♦ হয়রানি ও প্রতারণার অভিযোগ

♦ আইন লংঘন করে বিজ্ঞাপন প্রচার

বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর সিটি ক্যাবল (প্রা.) লিমিটেডের গ্রাহক শহরের লালদিঘির পাড়ের বাসিন্দা জয়ন্ত বসু। ক্যাবল সংযোগ বাবদ মাসে ২৫০ টাকা বিল গুণতে হয়। সম্প্রতি তাকে টেলিভিশন চালাতে হলে সেট-টপ বক্স কিনতে বাধ্য করা হয়। এক হাজার ৬৫০টাকার বিনিময়ে তাকে গামা কোম্পানির নিম্নমানের সেট-টপ বক্স সরবরাহ করে সিটি ক্যাবলের কর্মীরা। সপ্তাহ দুয়েক আগে টেলিভিশন দেখার সময় হঠাৎ সেট-টপ বক্সটি বিস্ফোরণ ঘটে। অল্পের জন্য বিস্ফোরণে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পান পরিবারের সদস্যরা। বিষয়টি সিটি ক্যাবল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলে উল্টো দুর্ব্যবহার করে তারা।

শুধু জয়ন্ত বসু নয়, তার মত অসংখ্য গ্রাহককে নিম্নমানের সেট-টপ বক্স ক্রয়ে বাধ্য করা হয়েছে। একই সাথে নির্ধারিত মূল্যে চ্যানেলের সংখ্যা কম দেয়া, সেবাদানের ক্ষেত্রে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও আইন লংঘন করে অবৈধভাবে সিটি ক্যাবলে বিজ্ঞান প্রচার করার অভিযোগও রয়েছে।

দীর্ঘ বছর ধরে যশোর শহরে একচেটিয়া ব্যবসা করে আসা যশোর সিটি ক্যাবল (প্রা.) লিমিটেড সম্প্রতি গ্রাহক হয়রানি ও নিম্নমানের সেবা দিয়ে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। জেলার সাড়ে তিন লক্ষাধিক গ্রাহককে পরিষেবা দেয়া এই ক্যাবল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠানটির সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও, গ্রাহক হয়রানির দিক থেকে যেন কয়েক ধাপ এগিয়ে।

শহরের বেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা জগন্নাথ কুমার জানান, মাসিক ২৫০ টাকা খরচে তাকে কেবল ২০০ টি চ্যানেল দেখতে দেয়া হয়। অথচ মাসিক এই খরচে গ্রাহককে ২৫০টি চ্যানেল দেখার কথা বলা হয়েছিল। এছাড়া, লাইনে সমস্যা দেখা দিলে সিটি ক্যাবলের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা গ্রাহকের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

শহরের শংকরপুর এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘একটি অসাধু সিণ্ডিকেটের কব্জায় রয়েছে সিটি ক্যাবল। গ্রাহকের কাছে তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। জিম্মি করে ব্যবসা করছে। তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে উল্টো নানাভাবে হুমকি ধামকি দেয়া হয়।’

এদিকে, গ্রাহক হয়রানির পাশাপাশি সিটি ক্যাবল (প্রা.) লিমিটেড আইন লঙ্ঘনের মতো গুরুতর কাজ করছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব দুটি চ্যানেল রয়েছে। এই চ্যানেলগুলোতে হরহামেশা বিভিন্ন প্রকার বিজ্ঞাপন চালানো হচ্ছে।

যার মধ্যে রয়েছে সেট-টপ বক্স, ব্রডব্যান্ড পরিষেবা, জেলা পুলিশের অনলাইন জিডি উদ্বোধন সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন। শুধু তাই নয়, অভিযোগ আছে এই সব চ্যানেলে অশ্লীল অনুষ্ঠানাদিও পরিবেশন করা হয়। অথচ কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক কার্যক্রম পরিচালনা এবং আনুষাঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান কল্পে প্রণীত ২০০৬ সালে জারিকৃত ৩৮ নং আইন অনুসারে উপধারায় বলা হয়েছে, গ্রাহক তার প্রয়োজন অনুসারে চ্যানেল ক্রয় করতে পারবে। কোনো ফিড অপারেটর জোরপূর্বক নিতে বাধ্য করতে পারবে না। এছাড়াও গ্রাহক তার অভিযোগ জানাতে পারবে। অভিযোগের ৭ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হবে।

গ্রাহক হয়রানি বা এই নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হলে লাইসেন্স বাতিল বা সাময়িক স্থগিত করা যাবে। অশালিন কোনো অনুষ্ঠান সম্প্রচার করলে আইন প্রয়োগকারি সংস্থা ব্যবস্থা নিতে পারবে।

জেলা তথ্য অফিসের সূত্র মতে, ক্যাবল নেটওয়ার্ক ভিত্তিক এই চ্যানেলটির কোনো নিবন্ধন নেই। এছাড়া, গ্রাহকদের নির্দিষ্ট কোম্পানির সেট-টপ বক্স কিনতে বাধ্য করা হলেও, সেই বক্সগুলো আইএসও বা বিএসটিআই অনুমোদিত কিনা সে বিষয়েও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জেলার সিনিয়র তথ্য অফিসার রেজাউল ইসলাম বলেন, ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক নিজস্ব চ্যানেল চালাতে পারবে না। এমনকি কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন সম্প্রচার করাও দণ্ডনীয় অপরাধ।

তিনি আরও জানান, ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক আইন ২০০৬ অনুসারে এই ধরনের অপরাধ করলে সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা ও ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার আইন রয়েছে।

জেলা পুলিশের অনলাইন জিডি উদ্বোধনের বিজ্ঞাপন যশোর সিটি ক্যাবল প্রা. লি. কে সম্প্রচারের জন্য দেয়া হয়েছে কি না এ বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশারের সাথে কথা হলে তিনি বিজ্ঞাপনটি তাকে পাঠানোর কথা বলেন। পরর্বতীতে বিজ্ঞাপন পাঠানো হলেও তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, অভিযোগকারিদের আমাদের কাছে পাঠান আমরা বিষয়টি দেখব।
সিটি ক্যাবলের পরিচালনা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আফজালুল করিম রানু বলেন, এখন কোনো বিজ্ঞাপন চালাচ্ছি না। সেট-টপ বক্সের বিষয়টি আমরা আবগত না।

                                                                                                        চলবে….

Share.
Leave A Reply

Home
News
Notification
Search
Exit mobile version