বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় একটি দুর্নীতিবাজ সিণ্ডিকেট। যারা সাধারণ মানুষের হয়রানি ও অবৈধ অর্থ আদায়ের মাধ্যমে প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, দলিল সংরক্ষণ থেকে জমি রেজিস্ট্রেশন পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এ চক্রটি সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবাধে কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন করে চলেছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল বালাম বই যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয় না। বরং মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে নথি গায়েব ও পরিবর্তন করা হয়। সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, জমির শ্রেণীবিভাগ পরিবর্তনের নামে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় এবং রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের হয়রানি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অফিস আওয়ারের বাইরে বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশ ও সরকারি নথি চুরি-ধ্বংস করার মতো গুরুতর অপরাধও এখানে নিয়মিত সংঘটিত হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই দুর্নীতির নেটওয়ার্কের নেতৃত্বে রয়েছেন সাব-রেজিস্ট্রার আমিনা বেগম, যিনি তার কেরানি ভৈরব চক্রবর্তীর মাধ্যমে পুরো অপকর্ম নিয়ন্ত্রণ করেন। এ সিন্ডিকেটের অন্যান্য সক্রিয় সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন দলিল লেখক শাহিন আলম, শেখ নেসার আহমেদ, শরিফুল ইসলাম চুন্নু, সোহাগ হোসেন, মাহাবুর রহমান, মিরাজ হোসেন, শামসুজ্জামান শাহীন (যিনি নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন) খায়রুজ্জামান সাগরসহ একাধিক স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি।
জানা গেছে, কেরানি ভৈরব চক্রবর্তী ঘুষের স্লিপ তৈরি করেন। যা উমেদার শাওন সংগ্রহ করেন। এছাড়া, মোহরার রমাপ্রসাদ দলিল বণ্টনের দায়িত্বে। পিয়ন আবু সাঈদ বালাম বই তিনতলা থেকে ওঠানো-নামানোর কাজে যুক্ত। অন্যদিকে, নকলনবিশ নুরুন্নবী, রাসেল ও আসমা খাতুন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নথি গায়েব ও সংশোধনের কাজে যুক্ত।
এ বিষয়ে কেরানি ভৈরবের একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। যেখানে তাকে বলতে শোনা যায় উর্ধতন কর্মকর্তার নির্দেশে এই সব অর্থ আদায় করা হয়। এই টাকার ভাগ কর্মচারিসহ কর্মকর্তারা পেয়ে থাকেন।
সাব-রেজিস্ট্রার আমিনা বেগমের অফিসে বক্তব্য নিতে গেলে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না।
জেলা রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আবু তালেব জানান, প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে নকলনবিশ আসমা খাতুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অফিসে অনিয়ম দুর্নীতির সাথে যারা জড়িত তাদের চিহ্নত করে বিচারের আওতায় আনা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে সাব-রেজিস্ট্রার আমিনা বেগম প্রতিদিন তার নিজ জেলা মাগুরা থেকে ব্যক্তিগত বিলাসবহুল গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ ২০-৫৭৪০) ব্যবহার করে যশোর অফিসে আসেন। যা তার বেতনের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
এছাড়া রেজিস্ট্রি অফিস চত্বরে একটি অবৈধ পার্কিং গ্যারেজ গড়ে তোলা হয়েছে। জানা গেছে, টেণ্ডার ছাড়া আওয়ামী ঘরানার দলিল লেখকরা এই গ্যারেজের টাকা নিয়ে থাকেন।