বাংলার ভোর প্রতিবেদক
আজ পহেলা বৈশাখ। আজ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। বাঙালির সাংস্কৃতিক জাগরণের উৎসবের দিন আজ। স্বাগত ১৪৩২ বঙ্গাব্দ। রোববার সূর্যাস্তের সাথেই মহাকালের গর্ভে চিরতরে হারিয়ে গেছে আরো একটি বছর (১৪৩১)। আর আজকের নতুন সূর্যোদয় ঘটেছে নতুন বছরের বার্তা নিয়ে। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হয়েছে নতুন বছর। পবিত্র রমজানের শেষে ঈদ আনন্দের পরে আরও এক আনন্দ পহেলা বৈশাখ এবার ভিন্ন মাত্রায় উদযাপন হচ্ছে। এবার উৎসব পালিত হবে দিনব্যাপি। সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত মঙ্গল শোভাযাত্রার আতুর ঘর জেলা শহর যশোরে এই দিবসে উৎসবের মাত্রাটা একটু বেশি। ভোর হতে না হতেই এই জনপদে শুরু হয় নতুন বর্ষকে বরণ করে নিতে আনন্দ উৎসব। ছোটবড় অন্তত ৩০টির অধিক সংগঠনের উদ্যোগে এবারের বর্ষবরণের মহানন্দ অনুষ্ঠান।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপশি বর্ষবরণে প্রায় সব সংগঠনে থাকবে মিষ্টি মুখের ব্যবস্থা। বিভিন্ন সংগঠন নিজ নিজ অনুষ্ঠান আয়োজনের পাশাপাশি সম্মিলিত উদ্যোগে বের হবে ‘বর্ষবরণের আনন্দ শোভাযাত্রা’। সকাল ৯টায় কালেক্টরেট চত্বর থেকে থেকে জেলা প্রশাসনের ব্যানারে এই শোভাযাত্রা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করবে। কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু হয় মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। হিজরি চন্দ্র সন ও ইংরেজি সৌর সনকে ভিত্তি করে প্রবর্তন হয় নতুন এই বাংলা সন। ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথম দিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সাথে বাংলা বর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সাথে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। আবহমানকাল ধরেই চলছে বৈশাখ বরণের আনুষ্ঠানিকতা। নববর্ষের প্রকৃত রূপটি দৃশ্যমান হয় গ্রামে। একসময় গ্রামবাংলায় চৈত্রসংক্রান্তি ছিল প্রধান উৎসব। বছরের শেষ দিনে তেতো খাবার খেয়ে শরীর শুদ্ধ করতেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। নির্মল চিত্তে প্রস্তুত হতেন নতুন বছরে প্রবেশ করার জন্য। এখনো বৈশাখ বরণের অংশ হিসেবে বাড়িঘর ধুয়ে-মুছে পরিস্কার করেন গৃহিণীরা। খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন সবাই। পরেন নতুন পোশাক। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িতে বেড়াতে যান। ঘরে ঘরে সাধ্যমতো বিশেষ খাবার রান্না করা হয়। থাকে পিঠাপুলির আয়োজনও।
বাংলা নববর্ষে ব্যবসায়ীদের হালখাতা রীতি এখনো এ দেশের নিজস্ব সংস্কৃতির আমেজ নিয়ে উৎসবের পরিধির আরো বিস্তার ঘটিয়েছে। কৃষকসমাজ আজো অনুসরণ করছে বাংলা বর্ষপঞ্জি। এককালে কেবল গ্রামাঞ্চলেই পহেলা বৈশাখের উৎসবে মেতে উঠতো মানুষ। নানা অনুষ্ঠান, মেলা আর হালখাতা খোলার মাধ্যমে তখন করানো হতো মিষ্টিমুখ। এখন আধুনিক বাঙালি তাদের বাংলা নববর্ষকে সাজিয়ে তুলছে শহরে নগরে সর্বত্রই। নববর্ষ উপলক্ষে নান্দনিক নিমন্ত্রন পত্রে আমন্ত্রণ জানানোর কাজ শেষ হয়েছে। সংগঠনগুলো আলাদা পোশাকও করেছে। সংগঠনগুলোর সকল প্রস্তুতি শেষে আজ নিজ নিজ উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবে।
উদীচী
দীর্ঘ ৪৮ বছরের ধারাবাহিকতায় পৌর উদ্যানে বর্ষবরণ উৎসবে মাতবে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। দিনব্যাপি থাকবে তাদের অনুষ্ঠানমালা। প্রথম পর্বে ৬ টা ৩১ মিনিট থেকে সকাল দশটা পর্যন্ত এবং বৈকালিক অনুষ্ঠান বিকেল ৪ টা ৩১ থেকে রাত্রি আটটা পর্যন্ত। তিন শতাধিক ছেলে মেয়ে শিক্ষার্থী অংশ নেবে গোটা অনুষ্ঠানে। থাকবে সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি। গোপালগঞ্জ উদীচী থেকে আমন্ত্রিত শিল্পীরা পরিবেশন করবে গীতিনাট্য ‘নকশি কাঁথার মাঠ’।
সুরবিতান সঙ্গীত একাডেমি
দেশের প্রাচীনতম সাংস্কৃতিক সংগঠন সুরবিতান একাডেমির প্রভাতী অনুষ্ঠান টাউন হল ময়দানের শতাব্দি বটবৃক্ষ পাদদেশে সকাল সাড় ৬ টায়। দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ছাত্র-ছাত্রীর পরিবেশিত অনুষ্ঠানের ডালিতে রয়েছে হারানো দিনের গান, নজরুল, রবীন্দ্রনাথসহ পাঁচ গীতি কবির গান, নৃত্য ও আবৃত্তি। এছাড়া সংগঠন কার্যালয়ে মিষ্টিমুখের আয়োজন।
বিবর্তন ও সুরধনী
নাট্য সংগঠন বিবর্তন ও সুরধনী সংগীত নিকেতন বরাবরের মতো এবারও যৌথভাবেই বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করবে। নবকিশলয় স্কুল প্রাঙ্গণে। প্রভাতী অনুষ্ঠান ৬ টা ১ মিনিটে এবং বৈকালিক অনুষ্ঠান ৪ টা ৪৫ মিনিটে। সংগীত আবৃত্তি নৃত্য পাশাপাশি পরিবেশিত হবে নাটক। প্রভাতে অনুষ্ঠানে শিশুদের নাটক কাজী নজরুল ইসলামের ‘পুতুলের বিয়ে’ এবং বৈকালিক অনুষ্ঠানে বড়দের নাটক বাদল সরকারের ‘মনের আয়না’। এছাড়াও সংগঠন দুটির কার্যালয়ে মিষ্টি মুখের আয়োজন সকাল ১০ টা থেকে।
পুনশ্চ যশোর
মুসলিম একাডেমি মাঠে সকাল সাড়ে ছয়টায় এবং বিকেল সাড়ে ৪ টায় দুই পর্বের অনুষ্ঠানে থাকবে। সংগীত নৃত্য ও আবৃত্তি। দুই শতাধিক ছেলে মেয়ে অংশ নেবে এই অনুষ্ঠানে। সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রয়াত অধ্যাপক সুকুমার দাসের হাতে গড়া পুনশ্চ বরাবরের মতোই অনুষ্ঠান আয়োজনে সকলেরই নজর কাড়বে।
যশোর সাহিত্য পরিষদ
জেলা পরিষদ সংলগ্ন কবি সাহিত্যিকদের মহামিলন কেন্দ্র সাহিত্য পরিষদের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান সকাল সাড়ে ১০ টায়। খই, মুড়ি, বাতাসা, গজা-কদমা দিয়ে আপ্যায়ন জানানোর পাশাপাশি কার্যালয়ের নিজস্ব মঞ্চে পরিবেশিত হবে আবৃত্তি ও সঙ্গীত।
ইনস্টিটিউট নাট্যকলা সংসদ
ঐতিহ্যমন্ডিত এবং প্রাচীনতম নাট্য সংগঠন ইনস্টিটিউট নাট্যকলা সংসদের আয়োজনে বর্ষবরণ উৎসবে থাকছে মিষ্টি মুখের আয়োজন। সকাল ন’টা থেকেই কার্যালয় প্রাঙ্গণে এই আয়োজনে নাট্য কর্মীসহ সকলেই আমন্ত্রিত।
নৃত্য বিতান
নৃত্য বিতান যশোরের আয়োজনে সকাল ৯ টা থেকে সংগঠন কার্যালয়ে মিষ্টিমুখের আয়োজন। বর্ষবরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আগামীকাল বিকেল সাড়ে ৪ টায় টাউন হল ময়দানের শতাব্দি বটবৃক্ষ তলে।
যশোর সংস্কৃতিকেন্দ্র
বিকেল চারটায় ঈদগাহ ময়দানে যশোর সংস্কৃতি কেন্দ্রের বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। এতে অংশ নেবে যশোর সাংস্কৃতিক সংসদ, জীবন তরী সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংসদ, মুন্সি মেহেরুল্লা সাংস্কৃতিক সংসদ, সূর্যোদয় শিল্পীগোষ্ঠী, নজরুল সাহিত্য পরিষদ, যশোর থিয়েটার, তরঙ্গ শিল্পীগোষ্ঠী, ফুলকুড়ি আসর, রেনেসাঁ শিল্পীগোষ্ঠী, প্রতিফলন শিল্পীগোষ্ঠী ও তারার মেলা শিল্পীগোষ্ঠী।
এছাড়াও রাজনৈতিক দল বিএনপি যশোর জেলা শাখার আয়োজনে পালিত হবে বর্ষবরণ উৎসব। দিনব্যাপি দলীয় কার্যালয় উৎসবে থাকবে মিষ্টিমুখসহ নানা আয়োজনে। ব্যঞ্জন থিয়েটার, থিয়েটার ক্যানভাস ও সপ্তসুরসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে পালিত হবে বর্ষবরণ উৎসব। আর ব্যঞ্জন যশোরের তাদের বৈশাখী উৎসবের আয়োজন করেছে ২৫ এপ্রিল মুন্সী মেহেরুল্লাহ ময়দানে।