# সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ভোটের লড়াই
# সাধারণ সম্পাদক পদে খোকন একক প্রার্থী
এস এম জালাল
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের মৃত্যুর পর ‘অভিভাবক’ হিসেবে যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্ব নেন তাঁর সহধর্মিনী অধ্যাপক নার্গিস বেগম। তাকে ঘিরেই আন্দোলন সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ ছিল বিএনপি। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য জেলা বিএনপির সম্মেলনে তিনিই হচ্ছেন একক সভাপতি প্রার্থী। এমন কথা মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু বিকেলের পর সন্ধ্যা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভাসতে থাকে ভিন্ন কথা। রাতে তার অনুসারীরা নিশ্চিত হন, আসন্ন কাউন্সিলে প্রার্থী হচ্ছেন না অধ্যাপক নার্গিস বেগম। নিজের সিদ্ধান্ত নাকি হাইকমাণ্ডের সিগন্যালে তিনি প্রার্থী না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন, সেটি পরিস্কার নয়। তবে বুধবার দুপুরে তার ছেলে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত তাঁর নিজের ফেসবুকে পোস্ট দেন। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বার্তা দেন, অধ্যাপক নার্গিস বেগম প্রার্থী হচ্ছেন না। এদিকে, অধ্যাপক নার্গিস বেগম প্রার্থী না হওয়ায় ঘোষণার সাথে সাথেই বদলে যায় আসন্ন কাউন্সিলের সমীকরণ। সভাপতি পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তিন প্রার্থী। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে লড়বেন চার প্রার্থী। কাউন্সিল ঘিরে জেলা বিএনপির রাজনীতির ‘ঘুমন্ত গ্রুপিং’ চাঙ্গা হয়েছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। জেলার রাজনীতির ভারসাম্য বজায় রাখার কৌশল হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত হতে পারে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
যশোর জেলা বিএনপির কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের আহ্বায়ক মো. ইসহক জানান, বুধবার ছিল মনোনয়ন জমা ও প্রত্যাহারের দিন। সভপতি পদে ৩ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে একজন ও সাংগঠনিক সম্পাদকের তিনটি পদে ৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সভাপতি প্রার্থীরা হলেন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সদস্য মিজানুর রহমান খান ও সাবেক মেয়র মারুফুল ইসলাম। সাধারণ সম্পাদক পদে একক প্রার্থী বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সাবেক ছাত্রনেতা ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রবিউল ইসলাম, নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী আজম ও শহিদুল বারী রবু। ২২ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মুন্সী মেহেরুল্লাহ ময়দান আলমগীর সিদ্দিকী হল ভোট গ্রহণ হবে। ১৬ টি সংগঠনিক ইউনিটের এক হাজার ৬১৬ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
এদিকে, শেষ মুহূর্তে অধ্যাপক নার্গিস বেগম সভাপতি প্রার্থী না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় তার অনুসারীরা বাড়ি ও দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেন। এ সময় তারা সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানান। নেতাকর্মীদের আবেগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন তার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নতুন নেতৃত্বের হাতে সাংগঠনিক দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার অভিপ্রায়ে যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম কাউন্সিলে প্রার্থী হননি। তিনি তার এই সিদ্ধান্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মঙ্গলবার জানিয়েছেন। তার পরপরই তিনি তার জেলা বিএনপির যশোরস্থ নেতৃবৃন্দ ও অঙ্গ সহযোগী দায়িত্বশীলদের অবহিত করেন। নেতাকর্মী, সমর্থক ও শোভাকাক্সক্ষীদের আবেগকে হৃদয়ে ধারণ করে তিনি বলেন, পদ ছাড়লেও বিএনপির একজন কর্মী হিসেবে আমৃত্যু দলের জন্য কাজ করে যাবেন।’
অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, মিজানুর রহমান খান ও মারুফুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু অধ্যাপক নার্গিস বেগম কাউন্সিলে প্রার্থী না হওয়ায় তারা সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন। পাল্টে গেছে ভোটের সমীকরণ। শেষ পর্যন্ত তরিকুল পরিবারের আশির্বাদ কে পাবেন, তার উপর নির্ভর করছে বিজয়ের হাসি, এমনটাই মনে করেছেন দলের নেতাকর্মীরা।
নেতাকর্মীরা বলছেন, এক সময় তরিকুল পরিবার বলয়ের বাইরের রাজনীতিতে সুপ্ত গ্রুপিং ছিল। বিগত সরকারের আমলে হামলা, মামলা নির্যাতনের শিকার হওয়ায় সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিল একই ছাতার নিচে। তরিকুল ইসলামের অনুপস্থিতিতে অধ্যাপক নার্গিস বেগম ও অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে ঘিরে ঐক্যবদ্ধ ছিল বিএনপি। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল দানা বাঁধতে শুরু করে। কয়েকটি উপজেলায় কমিটি গঠন নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। দখল, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘাতের মত পাল্টাপাল্টি অভিযোগ যায় কেন্দ্রে। আবারও ঘুমন্ত গ্রুপিং জেগে ওঠে। শুরু হয় নেতৃত্ব পরিবর্তনের লবিংও। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে জেলার রাজনীতিতে ‘ভারসাম্য’ বজায় রাখতে হাইকমাণ্ড নেতৃত্বের পরিবর্তন আনতে চাইছে কি না, এমন প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত কি হয়, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
সভাপতি প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সাবেরুল হক সাবু জানান, আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সভাপতি প্রার্থী হয়েছি। বিগত দিনে অনেক হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। ফলে ভোটাররা অবশ্যই মূল্যায়ন করবেন।
সভাপতি প্রার্থী মিজানুর রহমান খান বলেন, সভাপতি পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছি। ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হবে। আশা করি দলের নেতাকর্মীরা আমাকে মূল্যায়ন করবেন। আমি সকলের কাছে দোয়া চাই।’
আরেক সভাপতি প্রার্থী মারুফুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। নানা চাপের মধ্যেও আমরা দলকে শক্তিশালী করার কাজ চালিয়েছি। ফলে ভোটাররা অবশ্যই মূল্যায়ন করবেন।’
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন জানান, বর্তমান আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমকে সভাপতি হিসেবে দলের সবাই চেয়েছিলেন। বিগত সময়ে তিনি শত বাঁধা পেরিয়ে দলকে আঁকড়ে রেখেছিলেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণের ১০ বছর পর ২০১৮ সালের ২০ মে যশোর জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়।