বাংলার ভোর প্রতিবেদক
শহরের পূর্ববারান্দিপাড়া থেকে দুই কিলোমিটার পিচের একটি সড়কটি মণিহার ঢাকা রোডের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। যশোর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের এই সড়কটি দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় বেহাল। কোথাও খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও বুঝার উপায় নেই এটি পিচের রাস্তা।
অন্যদিকে, রাস্তার পাশে থাকা ড্রেনের ঢাকনা না থাকায় ঘটছে দুর্ঘটনা। বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই এই রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। দূর থেকে দেখলে বোঝার উপায় থাকে না এটি রাস্তা নাকি খাল। ফলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি নিয়েই বাধ্য হয়ে যাতায়াত করছেন ওয়ার্ডটির বাসিন্দাদের। শুধু এই সড়কটি নয়; যশোর পৌর এলাকার প্রধান কয়েকটি সড়ক বাদে অন্যগুলো বেহাল হয়েছে আছে। এর মধ্যে অন্তত শতাধিক সড়কের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। এ অবস্থায় সড়কগুলো সংস্কারের দাবি পৌরবাসীর। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, বেশ কয়েকটি সড়ক সংস্কারের টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে এবং বাকীগুলো পর্যায়ক্রমে করা হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যশোর শহরের আনসার ক্যাম্প সড়কটিতে যত দূর দেখা যায় সড়কের উপরে পিচের কোন চিহ্ন নেই। শুকনা মৌসুমে ধুলা হলে। আর বর্ষা মৌসুমে পানি কাদায় ভোগান্তি হয় দ্বিগুণ। ১৯৯০ সালের পর আর উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি শংকরপুর ইসহাক সড়ক থেকে জমাদ্দারপাড়া পর্যন্ত। ইট-পাথর সরে রাস্তার বিভিন্ন অংশ খানাখন্দে ভরে গেছে। এ পথ পাড়ি দিতে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে রাখা দুস্কর হয়ে উঠেছে চালকদের জন্য। শহরের অন্যতম ব্যস্ততম সড়ক পৌরসভার খড়কি এমএম কলেজ সড়কের পিচের আস্তরণ উঠে সৃষ্ট গর্তে ময়লা পানি জমে আছে। ড্রেনের অবস্থা বেহার। সম্প্রতি সড়কটি সংস্কারের আন্দোলন করে এম এম কলেজের শিক্ষার্থীরা। ফলে ড্রেন ও সড়কটি সংস্কার কাজটি শুরু করেছে। শহরে চালকদের অভিযোগ, রাস্তার অধিকাংশ জায়গা ভাঙা হওয়ায় প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে। গাড়ির যন্ত্রাংশ দ্রুত নষ্ট হচ্ছে।
আনসার-ভিডিপি ক্যাম্প (কার্যালয়), যশোর কলেজ ও যশোর মেডিকেল কলেজে যাতায়াতের জন্য এই সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ। মাত্র পৌনে এক কিলোমিটার দীর্ঘ চোপদারপাড়া সড়কে পয়োনিষ্কাশনের জন্যও নালার ভালো ব্যবস্থা নেই। দুই যুগের মধ্যে এই সড়ক সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। একই অবস্থা, পীরবাড়ি সড়ক, নীলগঞ্জ তাঁতিপাড়াসহ অন্তত ১০০টি সড়ক-উপসড়কের।
স্থানীয়রা বলছেন, বছর বছর দুর্ভোগে থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের দিকে ফিরেও তাকায় না। পৌরবাসী বলছে, বহুদিন থেকে এ রাস্তাগুলো এতো বাজে অবস্থা যে, চলাচল করা এখন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চারপাশে ময়লা জমে এমন অবস্থা হয়েছে, বৃষ্টি হলে রাস্তায় হাঁটুপানি হয়ে যায়। আমরা বহুবার পৌরসভায় আবেদন করেও কোনো সমাধান পাইনি।
বারান্দিপাড়া মেঠো পুকুরপাড়া বাসিন্দা শেখ রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, দুই দিন আগে আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে যায়। রাতে হাসপাতালে নেয়ার জন্য রিকশাওলাকে বললে ৫মিনিটের পথে জন্য ২শ’ টাকা ভাড়া চায়। তিনি আরও বলেন, ভাঙাচোড়া রাস্তায় বেশি টাকা না দিতে পারলে অনেক সময় রোগীদের কাঁধে বা কোলে করে মেইন রোডে নিয়ে যেতে হয়। যার কারণে সব চেয়ে বেশি কষ্ট ভোগ করতে হয় প্রসূতি মায়েদের নিয়ে।
যশোর পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, পৌর এলাকায় মোট ২৮৭ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে বিটুমিনের কার্পেটিং ১৭৬, সিমেন্ট-বালুর ঢালাই ৩০, ইট বিছানো ৫১ ও মাটির কাঁচা সড়ক রয়েছে ৩০ কিলোমিটার। এ ছাড়া সড়কের সঙ্গে পয়োনিষ্কাশন নালা রয়েছে মোট ২৫২ কিলোমিটার। এর মধ্যে আরসিসি (রড, ইট ও সিমেন্ট) ৫৫ ও ইটের তৈরি ৬১ কিলোমিটার নালা রয়েছে। নাগরিক অধিকার আন্দোলন যশোরের সমন্বয়কারী মাসুদুজ্জামান মিঠু বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে পৌর রাস্তাগুলোর সংস্কার না হওয়া আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের। অনিয়ম আর দুর্নীতির যাঁতাকলে কোনো কাজই ঠিক সময়ে হচ্ছে না। এতে ভোগান্তি আমাদের পিছু ছাড়ছে না।
যশোর পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মোরাদ আলী জানান, ‘এমএম কলেজের সামনের সড়ক ও নালার সংস্কারের জন্য সাড়ে ৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া পৌরসভার অনেক সড়কগুলো বেহাল রয়েছে; সেগুলো মন্ত্রনালয়ে প্রকল্পের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প পেলে ওই সড়কগুলো কাজ শুরু করা হবে। এছাড়া এবার জলাবন্ধতার নিরসনের জন্য আগে থেকে কাজ শুরু করেছে পৌরসভা। সেখানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে; আমাদের টিম সেখানে তাৎক্ষণিক কাজ করছে। পৌরবাসীকে সেবা দিতে আমরা কাজ অব্যহত রয়েছে।’