কাজী নূর
যশোরের বাজারে হঠাৎ সরবরাহ কমায় কিছু সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সরবরাহ কমা এবং দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিক্রেতারা দায়ি করছেন ঢাকার পাইকারদের। তাদের অভিযোগ সদর উপজেলার সাতমাইল বাজার, মণিরামপুর বাজার, বাঘারপাড়া থানার বন্দবিলা ইউনিয়নের ভাটার আমতলা বাজার ও পুলেরহাট বাজার থেকে সর্বোচ্চ দাম দিয়ে ঢাকার পার্টিরা মাল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আর এ সুযোগে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ কমায় কিছু সবজির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। সবজির সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে আলু ও কাঁচা মরিচের দাম।

এদিকে ভোক্তারা বলছেন, ঠুনকো কারণ দেখিয়ে সবজির দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ বিষয়ে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের বাণিজ্য বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র কাজী আহসান জামিল শালুক বাংলার ভোর’কে বলেন, অবাধ এবং মুক্ত বাণিজ্যের এই যুগে দাঁড়িয়েও ঠুনকো কারণ দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রবাদির দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। এটাকে জিম্মি বলা যেতে পারে। বিষয়টি এমন যে, নিলে নেন, না নিলে চুপচাপ বাড়ি ফিরে যান। আসলে আমাদের অসহায়ত্বের গল্প শোনার কেউ নেই। দেখেন আজকের বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। আপনি যেহেতু সাংবাদিক তাই খোঁজ খবর নিয়ে দেখেন, আমার ধারণা উৎপাদনকারী অর্থাৎ কৃষক বেগুনের দাম পেয়েছে খুব বেশি হলে ৩০ টাকা। ভোক্তার কাছে পৌঁছানোর পূর্ব পর্যন্ত বাদবাকি ৫০/৬০ টাকা মধ্যস্বত্বভোগী খেয়ে চলে গেছে। অথচ যার বিনিয়োগ, কঠোর শ্রমে সবজির উৎপাদন সেই কৃষক ঠকে যাচ্ছে। এজন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের লাগাম টেনে ধরা উচিত। সবার আগে কৃষককে গুরুত্ব দিতে হবে। কৃষক ভালো থাকলে গোটা দেশ ভালো থাকবে।

শুক্রবার যশোরের হাজী মোহাম্মদ মহসিন রোড বড়বাজারে সরেজমিন ঘুরে এসব তথ্য মিলেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে বর্তমানে, কাঁচা মরিচ মানভেদে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, ফুলকপি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মিচুরি ৮০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, জলপাই ৩০ থেকে ৪০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, কাঁচা কলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, শিম ১০০ টাকা, মুলো ৩০ টাকা, পুঁইশাক ২০ টাকা, মেটে আলু ৮০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ধনে পাতা ৩০০ টাকা, শষা ৮০ টাকা, কুমড়ো ৩০ টাকা, মানকচু ৬০ টাকা, আমড়া ৫০ টাকা, কচুর মুখি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ঢেরস ৫০ টাকা, সবুজ শাক ৫০ টাকা, পালং শাক ৮০ টাকা, ডাটা ৩০ টাকা, ঝিঙে ৫০ টাকা, ওল ৭০ টাকা, শালগম ৭০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, বিটরুট ১৩০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। যা গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেশকিছু সবজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

জানতে চাইলে সবজি বিক্রেতা বাবলু শেখ বলেন, বাজারে সবজির সরবরাহ সামান্য কম থাকায় দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে এটা সত্য। তবে এটা সাময়িক। ন্যায্যমূল্য না পেয়ে অনেক কৃষক হাটে সবজি উঠায়নি। আসলে কৃষকরা সবজির ন্যায্যমূল্য পায় না। যেমন গত সপ্তাহে একজন কৃষক লাউ বিক্রি করে যে দাম পেয়েছে, তার ভাষ্যমত অনুযায়ী উৎপাদিত সবজি হাটে না উঠিয়ে গরুর খাবার হিসেবে দেয়া উত্তম। তাহলে চিন্তা করেন, একজন কৃষক যদি সবজি উৎপাদন করে সঠিক দাম না পায় তাহলে সে কেন উৎসাহিত হবে ? আশা করা যায় চলতি সপ্তাহে সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক হবে এবং দাম কমবে।

বাজারে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল থাকলেও বৃদ্ধি পেয়েছে আলুর দাম। বর্তমানে পেঁয়াজ ১১০ টাকা, আলু ২৫ টাকা, রসুন ১২০ টাকা, আদা ১৬০ কেজি বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতা সুজন জানান, হঠাৎ আলুর দাম ১৮/২০ থেকে লাফিয়ে ২৫ টাকায় ঠেকেছে। পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরেও দাম বৃদ্ধি পাবার কারণ বোধগম্য নয়।

মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে বর্তমানে, ৮০০/৯০০ গ্রাম সাইজের রুই ২০০ টাকা, ৫ কেজি সাইজের রুই ৫৫০ টাকা, ২ কেজি সাইজের রুই ৩১০ টাকা, ৪ কেজি সাইজের কাতলা ৪৮০ টাকা, ২ কেজি সাইজের কাতলা ২৮০ টাকা, ৩ কেজি সাইজের কাতলা ৩৫০ টাকা, পাবদা ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা, সিলভার কার্প ১২০ টাকা, নাইলোটিকা ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা, পাঙাশ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, টেংরা ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, পুঁটি ৩২০ টাকা, খলসে ৪৫০ টাকা, বাটা ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, টাকি ৩২০ টাকা, পারশে ৪০০ টাকা, চাপলে ৪০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা, হরিণা চিংড়ি ৭০০ টাকা, মায়া ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

মাছ বিক্রেতা রুবেল হোসেন জানান, মাছের দাম কম এবং সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও বিক্রি কম।

এদিকে মুদি পণ্যের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেল ১৯০ টাকা কেজি, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৭ টাকা লিটার, সরিষার তেল ২৩০ টাকা কেজি। আটা ৪৬ টাকা, ময়দা ৬০ টাকা, মসুরি ডাল ৯৬ থেকে ১৪০ টাকা, ছোলার ডাল ১১০ টাকা, মুগ ডাল ১৬০ টাকা, সাদা চিনি ১০০ টাকা, লাল চিনি ১২০ টাকা, জিরে ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

অপরদিকে বাসমতী চাল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা, মিনিকেট চাল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, স্বর্ণা চাল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, আটাশ চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, নাজিরশাইল ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া বাজারে লাল ডিম ৪৪ টাকা ও সাদা ডিম ৪০ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে।

বড়বাজার কালীবাড়ি এলাকার মুদি পণ্যের দোকান হিমু স্টোরের মালিক জানান, সবরকম মুদি পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।

মুরগি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা, সোনালী মুরগি ২৪০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩২০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version