বাংলার ভোর প্রতিবেদক
পেঁয়াজ কিনতে যদি পকেট খালি হয়, তবে বাকিটা করবো কি দিয়ে ? আমরা শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ। যা রোজকার করি তাই দিয়ে পরিবার নিয়ে ভালো থাকতে চাই। মন খারাপ করে এমন কথা বলছিলেন শুক্রবার বাজার করতে আসা যশোর শহরের রবীন্দ্রনাথ সড়কের নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা লেদ মিস্ত্রি তালুকদার মনিরুল ইসলাম। প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দোকান মালিকের কাছ থেকে সাপ্তাহিক বেতন নেন তিনি। তার কিছু অংশ দিয়ে পরদিন শুক্রবার বাজার করেন। এ সপ্তাহে বাজার করতে এসে মনিরুল দৈনিক বাংলার ভোরকে জানান, একমাত্র পেঁয়াজ ছাড়া বাজারে সবকিছুর দাম মোটামুটি সহনীয়। কিন্তু আজকের বাজারে নতুন পেঁয়াজ কেজি প্রতি ১০০ টাকা ও পুরাতন পেঁয়াজ ১৪০ টাকা।
যদিও পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার সীমিত আকারে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে কয়েকদিন আগেই। তারপরও যশোরের বাজারে পণ্যটির দামে কোন প্রভাব পড়েনি।
মনিরুলের কথার সত্যতা খুঁজতে যশোর হাজী মোহাম্মদ মহসিন রোড বড়বাজারে সরেজমিনে বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে নতুন পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ ও পুরাতন পেঁয়াজ সর্বোচ্চ ১৪০ টাকা প্রতি কেজি। জানতে চাইলে নিচের বাজার এলাকার আলু, পেঁয়াজ ও মুদি দ্রব্যাদি বিক্রেতা সুজন স্টোরের মালিক সজিব হোসেন সুজন বলেন, আসলে হাটে পেঁয়াজ উঠছে চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। যে কারণে দাম ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুজন জানান, এই পরিস্থিতিতে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজারে স্থিতিশীলতা আনা যেতে পারে। এজন্য রাষ্ট্র এবং আমদানিকারককে উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে জনগণ এর সুফল ভোগ করতে পারবে।
এদিকে, চলতি সপ্তাহেই আবারো বেড়েছে সবরকম সয়াবিদন তেলের দাম। এদিন যশোরের বাজারে খোলা সয়াবিন তেল ১৯৫ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল ২১০ টাকা লিটার, সরিষার তেল ২১০ থেকে ২২০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে নতুন আলু কেজি প্রতি ৩০ টাকা ও পুরাতন আলু ২০ টাকা, রসুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, আদা ১৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ মানভেদে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, আটা ৪৫ টাকা, ময়দা ৫৫ টাকা, এলসি মসুরির ডাল ১০০ টাকা, দেশি ১৫০ টাকা, মুগ ডাল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, বুটের ডাল ৫৫ টাকা, ছোলার ডাল ১১০ টাকা, চিনি ৯৫ টাকা।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে ফুলকপি মানভেদে কেজি প্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৭০ টাকা, ব্রকলি ৬০ টাকা, পালং শাক ৩০ টাকা, পেঁয়াজ কালি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ২০ থেকে ২৫ টাকা, মিচুরি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মেটে আলু ৭০ থেকে ৮০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, মটরসুটি ১২০ টাকা, টমেটো ৭০ থেকে ৮০ টাকা, মুলো ৩০ টাকা, ধনেপাতা ১০০ টাকা, মানকচু ৫০ টাকা, লাউশাক ৫০ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৬০ টাকা, সবুজ শাক ৪০ টাকা, উচ্ছে ৪০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, কুশি ৪০ টাকা, ধুন্দল ৫০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, কাঁচা কলা ৪০ টাকা, পুঁইশাক ২০ থেকে ৩০ টাকা, কুমড়ো ৩০ থেকে ৩৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। এছাড়া আকারভেদে প্রতি পিস লাউ ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ডাটা শাক ৪০ টাকা আটি বিক্রি হয়েছে।
বিক্রেতা ইমদাদুল ইসলাম জানান, এখন মাঠের পর মাঠ সবজি আর সবজি। সব হাটেই তরকারির সমারোহ। বাজারে সরবরাহ যত বাড়বে সবজির দাম ততটাই কমবে।
মুরগির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে ব্রয়লার কেজি প্রতি ১৬০ টাকা, লেয়ার ৩০০ টাকা, সোনালী ২১০ টাকা, দেশি ৫৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে। তানভীর ব্রয়লার হাউজের মালিক ইমরান হোসেন জানান, খোঁজ নিয়ে দেখেন অন্যদের চেয়ে আমি কম লাভে মুরগি বিক্রি করছি। তবে এ ধারাবাহিকতা না থাকার আশংকা প্রকাশ করে ইমরান আরো জানান, তীব্র শীতে মুরগি অসুস্থ হয়ে মারা যায়। তখন বাজারে মুরগি সরবরাহ কমলে দাম বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া গরুর মাংস ৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস ১২০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে পাঙাশ কেজি প্রতি ১৬০ থেকে ২১০ টাকা, বেলে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, হরিণা চিংড়ি ৭০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৯০০ টাকা, বাটা ২২০ টাকা, পুঁটি ২০০ টাকা, শোল ৬০০ টাকা, বোয়াল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, পারশে ৬০০ টাকা, কাকলে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, চাপলে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, রুপচাঁদা ৮০০ টাকা, নাইলোটিকা ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, খয়রা ৪০০ টাকা, ফলই ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, খলসে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, দুই কেজি সাইজের রুই ৩৫০ টাকা, তিন কেজি সাইজের কাতলা ৩৫০ টাকা, চাষের কৈ ১৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে।
শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোড এলাকার বাসিন্দা প্রকৌশলী অলোক মজুমদার বলেন, গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় আজ সবরকম মাছের দাম কম মনে হচ্ছে।
মাছ বিক্রেতা জয় বিশ্বাস বলেন, মাছের সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে বিধায় দামও কিছুটা কম। তবে সেই তুলনায় বিক্রি কম।
চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে বাসমতী চাল কেজি প্রতি ৮০ থেকে ৮৪ টাকা, মিনিকেট ৬২ থেকে ৬৪ টাকা, রড মিনিকেট ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, কাজললতা ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা, বিক্রি হয়েছে। চাল চান্নীর বিক্রেতা বদরুল আলম বলেন, কোন সিণ্ডিকেট নেই তাই আপাতত চালের দাম বৃদ্ধির কোন আশংকা নেই।
ডিমের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে লাল ডিম হালি প্রতি ৩৫ টাকা, সাদা ডিম ৩২ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ডিম বিক্রেতা আনিস এন্টারপ্রাইজের মালিক আনিসুর রহমান বলেন, এখন ডিমের দাম কম। সেই হিসেবে ডিমের বিক্রি বেশ ভালো।

