# কারফিউ চলবে # সহিংসতার ঘটনা তদন্তে কমিটি
বাংলার ভোর ডেস্ক
গোপালগঞ্জে দফায় দফায় এনসিপি নেতাদের সঙ্গে হামলা-সংঘর্ষের সময় গুলিতে নিহত চারজনের কারোর সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত হয়নি; রাতেই তাদের দাফন ও সৎকার সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার দিনভর সংঘর্ষে নিহতরা হলেন- শহরের উদয়ন রোডের সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা (৩০), কোটালিপাড়ার হরিণাহাটি গ্রামের কামরুল কাজীর ছেলে রমজান কাজী (১৭), শহরের শানাপাড়ার সোহেল রানা (৩৫) এবং সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকার ইমন।
এর মধ্যে পোশাক ব্যবসায়ী দীপ্ত সাহাকে বুধবার রাতে পৌর শ্মশানে সৎকার করা হয়। এ ছাড়া টাইলস মিস্ত্রির সহকারী রমজান কাজীকে বুধবার রাতে এশার নামাজের পর এবং মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী সোহেল রানা ও ক্রোকারিজ দোকানের কর্মচারী ইমন তালুকদারকে বৃহস্পতিবার সকালে পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত নিয়ে মৃতের পরিবারের সদস্যরাও কেউ কোনো কথা বলতে চাচ্ছেন না।
তবে বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গোপালগঞ্জের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফ করা হয়। সেখানে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিকের কাছে সাংবাদিকরা সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের বিষয়ে জানতে চান। তখন তিনি বলেন, বিষয়টি আইন প্রক্রিয়ায় পরবর্তীতে দেখা হবে।
এ সময় তিনি আরও বলেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় পুলিশের কারও গাফিলতি আছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।
রমজানের চাচা মনিরুজ্জামান বুধবার রাতে বলেছিলেন, ঘটনার সময় রমজান শহর দিয়ে হেঁটে কাজে যাচ্ছিল। এ সময় সে গুলিবিদ্ধ হয়। সে ছিল টাইলস মিস্ত্রি।
পরিবার কোটালীপাড়ার হলেও রমজানের জন্ম-কর্ম শহরেই বলে জানান তার চাচা। তিনি বলেন, রাতে মরদেহ হাসপাতাল থেকে স্বজনদের বুঝিয়ে দেয়া হয়। পরে শহরের কবরস্থান মসজিদে রমজানের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই রাতে তাকে দাফন করা হয়েছে।
দীপ্ত সাহার বাবা সন্তোষ সাহা মারা গেছেন। দুই ভাই শহরের চৌরঙ্গী এলাকায় একটি তৈরি পোশাকের দোকান চালান। সংঘর্ষের মধ্যে দোকান থেকে বাসায় যাওয়ার পথে তিনি গুলিবিদ্ধ হন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে দিনভর হামলা-সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনায় বুধবার রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্ক ও লঞ্চঘাট এলাকা। সংঘর্ষে নিহত হন চারজন। আরও অনেকে গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে গুরুতর অবস্থায় তিনজনকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জে কারফিউ চলবে:
গোপালগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এনসিপির কর্মসূচিতে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের হামলার পর জারি করা কারফিউ শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত চলবে। তিন ঘণ্টা বিরতির পর এদিন দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কারফিউ চলবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, বুধবার রাত ৮টা থেকে আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে চলমান কারফিউ শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এদিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার জন্য কারফিউ বন্ধ থাকবে। পরে দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কারফিউ চলমান থাকবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এর আগে বুধবার রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কারফিউ জারির কথা জানানো হয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে।
বুধবার দুপুরে হামলার ঘটনার পর গোপালগঞ্জ জেলাজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করেন জেলা প্রশাসক মো. কামরুজ্জামান।
গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনা তদন্তে কমিটি:
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা ও সমাবেশ ঘিরে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর বলছে, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনির নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের এ কমিটিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ের একজন করে অতিরিক্ত সচিব। জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অঙ্গীকারের কথা সরকার পুনর্ব্যক্ত করেছে বলে জানিয়েছে সরকার প্রধানের দপ্তর।
গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশ ঘিরে মঙ্গলবার থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বুধবার এনসিপি নেতাকর্মীরা শহরের পৌর পার্ক মাঠে কর্মসূচি শুরুর আগেই সড়ক অবরোধকে কেন্দ্র করে পুলিশের গাড়িতে আগুন ও ইউএনওর গাড়িতে হামলা হয়। বেলা দেড়টার দিকে পৌর পার্কের মঞ্চে সমাবেশ শুরুর আগে হামলা হয়।
কিছুক্ষণ বাদে সেখানে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি করে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা পুলিশ ও সেনা পাহারায় মাদারীপুরের দিকে রওনা দিলে লঞ্চঘাট এলাকায় হামলার মুখে পড়েন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষ বেধে যায়।
দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও গুলির শব্দে গোটা গোপালগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষের পর অন্তত চারজনের লাশ গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে আসে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিকেলে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। তাতেও কাজ না হলে সন্ধ্যার পর জারি করা হয় কারফিউ।
দেশজুড়ে ‘জুলাই পদযাত্রা’র ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্যে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে ‘ফ্যাসিস্ট মুজিববাদীরা’ হামলা চালায় বলে এনসিপি নেতারা অভিযোগ করেছেন। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে বৃহস্পতিবার সারাদেশে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন। পাশাপাশি ‘জুলাই পদযাত্রা’র পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিও বহাল রেখেছেন।