আরশি গাইন
যশোর ইনস্টিটিউট-একটি শতবর্ষীয় ঐতিহ্য, যা যশোরের সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং নাগরিক চেতনার এক অমূল্য প্রতীক। কিন্তু এই প্রতীকটি দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিলতা, রাজনৈতিক প্রভাব এবং অদূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে হারাতে বসেছিল তার গৌরব। সেই স্থবিরতা ভেঙে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয় ২০২০ সালে। যখন ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর নেতৃত্বে গঠিত পরিষদ ইনস্টিটিউটের যে রূপান্তর ঘটিয়েছে, তা নিছক ‘উন্নয়ন’ শব্দে সীমাবদ্ধ নয়-এটি এক সাংস্কৃতিক ও নাগরিক পুনর্জাগরণ।
যশোরবাসীর বহুদিনের প্রত্যাশা ছিল টাউন হল ময়দানকে দখলমুক্ত করার। দীর্ঘ সময় ধরে এটি ছিল পুরোনো কাপড় ব্যবসায়ী ও ক্যানভাসারদের দখলে, যাদের পেছনে ছিল রাজনৈতিক ছত্রছায়া। সাহসী ও কার্যকর পদক্ষেপে ডা. লিটুর পরিষদ জায়গাটি পুনরুদ্ধার করে সাধারণ নাগরিকদের ব্যবহারের উপযোগী করে তোলেন। এটি ছিল এক যুগান্তকারী উদ্যোগ, যা পূর্ববর্তী কোনো পর্ষদ নিতে পারেনি।
পর্যায়ক্রমে দেখা যায়, ইনস্টিটিউটের পরিসর ও কার্যক্রমের প্রতিটি খাতে ছড়িয়ে পড়ে উন্নয়নের ছোঁয়া। জেলা পরিষদের মার্কেট সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের জটিলতা নিরসন করে নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে নির্মিত হয় সীমানা প্রাচীর, হাঁটার সুবিধার্থে তৈরি হয় ওয়াকওভার। সংস্কার করা হয় স্বাধীনতা মঞ্চ, যা এখন নিয়মিত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থল।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, বি. সরকার মেমোরিয়াল হল দখলমুক্ত করে সেখানে নাট্যচর্চার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে ঘূর্ণায়নমঞ্চ। বহু বছর ধরে এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার দখলে থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ জমিও পুনরুদ্ধার করে প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেখানে বহুতল ভবনসহ জমির দখল বুঝে নেয়া হয়েছে।
এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির দাতা রায়বাহাদুর যদুনাথ মজুমদারের নামে প্রথমবারের মতো যে মেলা আয়োজন করা হয়, তা একদিকে যেমন অতীতকে স্মরণ করে, তেমনি ভবিষ্যতের প্রতি দায়বদ্ধতাও প্রকাশ করে। কবি আজীজুল হক কবিতা উৎসব, বরেণ্য নাগরিকদের সম্মাননা প্রদান ও নানাবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে ইনস্টিটিউট এখন এক জীবন্ত সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
এই রূপান্তর কেবল অবকাঠামোতে সীমাবদ্ধ নয়। এটি এক মানসিক পরিবর্তনের প্রতিফলন-যেখানে যশোর ইনস্টিটিউট শুধুই একটি প্রতিষ্ঠান নয়, বরং নাগরিক অংশগ্রহণ, ঐতিহ্য চর্চা এবং সাংস্কৃতিক উন্মেষের প্রধান বাহক হয়ে উঠেছে।
ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু এবং তাঁর পরিচালনা পর্ষদের এই সৃজনশীল ও দায়িত্বশীল নেতৃত্ব প্রমাণ করেছে যে আন্তরিকতা, সাহস এবং দূরদর্শিতা থাকলে যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে জাগিয়ে তোলা সম্ভব। যশোর ইনস্টিটিউটের এই উন্নয়নযাত্রা নিঃসন্দেহে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।