বাংলার ভোর প্রতিবেদক
সারাদেশে নারী ও শিশুদের উপর পাশবিক নির্যাতন ও ধর্ষণের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে যশোর। সোমবার দিনব্যাপি জেলার রাজনৈতিক দল, সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে। বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে উপস্থিত নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীরা ধর্ষকের সর্বোচ্চ বিচারের দাবি করেন।
এদিন সকালে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে জেলা মহিলা দলের উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ধর্ষণ নারী নির্যাতন দেশে নতুন কোন ঘটনা নয়। বিগত ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সময় এটি প্রকট আকার ধারণ ও ব্যাপকতা লাভ করে। সেই সময়ে প্রতিটি নৃশংস ঘটনার সাথে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর যুবলীগ, ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা জড়িত ছিল। সেদিন বিএনপি ছাড়া কেউ এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। এমনকি ভুক্তভোগীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে প্রতিকার চেয়েও কোন প্রতিকার পায়নি। সেই সাথে আদালতের দীর্ঘসূত্রতার কারণে ভুক্তভোগীরা বিচার না পেয়ে বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন।
বক্তারা আরও বলেন, গেল ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব লাভের পর মানুষের প্রত্যাশা ছিল সন্ত্রাসী যুবলীগ, ছাত্রলীগের অতীত সকল কুকর্মের বিচার হবে। নির্যাতিত নারী যথপোযুক্ত বিচার পাবেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে আজ পর্যন্ত ধর্ষণকারী যুবলীগ-ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের বিচারের কোন আশ্বাস পাওয়া যায়নি। উল্টো দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় দুষ্কৃতিকারীরা নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আজকে মাগুরার আছিয়া যে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। সেটি দেশব্যাপি তোলপাড় হয়ে গেছে। কিন্তু এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটলেও দোষীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। বিএনপি বরবরই এ বিষয়ে সোচ্চার । সেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সময় থেকে আজ পর্যন্ত নীারীর প্রতি যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে প্রতিটি ঘটনায় বিএনপি সর্বোচ্চ প্রতিবাদ করেছে।
জেলা মহিলা দলের সভাপতি রাশিদা রহমানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, জেলা জিয়া পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ফিরোজা মোস্তফা, জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী বেগম, সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ আক্তার, যুগ্ম-সম্পাদক রাফাত আরা ডলি, উপদেষ্টা সালেহা বেগম, সদর উপজেলা মহিলা দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি সেলিনা পারভিন শেলী, নগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সাবিহা সুলতানা প্রমুখ। মাবনবন্ধন পরিচালনা করেন নগর মহিলা দলের সভাপতি শামসুন্নাহার পান্না।
পরে দেশব্যাপি নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, নিপীড়ন, ধর্ষণ, অনলাইনে হেনস্তা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সার্বিক অবনতি ও বিচারহীনতার প্রতিবাদের সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ (এমএম) ছাত্রদল মানববন্ধন করে।
জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পির নেতৃত্ব কলেজ ক্যাম্পাসের চেতানায় চিরঞ্জীব পাদদেশে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণে শিক্ষার্থীরা ‘সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের কবর দে’, ‘আমার বোন ধর্ষিত কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘দড়ি লাগলে দড়ি নে, ধর্ষকদের ফাঁসি দে’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘ধর্ষকদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘জাস্টিস ফর আছিয়া, আছিয়া আছিয়া’, ’তুমি কে আমি কে, আছিয়া আছিয়া’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। এছাড়াও তারা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ধর্ষণবিরোধী প্রতিবাদ জানান।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পি, কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক শেখ হাসান ইমাম, কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব ( ভারপ্রাপ্ত) কামরুল ইসলাম, যুগ্ম-আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম বিল্টু, টিটোন তরফদার, গোলাম সরোয়ার প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা বলেন, মাগুরায় ছোট্ট শিশু আছিয়াকে ধর্ষণের ঘটনা আমাদের সমাজের জন্য লজ্জাজনক। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা। যাতে পরবর্তীতে আর কেউ ধর্ষণের সাহস না করে। বাংলাদেশের বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণকারীরা পার পেয়ে যায়। ধর্ষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করলে দেশে ধর্ষণের পরিমাণ কমে যাবে। সারা বাংলাদেশ এই ঘটনার প্রতিবাদে জেগে উঠেছে। আমরা দ্রুত বিচার এবং ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
অপরদিকে, এদিন দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে সারাদেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সুমাইয়া শিকদার ইলা। এছাড়া বক্তব্য রাখেন জান্নাতুল সুমি, সুরাইয়া শিকদার এশা, আশা লতা, মুসলিমা আক্তার সেতু, সামিয়া বিশ্বাস, খন্দকার রুবাইয়া, জান্নাতুল ফেরদৌস অনন্যা, ইমরান খান, জিএম মুন্না, বাইজিদ রহমানসহ অন্যান্যরা।
এ সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের হাতে ধর্ষণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন লেখা সম্বলিত পেপার দেখা যায়। এছাড়া শিক্ষার্থীরা মাগুরায় ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচার কার্যকরের দাবি জানান।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, যুগ যুগ ধরে নারীরা নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে। যার পেছনে রয়েছে সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ, সামন্তবাদ এবং পুরুষতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। শুধুমাত্র ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ বা পুরুষতন্ত্রকে দোষারোপ করলেই নারী নির্যাতন বন্ধ হবে না। বরং এর মূলে থাকা সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদী শোষণকেও চিহ্নিত করতে হবে।
এদিকে মহিলা দল ও ছাত্রদলের ব্যানারে জেলার আট উপজেলায় ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন করা হয়েছে।