বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর আড়াইশ’ শয্যা হাসপাতালের স্টোর থেকে ওষুধ সরিয়ে ফেলার সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ওষুধ চুরির অভিযোগে হাসপাতাল থেকে বদলির আদেশ পাওয়ার দিনই এই ওষুধ সরানোর ঘটনা ঘটে। সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, অফিস শেষ হওয়ার পর ৯ এপ্রিল বিকেল ৪টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন সময়ে স্টোর কিপার সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওষুধ চুরির অভিযোগ রয়েছে। গত মাসে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এর প্রেক্ষিতে যশোর-৩ (সদর) আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদ হাসপাতালের স্টোর কিপার সাইফুল ইসলামকে অন্যত্র বদলির জন্য সুপারিশ করেন। এরপর তাকে যশোর আড়াইশ’ শয্যা হাসপাতাল থেকে বদলি করা হয় মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু বদলির আদেশ পাওয়ার পর ঈদের আগে ৯ এপ্রিল ছুটি শুরুর আগে শেষ কার্যদিবসে বিকালে তিনি স্টোর থেকে ইজিবাইকে করে ওষুধ বাইরে নিয়ে যান বলে অভিযোগ। এ রকম একটি সিসিটিভির ফুটেজও রয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ৯ এপ্রিল বিকেল ৪টার পর অফিসের কার্যদিবস শেষ হলে সাইফুল ইসলাম একটি ইজিবাইক নিয়ে তার দফতরের সামনে রেখে সেখানে ওষুধ তুলছেন। পরে সেই ওষুধ তিনি নিয়ে যান যশোর ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের দিকে। যদিও এই ব্যাপারে কোন কথা বলতে রাজি হননি সাইফুল।
আর যশোর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেছেন, স্টোর কিপার সাইফুল তাকে (তত্ত্বাবধায়ক) বলেছেন, কিছু ওষুধ পরিবর্তন করার জন্য তিনি স্টোর থেকে বাইরে নিয়ে গিয়েছেন। তবে ওষুধ যদি সে পাচার করে, আর যদি তা প্রমাণিত হয়, তবে স্টোর কিপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, ২০১৮ সাল থেকে সাইফুল ইসলাম যশোর আড়াইশ’ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের স্টোর কিপার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় হাসপাতাল থেকে বাইরে ওষুধ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। গত ২৪ মার্চ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি উঠে আসে।
কমিটির সদস্য মঞ্জুন্নাহার নাজনীন সোনালী সাইফুল ইসলামের বিভিন্ন সময় হাসপাতাল থেকে ওষুধ সরিয়ে ফেলার অভিযোগ করেন। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর কমিটির সভাপতি যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ তাকে বদলির নির্দেশ প্রদান করেন। মঞ্জুন্নাহার নাজনীন সোনালী বলেন, হাসপাতাল থেকে ওষুধ সরিয়ে ফেলার অভিযোগ পেয়েছি। আগামী মাসে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বিষয়টি আমি আবার তুলে ধরব।
এরপর খুলনা বিভাগের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক গত ৯ এপ্রিল তাকে যশোর আড়াইশ’ শয্যা হাসপাতাল থেকে মণিরামপুর স্বাস্থ কমপ্লেক্সে বদলি করেন। বদলির খবর পেয়ে ওই দিনই বিকাল ৪ টার দিকে ইজিবাইক নিয়ে স্টোর কিপার সাইফুল অনেক ওষুধ হাসপাতাল সরিয়ে ফেলেন। এর আগে ৭ এপ্রিলও ওষুধ বাইরে নিয়ে যান সাইফুল।
এ ব্যাপারে সাইফুল ইসলামের বক্তব্য নিতে গেলে তিনি বক্তব্য দিতে অস্বীকার করে বলেন, আমার স্যারের সাথে কথা বলেন। এ ব্যাপারে আমি কোন বক্তব্য দেব না। যার ইজিবাইকে করে ওষুধ বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়, তার নাম মনির হোসেন। তিনি হাসপাতালের সিলিন্ডার বহন করেন। অর্থাৎ হাসপাতালে যত অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগে, তা আনা নেয়া করেন। তিনি বলেন, ৯ এপ্রিল সাইফুল ইসলাম তাকে মোবাইলে ডেকে নিয়ে আসে। বলে এই ওষুধগুলো ঠিকাদারের কাছে বদল করতে হবে। আমি ইজিবাইকে ওষুধ নিয়ে খাজুরা বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দিয়ে আসি।
সাইফুল ইসলামের বদলির কারণে এখন হাসপাতালের স্টোরের ওষুধ বুঝে নিচ্ছেন ফার্মাসিস্ট রতন কুমার সরকার। তিনি বলেন, আমি এখনও সব ওষুধ বুঝে পাইনি। কিছু ওষুধের গড়মিল পাচ্ছি। হিসাব সম্পন্ন হওয়ার পর বলতে পারব কত ওষুধ হাসপাতাল থেকে সরানো হয়েছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, সংসদ সদস্যের সুপারিশের ভিত্তিতে তাকে বদলি করা হয়েছে। সাইফুল ইসলামের কাছ থেকে ওষুধ বুঝে নেয়ার কাজ চলছে। তিনি যদি কোন ওষুধ বাইরে নিয়ে যান, তার প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।