বিবি প্রতিবেদক
পৌষের শেষে এসে দেশের কয়েকটি জেলার উপর দিয়ে বয়ে চলেছে মৃদ্যু মৈতত্য প্রবাহ। আর প্রচণ্ড শীতে জবুথবু প্রাণ-প্রকৃতি। এই পরিস্থিতিতে যশোরে আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, চর্মরোগসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিতে প্রতিদিনই যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভিড় করছেন আক্রান্তরা। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিশু ও বয়স্করা। গত কয়েক দিনে রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. পার্থ প্রতীম চক্রবর্ত্তী।
শিশু ওয়ার্ডে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি। প্রতিদিন এখানে চিকিৎসা নিচ্ছে গড়ে ৮০-৯০ জন রোগী। বহিঃবিভাগে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার রোগী চিকিৎসা নেয়াদের মধ্যেও শীত ও ভাইরাস জনিত রোগী বেশি।
গতকালদুপুরে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, ২৭ বেডের বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫৮। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক-নার্সদের। শয্যা না পেয়ে ওয়ার্ডের মেঝেতে বসে চিকিৎসা নিতে দেখা যায় অনেককে। তাদের বেশির ভাগই নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছেন বলে জানান কর্তব্যরত সেবিকা। চিকিৎসার জন্য আসা রোগীর স্বজনরা বলছেন ঠান্ডা ও জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এলে চিকিৎসক ভর্তি করে দিচ্ছেন। ওয়ার্ডে যাওয়ার পর রোগীর জন্য বেড পাওয়া তো দূরে থাক, মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নেয়ার জন্যও জায়গা খালি পাওয়া দুষ্কর। গত এক সপ্তাহে হাসপাতালে শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন ৫৮৮ জন শিশু রোগী। এদের মধ্যে অধিকাংশই জ¦র, ঠান্ডা, ডায়রিয়া ও শ^াসকষ্টজনিত রোগী।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার হাসপাতালের মেডিসিন বহির্বিভাগে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রোগীদের বেশি ভিড় দেখা গেছে। চারটি রুমে একাধিক ডাক্তাররা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। ডাক্তারদের রুমের সামনে রোগীর দীর্ঘ লাইন। এসময় রোগী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীতে আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে সাধারণত যেসব রোগ দেখা দেয়, সেসব রোগীই তুলনামূলকভাবে বেশি। ঠান্ডা, কাশি, শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা শীতের কারণে বেড়েছে দ্বিগুণ পরিমাণে। শীতের কারণে সকাল ৯টার পর থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে।
মণিরামপুর রোহিতা গ্রামের বাসিন্দা রায়হান ইসলাম বলেন, যশোরে ছেলের বাসায় বেড়াতে এসেছি। কয়েকদিন ধরে কাশি হচ্ছে। এ কারণে রাতে ঘুম হয় না। নাক দিয়েও অনবরত পানি পড়ছে। তাই ডাক্তারের কাছে এসেছি।
ঠান্ডাজনিত সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে ভুগছে নাদিয়া সুলতানার ৯ বছরের মেয়ে রিয়া। শীত আসলেই তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। প্রতি শীতেই ডাক্তার দেখান। মেয়েকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে এসেছেন তিনি। থাকেন শহরের কাজীপাড়া এলাকায়। মেয়ের সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মেয়েটা অনেকদিন থেকে ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছে। তারওপর গত কয়দিন থেকে শীত বাড়ায় তার কষ্টও বেড়েছে। ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ালেও ভালো হয়নি। এজন্য ডাক্তার দেখাতে আসলাম।
শীতে ঠান্ডা ও ভাইরাস জনিত রোগ থেকে শিশুর সুরক্ষায় অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুস সামাদ। তিনি জানান, ঋতু পরিবর্তনের ফলে শীতকালে শিশুরা খুব অল্পতেই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তাই অভিভাবকদের সবসময় সচেতন থাকতে হবে। ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে বাঁচতে শীতে শিশুকে আরামদায়ক ও গরম কাপড় পরাতে হবে। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে শিশুদের বেশি কাপড় নিশ্চিত করা দরকার। ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে শিশুদের ব্যবহৃত জামা-কাপড় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা খুবই জরুরি। শীতের সময় বায়ুবাহিত বিভিন্ন রোগজীবাণু শিশুদের সহজেই আক্রমণ করে। ধুলাবালি শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে নাক দিয়ে ফুসফুসে ঢুকে গলায় কিংবা নাকে প্রদাহ, সর্দি, কাশিসহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. পার্থ প্রতীম চক্রবর্ত্তী জানান, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাস ও ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। অতিরিক্ত রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হয়। সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দেয় ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার সময়। ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি ভর্তি থাকায় রোগীদের মেঝেতে থাকতে হচ্ছে। তিনি আরও জানান, ২৫০ শয্যার হাসপাতাল পরিচালনার জন্য যে পরিমাণ জনবল প্রয়োজন তা না থাকায় বাড়তি চাপে পড়তে হয় কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের।
শিরোনাম:
- আলুর দাম লাগামহীন ভোক্তার নাভিশ্বাস
- শীতে ফুটপাতে গরম কাপড় বিক্রির ধুম
- একটা সংস্কার কমিটি দিয়ে সংবিধান সংস্কার সম্ভব না: মির্জা ফখরুল
- নিখোঁজের ৩ দিন পর কপোতাক্ষ নদে মিলল বৃদ্ধার মরদেহ
- কৃষ্ণনগরে আরাফাত কোকো স্মৃতি ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন রতনপুর
- পাখির সাথে মানুষের ভালোবাসার গল্প !
- সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখবে বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা
- যশোর মটর পার্টস ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচন সংস্কার ও উন্নয়ন পরিষদের পক্ষে ২৭টি মনোনয়নপত্র ক্রয়