বাংলার ভোর প্রতিবেদক
মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে যশোরে শুক্রবার দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। সকাল রাত ৮টা পর্যন্ত ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে শহরের নিম্ন অঞ্চলে হাঁটু পানি জমে যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। বিশেষ করে গতকাল জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে পানি ডিঙ্গিয়ে মসজিদে প্রবেশ করেন মুসল্লিরা। তবে শহরে কিছুটা দুর্ভোগে পড়লেও ফসলের মাঠে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে। কৃষকরা বলছেন, চলতি মৌসুমে তীব্র তাপদাহে পুড়েছে মাঠঘাট। এখন প্রতিনিয়ত যে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে চলতি আমন মৌসুমে জমি প্রস্তুতে ব্যস্ত তারা। এই কাঙ্খিত বৃষ্টি আরো প্রয়োজন। এদিকে শক্তিশালী মৌসুমি বায়ুর কারণে বঙ্গোপসাগরে সঞ্চারণশীল মেঘমালা তৈরি হয়েছে। উপকূলজুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। যা যশোর খুলনাঞ্চলে টানা কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তর।
যশোর বিমানবাহিনী নিয়ন্ত্রণাধীন আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শুক্রবার সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হয় যশোরে। সকালে ও বেলা ৩টা থেকে শুরু হয় মুশলধারে বৃষ্টি। বিকালেও কয়েক দফা মুশলধারে বৃষ্টি হয়। এদিন রাতেও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। দিনভর বৃষ্টিতে জেলায় ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকড করা হয়েছে। এতে শহরের নিচু এলাকায় হাঁটু পানি জমে যায়।
শহর ঘুরে দেখা গেছে, শুক্রবারের বর্ষণে হাটু পানিতে তলিয়ে গেছে যশোর শহরের নিম্নাঞ্চল। বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। শহরের বেজপাড়া, টিবি ক্লিনিক পাড়া, স্টেডিয়ামপাড়া, শংকরপুর, মিশনপাড়া, উপশহর, চাঁচড়া, কারবালা, এমএম কলেজ এলাকা, নাজিরশংকরপুর, বকচর, আবরপুরসহ শহরের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। শংকরপুর, বেজপাড়া, খড়কি, কারবালা, স্টেডিয়ামপাড়ার অনেক বাড়ি পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকার ড্রেন ছাপিয়ে উপচেপড়া পানি সড়ক পার হয়ে ঘরের মধ্যেও ঢুকে পড়েছে। এতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। দিনভর বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ অর্থাৎ শ্রমজীবীরা। ফসলের মাঠে শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা বড় একটি অংশ বৃষ্টির কারণে নিয়মিত কাজ থেকে বঞ্চিতও হয়েছেন।অন্যদিকে ছুটির দিন হওয়াতে বাজার-ঘাটে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি কম থাকায় অলস সময় কাটাতে হচ্ছে ভ্যান-অটোরিকশা চালকদের।
আলাপচারিতায় সাধারণ মানুষ জানান, ভারী বৃষ্টি না হলেও গত কয়েকদিন ধরে দিনের বিভিন্ন সময়ে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। যশোর শহরের জিরো পয়েন্ট মোড়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইমরান জানান, টানা বৃষ্টির কারণে বৃহস্পতিবার সারাদিন যেমন ভোগান্তি হয়েছে, আজ শুক্রবারও তেমন ভোগান্তি হচ্ছে। তবে আজ বৃষ্টির সঙ্গে সড়ক পানিতে তলিয়ে থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ। সার্কিট হাউজের সামনে কথা হয় রিকসা চালক গোলাম রব্বানির সঙ্গে। তিনি বলেন, সারাদিন বৃষ্টি হচ্ছে। ছুটির দিন আবার আন্দোলন চলছে। কোন আয় রোজগার নেই। সকালে দেড় শ’ টাকার মতো হয়েছিলো। আর বিকালে ৫০ টাকাও হয়নি। পাঁচ সদস্যের সংসার কিভাবে চলবো!
এদিকে, কয়েকদিনের বৃষ্টিতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে ফসলের ক্ষেত। বিশেষ করে রোপা আমনের ক্ষেত। টানা কয়েক মাস তাপাদাহ কারণে ফসলের মাঠ চাষাবাদ শুরু করতে পারছিলেন না। এখন বৃষ্টিতে স্বস্তি দেখা গেছে কৃষকের মুখে। তারা রোপা আমনের ক্ষেতগুলো প্রস্তুত করা শুরু করেছেন। অনেকেই আগে পানি সেচ দিয়ে জমি প্রস্তুত করে চারা রোপন করেছিলেন। এখন বৃষ্টিতে সেই রোপনকৃত চারা সতেজ হয়েছে।