বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে শিশু খাদিজা খাতুন জোনাকি হত্যা মামলায় সৎ মা নার্গিস বেগমকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছে ডিবি পুলিশ। মামলার তদন্ত শেষে আদালতে এ চার্জশিট জমা দিয়েছেন ডিবির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই খান মাইদুল ইসলাম রাজিব। অভিযুক্ত নার্গিস বেগম যশোর শহরের রেলগেট পশ্চিমপাড়ার নূর ইসলামের মেয়ে ও বেনাপোল পোড়াবাড়ি গ্রামের ইজিবাইক চালক শাহিন তরফদারের তৃতীয় স্ত্রী।
জানা গেছে, ইজিবাইক চালক শাহিনের প্রথম স্ত্রী এক ছেলে রেখে মারা যাওয়ায় তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় পক্ষে তার তার তিন মেয়ে হওয়ার পর শাহিনকে তালাক দিয়ে বিদেশে চলে যায় এবং অপর একজনকে বিয়ে করে। শাহিন জীবীকা নির্বাহের জন্য যশোর শহরের এসে ইজিবাইক চালায়। কয়েক বছর পর নার্গিসের সাথে পরিচয় ও তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর শাহিন সন্তান নিতে অনিহা প্রকাশ করে। নার্গিস দুইবার অন্তঃসত্ত্বা হলে শাহিন কৌশলে ওষুধ খাওয়ায়ে নষ্ট করে ফেলে। শাহিন অধিকাংশ সময় তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানদের বেশি ভালবাসতো। এতে নার্গিস মনে মনে ক্ষিপ্ত হতো।
২০২৪ সালের ২৬ মার্চ শাহিন গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যেয়ে ছোট মেয়ে জোনাকিকে বাসায় নিয়ে আসে। এতে ক্ষিপ্ত হয় নার্গিস। ১ এপ্রিল সকালে শাহিন ইজিবাইক নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। নার্গিসও কাজের জন্য বাসার বাইরে ছিলো। বেলা ১১টার দিকে নার্গিস বাসায় ফিরে জোনাকিকে গোসল করতে বলে। জোনাকি তার পিতা বাসায় না আসলে গোসল করবেনা বলে জানিয়ে দেয়। ফিরে এসে গোসল করার জন্য জোনাকিকে পুকুরে যেতে বলেন।
জোনাকি তার সৎ মায়ের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এ সময় সৎ মা নার্গিস বেগম জোনাকির গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। এরপর নার্গিস তার স্বামী শাহিনকে ফোন করে জোনাকিকে পাওয়া যাচ্ছেনা বলে জানায়। এর মধ্যে নার্গিস জোনাকির লাশ নিয়ে পাশের একটি পরিত্যক্ত ড্রেনের মধ্যে ফেলে রাখে। শাহিন এসে মেয়েকে খোঁজাখুজি করে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে কোতয়ালি থানায় একটি জিডি করেন। ২ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে প্রতিবেশী এক নারীর সংবাদে ভিত্তিতে ড্রেন থেকে জোনাকির লাশ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ এসে জোনাকির লাশ মর্গে পাঠায় ও সৎ মা নার্গিস বেগমকে হেফাজতে নেয়। এক পর্যায়ে নার্গিস বেগম পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করে। ৩ এপ্রিল নিহত জোনাকির পিতা শাহিন তরফদার এ ঘটনায় সৎ মা নার্গিস বেগমকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এ মামলার তদন্ত শেষে আটক আসামির দেয়া তথ্য ও সাক্ষীদের বক্তব্যে হত্যার সাথে জড়িত থাকায় সৎ মা নার্গিস বেগমকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। চার্জশিটে অভিযুক্ত নার্গিস বেগমকে আটক দেখানো হয়েছে।