বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে মহাসড়ক সংস্কারসহ ৪ দফা দাবিতে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। এই কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের দ্রুত সড়ক সংস্কারের আশ্বাস দিতে এসে তোপের মুখে পড়েন যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সওজের অন্য কর্মকর্তাদের সহায়তায় স্থান ত্যাগ করেন তিনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এই ঘটনাটি ঘটে।
সরেজমিনে দেখা যায়, যশোরের তিন মহাসড়কের অবস্থা বেহাল। সড়কের উপরিভাগের কোথাও ছোট-বড় গর্ত, আবার কোথাও উঠে গেছে পিচ। কোথাও পিচ জড়ো হয়ে সৃষ্টি হয়েছে উঁচু ঢিবি। অসহনীয় ধুলার যন্ত্রণার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যশোর-বেনাপোল, যশোর-ঝিনাইদহ ও যশোর খুলনা সড়কের যানবাহন ও সাধারণ জনগণ।
এমন পরিস্থতিতে কয়েকদফা যশোরের সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীকে দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী নেতাকর্মীরা। দ্রুত সংস্কার না হলে কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি দিয়েছিলেন তারা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকে সওজ বিভাগের সামনে। চার দফা দাবি সম্বলিত পোস্টার নিয়ে কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেয়।
বিভিন্ন স্লোগান ও বক্তব্য দেয়ার পাশাপাশি নেতাকর্মীরা একপর্যায়ে চার দফা সম্বলিত পোস্টার সওজ বিভাগের বিভিন্ন দেয়ালে দেয়ালে সাঁটিয়ে দেয়। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বাম দলের নেতাকর্মীরা যোগ দিয়ে স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত করে তোলে সওজ কার্যালয় চত্বর। এ সময় সওজ বিভাগের অন্য কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন দপ্তরটির নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া। একপর্যায়ে তিনি মাইক্রোফোন নিয়ে সড়কগুলো দ্রুত সংস্কার করার আশ্বাস জানিয়ে বক্তব্য দেয়া শুরু করলে নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েন। এ সময় নির্বাহী প্রকৌশলীকে আন্দোলনকারীরা নানা প্রশ্ন করতে থাকে এবং হট্টগোল শুরু হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সওজের অন্য কর্মকর্তাদের সহায়তায় স্থান ত্যাগ করে নিজ দপ্তরে ফিরে যান তিনি।
আন্দোলকারীরা বলেন, ‘যশোরের তিনটি মহাসড়কের অবস্থা বেহাল। এর মধ্যে যশোর-ঝিনাইদহ ও যশোর-খুলনা মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এক নেতা সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই সড়ক দুর্ঘটনা সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা। বক্তারা বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) যখন আমরা সওজ বিভাগ ঘেরাও কর্মসূচি করছি; তখন জানতে পেরেছি যশোর-ঝিনাইদহ সড়ক সংস্কার শুরু করেছে। হঠাৎ করেই এই সড়কের গর্তে পিচ ঢেলে দিয়ে আন্দোলনকারীদের আই ওয়াশ করতে চাইছে কর্মকর্তারা। প্রশ্ন তোলেন- আজ কাজ শুরু করলেন কেন? এতদিন কি আপনারা নেশা করে ঘুমিয়ে ছিলেন? এতদিন কেন আপনাদের টনক নড়েনি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘রাস্তা সংস্কারে অনিয়মের কারণেই যশোরের সড়কের এই অবস্থা। দীর্ঘদিন এই অবস্থায় পড়ে থাকলেও টনক নড়েনি সওজের। বিগত সময়ে রাস্তার কাজের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদার, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, সড়ক ও জনপথ বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার বন্ধ ও কমিশনভোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অবিলম্বে দাবি আদায় না হলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্যালয় ঘেরাওসহ আরো কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারীরা। বিক্ষোভে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব জেসিনা মুর্শীদ প্রাপ্তি, মুখ্য সংগঠক আল মামুন লিখনসহ অন্যান্যরা।
এই বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া জানান, ‘যশোরে তিনটি মহাসড়কের মধ্যে যশোর ঝিনাইদহ সড়কে একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পেই সড়ক সংস্কার হবে; এতে যশোর সওজের কিছু করার নাই। যশোর-বেনাপোল সড়কে আড়াই শ’ মিটার সড়ক অবস্থা খারাপ; এই কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছি। আর যশোর-খুলনা মহাসড়কে ১৬ কিলোমিটার খারাপ। তিনটি টেণ্ডারের মাধ্যমে ৯ কিলোমিটার সংস্কার কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। সব কাজই প্রক্রিয়াধীন। তিনি বলেন, আন্দোলনকারীদের বুঝাতে চেয়েছিলাম; ওর ভিতর থেকে কয়েকজন উত্তেজিত হয়ে গেছিলো। এখন তারা বিষয়টি বুঝতে পেরেছে।