কাজী নূর
যশোরের বাজারে সবজির দাম কমতির দিকে হলেও বৃদ্ধি পেয়েছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। অপরদিকে মাছ, মাংস, ডিম, তেলের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। তবে নতুন আলু ও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে ক্রেতারা অসন্তোষ। সরবরাহের অজুহাত দেখিয়ে বিক্রেতারা বলছেন, মোকামে আমদানি কম, বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে। শুক্রবার ছুটির দিনে যশোরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
গতকাল যশোরের বড়বাজারে নতুন আলু প্রতি কেজি ৬০ টাকা, নতুন পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১২০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি দরে বিক্রি হয়। এছাড়া পুরনো আলু ২৫ ও পুরনো পেঁয়াজ ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। রসুন প্রতি কেজি ১২০ টাকা ও আদা ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
বড়বাজারে এক মুদি দোকানী আব্বাস আলী বলেন, আড়তদারের কাছে জানতে পেরেছি হাটে নতুন পেঁয়াজ আসছে কম। যা পাওয়া যাচ্ছে সেটির দাম বেশি। এছাড়া পুরনো পেঁয়াজেরও সরবরাহ নেই। তাই এখন পুরনো ও নতুন পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু দিন পরেই নতুন পেঁয়াজের সরবারহ বাড়বে; তখন পেঁয়াজের দাম কমবে।’ প্রায় একই সুরে কথা বললেন আরেক মুদি দোকানী বিপ্লব সাহা বলেন, আসলে দাম কম বেশির বিষয়ে আমাদের মতো খুচরা ব্যবসায়ীদের কিছু করার থাকে না। মূল কথা হলো পাইকারি বাজারে দাম বৃদ্ধিতে খুচরা বাজারেও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।’
তার পরেও বিক্রিতাদের এই নাম বৃদ্ধির অজুহাত মানতে নারাজ বাজার করতে আসা বারান্দী মোল্লাপাড়া এলাকার বাসিন্দা শরিফুল হক ডলার। ভরা মৌসুমেও বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলছিলেন, সবজি, মাছ ও ডিমের দাম বেশ কম মনে হয়েছে। মাংস ও তেলের দাম স্থিতিশীল থাকলেও আলু, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির এই অজুহাত মানতে নারাজ এই ক্রেতা। হঠাৎ দাম বৃদ্ধিতে বাজার মনিটারিং অব্যবস্থাপনাকে দায়ি করেন তিনি।
শীত মৌসুমে সবজির দোকানগুলোতে সবজির সরবারহ বেড়েছে কয়েকগুণ। গতকাল ফুলকপি মানভেদে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ২০ থেকে ৩০ টাকা, ব্রকোলি ৬০ টাকা, মেটে আলু ৮০ টাকা, পেঁয়াজের কালি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, মিচুরি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, শিম ৮০ টাকা, গাজর ৬০ টাকা, ধনে পাতা ৮০ টাকা, জলপাই ৪০ টাকা, টমেটো ৮০ টাকা, মুলো ৩০ টাকা, পালং শাক ৪০ টাকা, মানকচু ৪০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, লাউশাক ৩০ টাকা, সবুজ শাক ৩০ টাকা, বিটরুট ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, ঢেরষ ৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, কচুর মুখি ৪০ টাকা, কাঁচা কলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, শষা ৩০ টাকা, কুমড়ো ৪০ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, উচ্ছে ৫০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, কুশি ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে পাবদা ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা, বাটা ১২০ টাকা, টেংরা ৫০০ টাকা, চিংড়ি ৯০০ টাকা, শোল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, দুই কেজি সাইজের রুই ৩৫০ টাকা, আড়াই কেজি সাইজের রুই ৩২০ টাকা, আড়াই কেজি সাইজের কাতলা ৩০০ টাকা, সিলভার কার্প ১২০ টাকা, পাঙাশ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, কৈ ১৮০ টাকা, পুঁটি ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
মুরগী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে ব্রয়লার প্রতি কেজি ১৬০ টাকা, লেয়ার প্রতিকেজি ৩০০ টাকা, সোনালী প্রতি কেজি ২১০ টাকা ও দেশি মুরগী প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। বড়বাজার নিচের বাজার এলাকার বিসমিল্লাহ ব্রয়লার হাউসের মালিক অন্তর জানান, ‘আসন্ন শীতে মুরগী পালন ব্যহত হয়। ফলে মুরগীর দাম বৃদ্ধি পাবার আশংকা রয়েছে।
চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে জিরা মিনিকেট প্রতি কেজি ৬২ থেকে ৬৪ টাকা, রড মিনিকেট প্রতিকেজি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, বাসমতী প্রতিকেজি ৮০ থেকে ৮৪ টাকা, কাজললতা প্রতিকেজি ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা, চাউল ৬৩ প্রতি কেজি ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা, নাজিরশাইল প্রতিকেজি ৮০ থেকে ৮২ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। বড়বাজার চাউলচান্নির চয়ন ট্রেডার্সের মালিক চিত্ত রঞ্জন পাল বলেন, এখন চালের বাজার সস্তা। সামনে নতুন চাল উঠলে দাম আরো কমতে পারে। তবে দাম কম থাকলেও চালের তেমন বিক্রি নেই বলে জানান চিত্ত রঞ্জন পাল।
মুদিপণ্যের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেল ১৯০ টাকা কেজি, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৮ টাকা লিটার, সরিষার তেল ২১০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মোটা মসুরির ডাল ৯০ থেকে ১০০ টাকা, দেশি মসুরি ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা, মুগ ডাল ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা, ছোলার ডাল ১১০ টাকা, চিনি ৯৫ টাকা, লালচিনি ১২০ টাকা, আটা ৪৫ টাকা, ময়দা ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। লাল ডিম ৩৬ থেকে ৩৮ টাকা হালি, সাদা ডিম ৩৫ টাকা হালি বিক্রি হয়েছে।
