বাংলার ভোর প্রতিবেদক
দেশের প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলোর স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্ত করার দাবিতে যশোরে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দিয়েছেন শিক্ষকরা। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রেসক্লাব যশোরের সামনে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় সমন্বয় পরিষদ যশোর কমিটির আয়োজনে এই কর্মসূচি পালিত হয়। এতে যশোরের আট উপজেলাসহ ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইল থেকে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অভিভাবেকরা অংশ নেন।
মানববন্ধনে ‘দাবি মোদের একটাই প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এমপিও চাই, প্রতিবন্ধী অবহেলা নয়, নায্য অধিকার চাই, প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অধিকার চাই-সহ বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে বিভিন্ন স্লোগান দিতেও দেখা যায়।
মানববন্ধনে বক্তরা বলেন, ‘শিক্ষানীতির শতভাগ বাস্তবায়নের জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষাপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা অনিবার্য প্রয়োজন। কিন্তু প্রতিবন্ধীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়নি। তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে। এই দাবিতে তারা দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে আসছেন। কিন্তু বিগত সরকার নানা সময় তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এবার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে মানববন্ধনে জানানো হয়।’
মানববন্ধনে সংগঠনটির যশোরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমরা সারাদেশে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে বিগত ৮-১০ বছর ধরে প্রতিবন্ধী শিক্ষা, থেরাপি ও জীবন দক্ষতা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি।
বিশেষ বিদ্যালয়গুলো মাঠ পর্যায়ে নিরলস কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে শিক্ষা, থেরাপি ও জীবন দক্ষতা প্রশিক্ষণ চালিয়ে আসছে বিধায় প্রতিবন্ধীরা পুনর্বাসনসহ অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে চলেছে। কিন্তু প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলো স্বীকৃতি ও অনুমোদনের অভাবে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। তিনি বলেন যশোরে প্রায় ১২ হাজার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জীবনমান পরিবর্তন ও শিক্ষাদানে ১২ শ’ শিক্ষক কর্মচারি রয়েছে। জেলায় ৭৪টি বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীরা আজ মানবতার জীবনযাপন করছে। তিনি জানান, সারাদেশে প্রতিবন্ধীদের ১ হাজার ৭৭২টি অস্বীকৃত বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে প্রায় দুই লাখ নানা ধরনের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। এখানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার।
এমপিওভুক্ত না হওয়ায় এসব শিক্ষক-কর্মচারী আর্থিকভাবে খুবই দূরবস্থার মধ্য দিয়ে দিনযাপন করছেন। অনেকে দীর্ঘদিন ধরে বিনা বেতনে কাজ করছেন। তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
হুইল চেয়ারে করে মানববন্ধনে অংশ নেন আবু বক্কর। তিনি যশোরের শার্শার নাভারণ প্রতিবন্ধী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বলেন, ‘আমার দুটি পা নেই। আমি বুঝি প্রতিবন্ধীদের কষ্ট। তাই তাদের জন্য নিজের জমিতে ২০১৭ সালে গড়ে তুলি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০১৮ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সনদ পাই। আবেদন করার পর থেকে এখনো এমপিও হয়নি। তিনি বলেন, শত শত প্রতিবন্ধীদের শিক্ষিত করছি, তবে আমাদের কোন মূল্যায়ন করেনি সরকার।’
মানববন্ধনে বক্তব্য দিতে যেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শার্শার শহিদুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক। তিনি উপজেলার গোপিনাথপুর আব্দুল আওয়াল স্মৃতি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের অভিভাবক। কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধী সন্তানের বাপ হয়ে বুঝি কত কষ্ট আমাদের। গত সরকার আশ্বাস দিলেও, কাজ হয়নি। আমাদের সন্তানেরা বোঝা হয়ে থাকতে চায় না। সরকার তাদের স্বীকৃতি দিক।’
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির যশোরের সভাপতি রাজু আহমেদ, সহ সভাপতি আব্দুল সালাম, সহ সম্পাদক মুক্তারুজ্জামান, প্রচার সম্পাদক মমতাজ খাতুন। পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন অংশগ্রহণকারীরা। মিছিলটি দড়াটানা হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর তারা স্মারকলিপি প্রদান করেন।