বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাই এবারের ইফতার আয়োজন তাদের কাছে ভিন্ন। শুধু রামনগর ইউনিয়ন নয়, যশোরের ৯৩টি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ড, পৌরসভা ও উপজেলা পর্যায়ে তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে ইফতার আয়োজন করছে বিএনপি। ইফতার আয়োজনে পিছিয়ে নেই জামায়াতে ইসলামীও। দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে কোন কর্মসূচি করতে না পারা দলটি এবারে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ত করে ইফতার আয়োজন করছে। দুই দলের এমন ইফতার আয়োজনে জমজমাট হয়েছে রাজনীতি।
বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর পাশাপাশি অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও ইফতার আয়োজন তৎপর রয়েছে। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠন ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের সাথে সম্পর্ক বাড়াতে ভূমিকা রাখবে ইফতার আয়োজন। এর মাধ্যমে জনসংযোগ বাড়ানো ও তৃণমূলকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনেও রয়েছে দলগুলোর।
বিএনপি নেতারা বলছেন, ইফতার ও দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে রাজনৈতিক কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি থাকে দলকে চাঙা করার নানা পরিকল্পনাও রয়েছে। সাথে সাথে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এবার রমজানে যশোর জেলা বিএনপির ১৬ টি ইউনিটের পক্ষে থেকে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হচ্ছে। যশোর জেলার আটটি থানা, আটটি পৌরসভা ও ৯৩টি ইউনিয়নের প্রতি ওয়ার্ডে ইফতার মাহফিলের আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে যশোর জেলা বিএনপি। দলের পক্ষ থেকে প্রতিদিন ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হচ্ছে। আগামী ২০ রমজারের মধ্যে সকল ইউনিটের ইফতার ও দোয়া মাহফিল সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে জেলা বিএনপি। এ সব আয়োজনে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন দলীয় নেতারা। জোরালো হচ্ছে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বন্ধন।
জেলা বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক অ্যাড. হাজী আনিছুর রহমান মুকুল বলেন, রমজানকে ঘিরে ইফতারের আয়োজন নতুন নয়। নির্বাচন আসন্ন, তাই রমজান মাসে ইফতার আয়োজনের মাধ্যমে জনসংযোগ বাড়ানো ও তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার রবিউল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করে ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপি ইফতার আয়োজন করছে। এতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সুসম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জেলা জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি অধ্যাপক গোলাম কুদ্দুস বলেন, সময়ের সাথে জনপ্রিয় হয়েছে ইফতার কেন্দ্রীক রাজনীতির। তবে বিগত ১৬ বছরে অনেক রাজনৈতিক দলই স্বস্তির সাথে ইফতার আয়োজন করতে পারেনি। এবার কর্তৃত্ববাদের রাহুমুক্ত হয়ে সব দলই নিজস্ব সামর্থ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ইফতার আয়োজন করছে। এতে দলের জনসংযোগ বাড়ানো ও তৃণমূলকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, এবার বিএনপি ব্যাপকভাবে ইফতার ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করছে। যশোর জেলার প্রতি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে খোলা মাঠে ইফতার ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এটা আমাদের সামাজিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যকে আরো সুদৃঢ় ও উন্নত করবে।