বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রিয়মুখ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মুস্তাক হোসেন শিম্বা শিক্ষকতা জীবনের ছেদ টানলেন। শনিবার তিনি যশোর কলেজ-এর অধ্যক্ষ পদ থেকে অবসরে গেলেন। ১৯৯৩ সালে মনিরামপুর মহিলা কলেজে প্রভাষক হিসাবে তিনি যোগদান করেন। ২০০২ সালে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। একই বছর যশোর জেলার শ্রেষ্ঠ কলেজ শিক্ষক নির্বাচিত হন। ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে যশোর কলেজে অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করেন। মূলত তাঁর চৌকস নেতৃত্বের গুণেই যশোর কলেজ উন্নতির শিখরে পৌঁছায়। এ সময় কলেজটি তিনটি বিষয়ে অনার্স পর্যায়ে উন্নীতকরণ হয়।
কলেজের নিজস্ব শহীদ মিনার নির্মাণ, কলেজ গেট নির্মাণ, বিকাশের পৃষ্ঠপোষকতায় অত্যাধুনিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা, কম্পিউটার ল্যাব, কলেজের দুটি জমি ক্রয়, কলেজ সংযোগ সড়ক, সরকারি ও নিজস্ব তহবিলে একটি করে নতুন দুটি ভবন নির্মাণ, একইভাবে পুরাতন দুটি ভবন সম্প্রসারণ, অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, ছাত্র ও ছাত্রী কমনরুম নির্মাণ এবং কলেজের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেন।
রাজনৈতিক বৈরি পরিস্থিতিকে সুদক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে তিনি অনন্য নজির সৃষ্টি করেন। ২০১২ সালে কলেজের দুই দশক, ২০১৭ সালে রজত জয়ন্তী উদযাপন হয় সাড়ম্বরে। একই অনুষ্ঠান মঞ্চে তৎকালীন সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটো ও কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমকে উপস্থিত করে ২০১১ সালে অনার্স পর্যায়ের উদ্বোধন করা হয়। একইভাবে ২০১৭ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ ও অধ্যাপক নার্গিস বেগমের উপস্থিতিতে যশোর কলেজের রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠান সাড়ম্বরে উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। সকলকে সাথে নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নেবার এই প্রচেষ্টা সবমহলে আলোচিত ও প্রশংসিত হয়।
২০১০ উচ্চ মাধ্যমিকের ও ২০১৪ হতে অনার্স পর্যায়ের পরীক্ষা কেন্দ্র হিসাবে যশোর কলেজের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে যশোর কলেজে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৩শ’। অথচ একটা সময় শিক্ষার্থীর চেয়ে শিক্ষক বেশি বলে দুর্নাম ছিল। সেটি কাটিয়ে উঠে তাঁর সময়।
যশোর কলেজকে শক্তিশালী আর্থিক ভিত্তির প্রতিষ্ঠা করেন অধ্যক্ষ শিম্বা। শিক্ষক-কর্মচারীদের দুটি উৎসব ভাতা এবং নিয়মিত বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়। জাতীয় বিভিন্ন দিবস উদযাপন ছাড়াও শিক্ষক ও কর্মচারীদের উদ্বুদ্ধকরণের জন্য দেশ-বিদেশে ভ্রমণের আয়োজন করা হয়। তিনি একাধিক কলেজ স্মরণিকা প্রকাশ করেন।
যশোর শহরের গুরুদাস বাবু লেনে ১৯৬৫ সালে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে মুস্তাক হোসেন শিম্বার জন্ম। তার পিতা অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন ১৯৭০ সালে গণপরিষদ সদস্য ছিলেন। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদেরও তিনি নির্বাচিত এমপি ছিলেন। ১৯৭৪ সালে দুর্ভাগ্যজনকভাবে নিজ বাড়িতে আততায়ীর গুলিতে মুক্তিযুদ্ধের এই মহান সংগঠক নিহত হন। মুস্তাক হোসেন শিম্বা যশোর ইন্সটিটিউট প্রাইমারি পেরিয়ে সম্মিলনী ইন্সটিটিউশন থেকে ১৯৮১ সালে মাধ্যমিক, ১৯৮৩ সালে যশোর সিটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার্স করেন ১৯৮৮ সালে ।