সাতক্ষীরা সংবাদদাতা
সাতক্ষীরায় নগর যুব জলবায়ু সম্মেলন-২০২৪ এ বাসযোগ্য নগর গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন যুব জলবায়ু যোদ্ধারা। এজন্য তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণেরও দাবি জানান।
বুধবার বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট রাজনীতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামরুল ইসলাম ফারুক ও জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আজাদ হোসেন বেলাল।
পরে জলবায়ু ন্যায্যতার দাবিতে শহরে একটি বর্ণাঢ্য পদযাত্রা বের হয়। পদযাত্রাটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সাতক্ষীরা পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এসে শেষ হয়।
এরপর সেখানে ‘জলবায়ু সহনশীল ও পরিবেশবান্ধব নগর’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে ধারণাপত্র পাঠ করেন শিক্ষা সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা টিমের সদস্য ইমতি জামিল।
সেমিনারে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহিনুল ইসলাম, পরিবেশ কর্মী অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, সিনিয়র সাংবাদিক কল্যাণ ব্যানার্জি, বারসিক পরিচালক পাভেল পার্থ, সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম, তরুণ জলবায়ু যোদ্ধা এসএম শাহিন আলম প্রমুখ।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে উপকূলীয় এলাকার মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে কোন মতে বেঁচে থাকার আশায় গ্রাম থেকে শহরে আসতে বাধ্য হচ্ছে। বাস্তুচ্যুত অধিকাংশ মানুষের ঠাই হচ্ছে শহরের বস্তিতে ও ফুটপাতে। এই সংকটময় পরিস্থিতির জন্য দায়ী না হলেও তাদের বেদনাবিধূর জীবন বেছে নিতে হচ্ছে। জলবাযু পরিবর্তনের যে সংকট তাদের গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করেছে, শহরে এসেও তারা জলবায়ু পরিবর্তনের নানা নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হচ্ছে। এ বছরের এপ্রিল-মে মাসের ভয়াবহ তাপদাহ নগরের নিম্ন আয়ের মানুষকে ভয়াবহ বিপদে ফেলে দিয়েছে। এর প্রধান শিকার রিকশা-ভ্যান চালক, শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। সাতক্ষীরা শহরে ৪৭টি বস্তি রয়েছে, যেখানে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ বাস করে। এই শহরের প্রায় ৩৫ ভাগ মানুষ বস্তিতে বাস করে। সাতক্ষীরা শহরের বদ্দীপুর কলোনী, ইটাগাছা, কাটিয়া, মুনজিতপুর, মুন্সীপাড়া, রাজার বাগান লিচুতলা, কামালনগর, সুলতানপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এবং স্থান ভেদে ৪-৬ মাস পানিবন্দী থাকে মানুষ। একটি আদর্শ শহর করার জন্য ২০ থেকে ২৫ ভাগ বনভূমি-উদ্যান-পার্ক এবং ১৫ ভাগ জলাভূমি থাকা আবশ্যক। কিন্তু এই শহর পরিকল্পনা মাফিক না হওয়ার কারণে এখানে নেই পর্যাপ্ত গাছপালা, উদ্যান, পার্ক। এছাড়া শহরের যে জলাভূমি থাকার কথা সেটাও নেই। যতটুকু আছে তাও দিন দিন ভরাট দখল দূষণের কারণে এখানকার প্রাণবৈচিত্র্য বিলীন হতে বসেছে।
সম্মেলনে সাতক্ষীরা শহরের দরিদ্র মানুষের জন্য আবাসন বা সামাজিক আবাসন নিশ্চিতকরণ, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নিশ্চিতকরণ, পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন, পয়ঃনিস্কাশন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ, নগরের তাপদাহ কমানো ও সকল প্রাণের জন্য পরিকল্পিত শহর তৈরির লক্ষ্যে সরকারিভাবে অন্তত ২০ ভাগ বনভূমি এবং ১৫ ভাগ জলাভূমি নিশ্চিতকরণ, যুবদের বিশেষ করে নারীদের জন্য আয়বর্ধনমূলক প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুবিধা নিশ্চিতকরণ, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পানি দূষণ বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ, নির্মাণে পরিবেশসম্মত নির্মাণ সামগ্রি ব্যবহার, সবার জন্য সবুজ জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ ও শহরে পথচারিদের জন্য হাঁটার জন্য ফুটপাত ও বাইসাইকেল লেন তৈরির উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।