বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী ‘মধুমেলা’র জায়গা ও ইভেন্ট বরাদ্দের উন্মুক্ত নিলাম শুরুর আগে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থান নেয়ায় সহিংসতা হয়নি। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ৩৮ লাখ ১৩ হাজার ২০০ টাকা মূল্যে ৬টি ক্যাটাগরির নিলামের সবকয়টি পেয়েছেন সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকরাম হোসেন।
জানা গেছে, আগামী ২৫ জানুয়ারি মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০১তম জন্মবার্ষিকী। এ জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে ২৪ জানুয়ারি থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত সপ্তাহব্যাপি মধুমেলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর উপজেলা প্রশাসন উন্মক্ত নিলামের আয়োজন করে। এটি দীর্ঘ বছর কেশবপুর উপজেলায় অনুষ্ঠিত হয়। তবে এবার সহিংসতার আশঙ্কায় সিদ্ধান্ত হয় জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে উন্মুক্ত নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টায় উন্মুক্ত নিলামের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। নিলাম শুরু হওয়ার আগে উপজেলা বিএনপির দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হয় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে। এরপর ১২ টার দিকে দু’ গ্রুপেই নেতাকর্মীরা জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে প্রবেশ করে।
সেখানে নেতাকর্মীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে নিলামে অংশ নেয়া ব্যক্তিরা বাদে সকলকে বাইরে চলে যাওয়ার নির্দেশনা দেন কেশবপুরের উপজেলা ইউএনও। এরপরেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দ্বিতীয়তলায় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। সভাকক্ষের ভিতর ও বাইরে কেশবপুর পৌর বিএনপির নেতা আব্দুস সামাদ বিশ্বাস ও উপজেলা বিএনপি সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ অনুসারীদের মধ্যে কয়েক দফা হাতিহাতির ঘটনা ঘটে। পরে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সভাকক্ষের বাইরের কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ করে দিয়ে নেতাকর্মীদের বের করে দেন। পরে নেতাকর্মীরা জেলা প্রশাসক চত্বরে অবস্থান নিলে উপ্তত্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে নিলাম শুরু হয়ে শেষ হয় দেড়টার দিকে। উন্মুক্ত নিলামে ছয়টি ক্যাটাগরিতে ৩৮ লাখ ১৩ হাজার ২০০ টাকায় সার্কাস, যাদু প্রদর্শনী, মৃত্যুকূপ, শিশু বিনোদন, ফার্ণিচার ও পার্কিং গ্যারেজ বিক্রয় হয়। উন্মুক্ত ডাকে বিএনপির নেতাকর্মী ও বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি অংশ নিলেও সবকয়েকটি ক্যাটাগরি পেয়েছেন সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকরাম হোসেন। তিনি উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন স্টল বরাদ্দের উন্মুক্ত নিলাম পরিচালনা করেন। এ সময় যশোরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুজন সরকার উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে কেশবপুর পৌর বিএনপির নেতা আবদুস সামাদ বিশ্বাস ও সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকরাম হোসেনের মুঠোফোনে কয়েক দফা কল করা হলেও তিনি রিসিভ হয়নি।
কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাতাহাতির কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা আমার জানা নেই। আমি ঢাকায় আছি। কোন টেণ্ডার, ভাগভাটোয়ারিতে আমি অংশ নিই এমন কেউ বলতে পারবে না। কেউ যদি বিশৃঙ্খলা করে; ব্যক্তির দায় কখনো সংগঠন নিবে না।’
কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, কোন বিশৃঙ্খলা হয়েছে কিনা জানি না। অর্ধশতাধিক ব্যক্তি নিলাম অংশ নেন। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে সবকয়কটি নিলাম পেয়েছেন আকরাম হোসেন। প্রতিবছর কেশবপুরে নিলাম হলেও এবার পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হয়েছে।