ঝিনাইদহ সংবাদদাতা
সোনা ফলানো মাটি খ্যাত ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৪নং হলিধানী ইউনিয়নের সোনারদাইড় মাঠ। এ উর্বর মাটিতে যা রোপণ করা হয় তারই সর্বোচ্চ ফলন পান কৃষক। তাইতো আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শীতকালীন সবজি বাঁধাকপির বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা। দিনমজুরদের সাথে ক্ষেত পরিচর্যা, রোগবালাই দমন, অধিক ফলন ও লাভের আশায় নাওয়া-খাওয়া ভুলে দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে বাঁধাকপি চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, হলিধানী ইউনিয়নের সোনারদাইড় মাঠে গ্রামের কৃষকরা বাঁধাকপি ক্ষেত নিড়ানি ও পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। লাভ বেশি হওয়ায় চাষে ঝুঁকছেন কৃষক।
সদর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় টপিকসান প্লাস ও অটোম কুইনসহ অন্যান্য জাতের বাঁধাকপি চাষ করছেন কৃষকরা। চাষিরা জানান, কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি, জমি চাষ, বিজ, সার, সেচ, শ্রমিক খরচসহ এবার প্রতি বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষে খরচ হচ্ছে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা এবং প্রতি বিঘায় ৩ থেকে ৩ হাজার ২০০ পিস চারা রোপণ করতে হয়। চারা রোপনের প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ দিনেই বাঁধাকপি বাজারজাত করা যায়। প্রতি পিস বাঁধাকপি ১৫ থেকে ৩০ টাকা, আর প্রতিমণ বাঁধাকপি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিক্রি করতেও ঝামেলা নেই চাষিদের। পাইকাররা জমি থেকেই এসব সবজি কিনে নিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন। এই সবজি অল্প সময়ে স্বল্প খরচেই চাষ করা সম্ভব। তাই কৃষকরা বাঁধাকপি চাষে ঝুঁকছেন।
সদর উপজেলার সোনারদাইড় গ্রামের সফল সবজি চাষি মুকুল হোসেন বলেন, ‘এবার এক বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের বাঁধাকপি চাষ করেছেন। তিনি বলেন, আগাম বাঁধাকপি চাষ লাভজনক শীতকালীন সবজি। বৈরি আবহাওয়ার কারণে এবার একটু দেরিতে চারা রোপণ করায় সময়মতো উত্তোলন করতে পারিনি। তবে অচিরেই বাজারে বাঁধাকপি তুলতে পারব। তিনি আরও জানান, এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে ছোট ছোট পিকআপে মাগুরা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করা হয়।
একই গ্রামের আলতাফ হোসেন বলেন, তিনি প্রতিবছর জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেন। এ বছরও বাঁধাকপির ফলন ভালো হবে বলে তিনি আশাবাদী। তিনি গত বছরের মতো এবারও ভালো লাভের আশা করছেন। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কীটনাশকের ডোজ দ্বিগুণেরও বেশি দিতে হচ্ছে বলে জানান।
কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, যে কোন ফসল আগাম চাষ হলে বাজারে চাহিদা যেমন বেশি থাকে তেমনি মুনাফা অনেক বেশি হয়। তাই অল্প সময়ে কম খরচে অধিক মুনাফা লাভের জন্য বাঁধাকপির জুড়ি নেই। তিনি বছরের বারো মাসই সবজি চাষ করেন। তিনি এবার ৪০ শতক জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছেন। তবে এবার বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় খরচের পরিমাণ বেড়েছে বলে জানান।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-এ-নবী জানান, বাঁধাকপি একটি উচ্চ ফলনশীল জাতের সবজি। কৃষকেরা আগাম চাষাবাদ করে ভালো দাম পাচ্ছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কারিগরি সহায়তাসহ নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আগামীতে এ সবজি উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরও বলেন, কীটনাশকের দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষকদের জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ক্ষতিকর পোকামাকড়দের নিয়ন্ত্রণ করতে তিনি ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারের পরামর্শ দেন।