বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামে পুকুরে পানিতে পাঁচ বছর বয়সী তাসনিয়ার মরদেহ পাওয়া যায়। পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্ত করতে রাজি ছিলেন না স্বজনরা। কিন্তু শিশুটির ঠোঁটে কাটা দাগ থাকায় ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ।
প্রায় দুই মাস পর ময়নাতদন্ত রিপোর্টে জানা যায়, পানিতে ডুবে নয় শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় অজ্ঞাত আসামিদের নামে মামলা করেন শিশুটির পিতা। এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত প্রতিবেশি এক কিশোরীর বিকৃত যৌনচারের শিকার হয় শিশুটি। তাকে হত্যা করে পুকুরের পানিতে ফেলে দেয় অভিযুক্তরা।
গ্রেফতারের পর রোববার তিনজনকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, বাঘারপাড়ার শ্রীরামপুর গ্রামের ইশিতা আক্তার রিতু ও তার বাবা তহিদুর রহমান, মা নিরু বেগম।
পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন জানান, ২০ জুলাই যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামে বাড়ির পাশে পুকুরে শিশু তাসনিয়া (৫) ভাসমান লাশ উদ্ধার হয়। পানিতে ডুবে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে মনে করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করতে চেয়েছিল স্বজনরা। কিন্তু শিশুটির ঠোঁটে ক্ষত দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। লাশ ময়নাতদন্ত করলে রিপোর্ট আসে শ^াসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
হত্যাকান্ডটি নিয়ে ছায়া তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআইয়ের তদন্তে হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে। শিশুটির প্রতিবেশি কিশোরী ইশিতা আক্তার রিতু পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত। ঘটনার দিন মোবাইল ফোনে অশ্লীল ভিডিও দেখে উত্তেজিত হয়ে ভিকটিম শিশুর সঙ্গে বিকৃত যৌনচার করে রিতু।
এখানেই খ্যান্ত হয়নি সে, ওই শিশুকে হত্যা করে মরদেহ লেপের ভেতরে পেচিয়ে রেখে দিয়েছিলেন নিজ ঘরে। একপর্যায় রাতের আধারে বাড়ির পাশের পুকুরে ওই শিশুর মরদেহ ফেলে দেয়া হয়। পরে সাজানো হয় পানিতে ডুবে মৃত্যুর নাটক। একপর্যায় ময়নাতদন্তের পর বেরিয়ে আসে আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে তাসনিয়াকে।
সেই সময় থানা পুলিশও রিতু ও তার পরিবারকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু তারা মুখ খোলেনি। ময়নাতদন্তে আরও উঠে আসে হত্যার আগে তাসনিয়াকে যৌননিপীড়ন করা হয়েছিলো। এ তথ্যে থানা পুলিশের তদন্ত ঘুরে যায় অন্যদিকে। তারা ধর্ষকের সন্ধানে মাঠে নামে। এঘটনায় নিয়মিত মামলা করেন তাসনিয়ার পিতা রজিবুল ইসলাম। অন্যদিকে, পিবিআই যশোরের সদস্যরা পড়ে থাকে রিতুকে নিয়েই। ঘটনার পরপরই তড়িঘড়ি করে রিতুর বিয়ে দেয়া ও তার একেক সময় একেক রকম তথ্য দেয়ায় সন্দেহ প্রকট হয়। ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে লোমহর্ষক ঘটনা।