এম আই মুকুল, জীবননগর
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে প্রকৃতিতে বইছে শীতের আগমনী বার্তা। ভোরের কুয়াশায় শিশির বিন্দু গ্রামীণ জনপদে জানান দিচ্ছে শীত আসছে। শীত আসার আগেই চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে শুরু হয়ে গেছে খেজুর গাছ কাটা। শীতের অন্যতম অনুষঙ্গ পিঠা ও পায়েস তৈরির অপরিহার্য উপাদান খেজুরের রস।
শীতের আমেজ শুরু না হতেই খেজুর গাছ প্রস্তুতিতে গাছের শাখা-প্রশাখা ও আগাছা কেটে সাফ করে ও গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। এরপর শুরু হবে গাছ থেকে রস সংগ্রহ, আর তা থেকে তৈরি হবে গুড় ও পাটালি। এ দিকে জীবননগরের খেজুরের গুড় ও নলেন পাটালির সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে।
খেজুর গাছ থেকে যারা বিশেষভাবে রস সংগ্রহ করের তাদেরকে গাছি বলা হয়। শীতের মৌসুম শুরু হতে না হতেই গাছিরা গাছের পরিচর্যা ও গাছ প্রস্তুত করতে শুরু করেছের। হাতে দা নিয়ে ও কোমরে ডোঙ্গা বেঁধে নিপুণ হাতে গাছ চাছাছোলা করছেন তারা।
জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, উপজেলায় এ বছর রস সংগ্রহের জন্য প্রায় ৮০ হাজার খেজুর গাছ প্রস্তুত করা হচ্ছে। শীত মৌসুমে প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ১০ কেজি গুড় পাওয়া যায়। সে হিসাবে এসব গাছ থেকে গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার মেট্রিক টন।
এ উপজেলার মাঠের ক্ষেতের আইলে, রাস্তার পাশে, পুকুর পাড়ে অযত্নে-অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুরের গাছগুলো জেলার অর্থনীতিতে আশীর্বাদ হয়ে আসে। শীত মৌসুমে রস-গুড় উৎপাদন করে প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে উপজেলার কয়েক শত পরিবার।
আকবর হোসেন নামে একজন গাছি বলেন, আমাদের কাজ খুব ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা গাছের অনেক ওপরে উঠে ধারালো দা দিয়ে গাছ চাছি। খালি পায়ে গাছে উঠতে হয়, কখনো কখনো গাছে সাপও থাকে, তাই সতর্ক থাকতে হয় সবসময়। তবে শীত মৌসুমে রস সংগ্রহ করে আমরা বেশ ভালো আয় করতে পারি।
আলমগীর নামে আরেকজন গাছি বলেন, আমরা দিনরাত খেটে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করি। এই রস থেকে গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করি। শীত আসার আগে গাছগুলো ভালো করে প্রস্তুত করতে হয়, যাতে রস বেশি পাওয়া যায়। কষ্ট বেশি কিন্তু যখন গুড় তৈরি হয়, তখন সেই কষ্টের ফলটা দেখতে ভালো লাগে।