বাংলার ভোর প্রতিবেদক
রাত একটা বেজে ৩৮ মিনিট। ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন চারিপাশ। একটি নীল রঙের মিনি পিক্যাপ থেকে ৭-৮ জন নামলেন। সবার গায়ে প্রায় একই রঙের শীতের পোশাক। সবার মুখেই মাস্ক। এর মধ্যে দুজনের হাতে বড় কাটার। সেই কাটার দিয়ে তারা সাঁটারের তালা কাটছেন। এর মধ্যে কিছু লোক ঘুরে ফিরে এদিক, সেদিক দেখছেন। তালা কাটা শেষ হলে সাঁটার তুলে দোকানে প্রবেশ করেন তিনজন। তারা দোকানের ভিতর থেকে বড় বড় টায়ার বের করে দিচ্ছেন; দাঁড়িয়ে থাকা অন্যরা দ্রুত ট্রাকে ভরছেন। ১৪ মিনিট ৫৫ সেকেন্ড পর দোকানের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছেন চোর চক্রের তিন সদস্য। পরে একজন সাঁটার লাগিয়ে একে একে দোকান ছাঁড়লেন চক্রের বাকি সদস্যরাও। আর এ সকল কাজের একটু দূরেই মোটর সাইকেলে পাহারা দিতেও দেখা গেছে দুজনকে। ২১ ডিসেম্বর রাতে যশোর শহরের শংকরপুর বাসটার্মিনাল এলাকার এস এস মটরসে এই দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চুরির এই দৃশ্য ধরা পড়ে। পরে এ ঘটনায় দোকানের ব্যবস্থাপক সাহেব আলী বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
তার ভাষ্য, ১৫ মিনিটে আনুমানিক ১০ জনের একটি সংঘবদ্ধ চোর সিন্ডিকেট দোকানের সামনে ট্রাক ভিড়িয়ে ১৮ লাখ টাকার টায়ার চুরি করেছে। এই ঘটনায় মামলার ১৫ দিন পার হলেও চোরচক্র আটক বা চুরি হওয়া পণ্য উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। দু:সাহসিক এ চুরির পর আতংকে আছেন আশপাশের ব্যবসায়ীরা। তবে, পুলিশ বলছে, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে চোর চক্রটি আটকের বিষয়ে পুলিশ কাজ করছে।
বাদী মামলায় এজাহারে উল্লেখ করেছেন, অজ্ঞাত চোর চক্র গত ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ২২ ডিসেম্বর সকাল ৯ টার মধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানে চুরি করে। এসএস মটরসের সার্টারের তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে মালামাল চুরি করেছে। ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ থেকে অপরাধীদের শনাক্ত করা সম্ভব। চুরি হওয়া মালামালের মধ্যে রয়েছে ৩৯ পিস নতুন বিভিন্ন কোম্পানীর টায়ার (সিয়েট, এ্যাপালো, এমআরএফ, উইয়িং পাওয়ার, এ্যাওলাস ইত্যাদি), তার ও সুতোর টায়ার। চুরি হওয়া মালের আনুমানিক মূল্য ১৮ লাখ টাকা।
সাহেব আলী বলেন, ‘বাসটার্মিনাল এলাকায় দীর্ঘদিন ব্যবসা পরিচালনা করছি। দোকানটিতে গত ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে বন্ধ করে বাড়িতে চলে যায়। পরের দিন জানতে পারি দোকানে চুরি হয়েছে। তিনি দোকানে এসে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জানতে পারেন ২১ ডিসেম্বর দিবাগত রাত দেড়টার পর একদল চোর সিন্ডিকেট দোকানের তালাভেঙে ভেতরে ঢুকে বিভিন্ন কোম্পানির তার ও সুতার টায়ার চুরি করে নিয়ে যায়। একটি চোর সিন্ডিকেট দোকানের সামনে ট্রাক ভিড়িয়ে ওই মালামাল ট্রাকে করে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরের দিন তিনি থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ প্রথমে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় থানায় মামলা রেকর্ড হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত চোরচক্র সনাক্ত বা মালামাল উদ্ধার হয়নি।
তিনি বলেন, ‘ধারদেনা করে কোম্পানির কাছ থেকে টায়ারগুলো নেওয়া। আবার অনেকের কাছে টায়ার বাবদ অগ্রীম টাকাও নেওয়া হয়েছে; কিন্তু এখন তাদের টায়ারও দিতে পারছি না আবার টাকাও ফেরত দিতে পারছি না। চুরি হওয়া সিয়েট, এ্যাপালো, এমআরএফ, উইয়িং পাওয়ার, এ্যাওলাস ব্যান্ডের দামি তার ও সুতোর টায়ার। যার আনুমানিক মূল্য ১৮ লাখ টাকা।’
এই বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার উপ পরিদর্শক (এস আই) দেবাশীষ জানান, ‘ঘটনার পরপরই পুলিশ সেখানে গিয়ে ঘটনা দেখে তদন্ত শুরু করে এবং আসামি আটকের জন্য তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কাউকে আটক বা চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে অভিযান অব্যহত রয়েছে।’
এদিকে, ঘটনার ১৫ দিন পার হলেও চুরি হওয়া পণ্য উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এই ঘটনার পর ওই এলাকায় আরো দুটি প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে। কয়েকটি দুঃসাহসিক চুরির ঘটনার পর আতংকে আছেন আশপাশের ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘রাতে পুলিশিং টহল জোরদার করা হয়েছে। চুরি বা অন্য কোন ঘটনা ঘটে থাকলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিছু কিছু ঘটনায় অভিযানে আসামি ও মালামালও উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলো পাওয়া যায়নি; সেগুলো নিয়েও তদন্ত চলছে।’