♦ জনপ্রতিনিধিদের একাংশকে হয়রানির অভিযোগ
♦অপরাধীর অন্য পরিচয় মূখ্য নয়: অতিরিক্ত পুলিশ সুপার
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
সম্প্রতি যশোরে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় নড়চড়ে বসেছে পুলিশ প্রশাসন। সন্ত্রাস দমনে কঠোর অবস্থানে জেলা পুলিশ। চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, কিশোর গ্যাং, মাদক কারবারে জড়িত চক্র ও এদের আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। গত দুইদিনে যশোরে পুলিশের তৎপরতায় সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছু স্বস্তি ফিরেছে। জনপ্রতিনিধিদের একাংশের দাবি, পুলিশ উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের হয়রানি করছে। আর পুলিশের দাবি, কতিপয় জনপ্রতিনিধির অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। কাউকে হুমকি কিংবা হয়রানি করা হয়নি। পুলিশ অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
জানা যায়, যশোর জেলায় জানুয়ারিতে ৬ জন খুন হয়েছেন। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে আরও ৬ জন নিহত হয়েছেন। একই সাথে বেড়েছে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতায় চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারি। জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায়ও এ নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়েছে। আইনশৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতিতে পুলিশকে আরও কঠোর হওয়ার জন্য গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এরপর কঠোর অবস্থানে চলে গেছে জেলা পুলিশ।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি যশোর সরকারি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে হানা দেয়ার ঘটনায় বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা মেহবুব রহমান ম্যানসেলসহ তার তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একইদিন রাতে যশোর পৌরসভার আলোচিত কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলনকে তিন সহযোগীসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। কাউন্সিলরকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের প্রত্যাহার দাবি করে যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী জনপ্রতিনিধিরা। এ ঘটনার পর আরো নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশের তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীকে ছুরিসহ আটকও করে পুলিশ। এদিকে, শহরে পুলিশের তৎপরায় সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের একাধিক বাসিন্দা জানান, পাড়ায় পাড়ায় কিশোর গ্যাং বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি, মাদক, খুন, জখমের ঘটনা ঘটছে। ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। পুলিশ এদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করায় তার খুশি। এদের গডফাদারদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে পারলে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। মানুষ শান্তিতে থাকতে পারবে।
অপরদিকে, যশোরের জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। জেলা ডিবি পুলিশ ও কোতোয়ালী থানা পুলিশের একাধিক টিম সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের বাড়িতে গিয়ে এই হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু করে আজ (শুক্রবার) দুপুর পর্যন্ত চেয়ারম্যানদের বাড়িতে গিয়ে এই হুমকি দেয়া হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের বাড়িতে যায় পুলিশ।
এ বিষয়ে এমপি কাজী নাবিলের অনুসারী ও সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল দাবি করেছেন, বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দ্দার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইনের অপসারণে দাবি জানানোর পর থেকে জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ হুমকি দিচ্ছে। শুক্রবার রাতে যশোর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজিবুল আলম, চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দাউদ হোসেন দফাদার, লেবুতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলীমুজ্জামান মিলন ও রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান লাইফের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ মানববন্ধন কর্মসূচিত না আসার হুমকি দেন। আর শুক্রবার সকাল থেকে পুলিশ আমার বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়েছে। এছাড়া, সকাল থেকে পুলিশের একাধিক টিম উপশহর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটু, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদসহ অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ হুমকি দিচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, পুলিশের অভিযান কোন ব্যক্তি কিংবা জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে নয়। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মাদক ও কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত ও মদদদাতাদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই বিবেচনা করছি। তার অন্য পরিচয় আমাদের কাছে মূখ্য নয়। জেলার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে মানুষকে স্বস্তি দিতে পুলিশ কাজ করছে।
এক প্রশ্নের জবাবে বেলাল হোসাইন বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে হুমকি কিংবা হয়রানির অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। পুলিশ কাউকে হয়রানি করছে না। কাউকে হুমকিও দেয়নি। অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশ তৎপর রয়েছে।