বাংলার ভোর প্রতিবেদক
গণহত্যা ও গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কর্মসূচির অংশ হিসেবে যশোরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টি মাথায় এ বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীদের সাথে যোগ দিয়েছেন অভিভাবকরাও। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে যশোর শহরতলীর পালবাড়ি মোড় থেকে মিছিলটি বের হয়। শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে দড়াটানাতে কর্মসূচি শেষ করে তারা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেলা বিএনপি। এদিকে, মিছিলের শেষের দিকে শহরের দড়াটানায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্যানা বিলবোর্ড ভাংচুর করেছে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে ঘুরে ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে যশোরে। বেলা ৩টা থেকে শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। কিন্তু বৃষ্টি উপেক্ষা করেই শহরের এক প্রান্তে পালবাড়ি মোড়ে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা প্রথমে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সারা দেশে নিহত শিক্ষার্থীদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে সম্মিলিত দোয়া ও মোনাজাত করেন। এছাড়া হিন্দু ধর্মের শিক্ষার্থীরা তাদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী প্রার্থনা করেন। এরপর দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে মিছিল বের হয়। মিছিলটি পুলিশ লাইন হয়ে বিমান অফিস মোড়ে অবস্থান নেয়। আধাঘণ্টা অবস্থানের পর গরীব শাহ্ সড়কের শহীদ মিনার এলাকায় এসে অবস্থান নেয় তারা। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানায় প্রবেশ করে এবং অবস্থান নেয়। মিছিলে যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের অভিভাবকরাও ছিলেন। মিছিলে তাদের হাতে বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন শোভা পাচ্ছিল। সেখানে ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দিব না। দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত। এই রক্তের বন্যায়/ভেসে যাবে অন্যায়। আমার ভাই মরলো কেন? ছাত্রদের বুকে গুলি কেন? এমন স্লোগান দিতে দেখা যায়। বৃষ্টির মধ্যে মিছিল চলাকালে আশে-পাশের স্থানীয়রা বাসা থেকে পলিথিন নিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের হাতে দিয়ে সহযোগিতা করতে দেখা যায়। পলিথিনগুলো দিয়ে শিক্ষার্থীরা বৃষ্টিতে কেউ তাদের মাথা এবং কেউ মোবাইল ফোন রক্ষা করার চেষ্টা করেন।মিছিলকে ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শুক্রবার সকাল থেকে যশোরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশের টহল ও কড়া নজরদারি থাকলেও তারা কোথাও বাধা দেয়নি। মিছিলটি দড়াটানাতে অবস্থানকালে বিক্ষুদ্ধ আন্দোলতরত শিক্ষার্থীরা দড়াটানাতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী নেতাকর্মীদের টাঙানো প্যানা বিলবোর্ড ভাংচুর করে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। এদিন দুপুর ২টায় যশোর শহরের মনিহার এলাকা থেকে মিছিলটি বের করা হয়। বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নেতৃত্বে মিছিলটি শহরের আরএন রোড, কোতোয়ালি থানার মোড়, রেলরোড প্রদক্ষিণ করে লালদীঘির পাড়স্থ দলীয় কার্যালয় গিয়ে শেষ হয়। এ মিছিল থেকেও সরকারের পদত্যাগ দাবি জানান নেতৃবৃন্দ। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তৃতায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেছেন, এক ব্যক্তি (প্রধানমন্ত্রী) দম্ভ জিদ এবং মানুষকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের কারণে আজ শত শত মানুষ জীবন দিয়েছে। সেই ব্যাক্তিকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। তার পদত্যাগই বর্তমান সমস্যার সমাধান সূত্র। অমিত আরও বলেন, আমরা সরকার বাহাদুরকে একটি বার্তা দিতে চাই, যতক্ষণ পর্যন্ত ছাত্রদের ৯ দফা দাবি আদায় না হচ্ছে এবং তাদের দাবি পূরণের পর নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে না যাচ্ছে ততদিন সচেতন এবং দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে ছাত্র সমাজের পাশে আছি থাকবো। আর যদি আমাদের একটি ভাইয়ের গায়ে ফুলের টোকা পড়ে আমরা যে কোন মূল্যে তার প্রতিশোধ নেব ইনশা আল্লাহ।