বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর সিটি ক্যাবলের দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) না হওয়ায় সৃষ্ট জটিলতা কাটিয়ে ওঠার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একটি মামলার রায়ে যশোর সিটি ক্যাবল (প্রা.) লিমিটেডকে ২০০৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ দুই দশকের বকেয়া এজিএম আগামী ১২০ দিনের মধ্যে আহ্বান ও সম্পন্ন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এই রায়ে একই সাথে সাবেক চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস মুকুলের নেতৃত্বাধীন কমিটি বাতিল করে ২০০৩ সালের পরিচালনা কমিটি এবং মূল ২০ জন শেয়ারহোল্ডারকে বহাল রাখা হয়েছে। তবে এসবের পরও কমিটি নিয়ে বিতর্ক কাটছে না যশোর সিটি ক্যাবলের। গত বছরের ৫ আগস্টের পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট এই রায় ঘোষণা করে। রায় ঘোষণার পর প্রকৃত শেয়ার হোল্ডার ও কমিটির অনেক সদস্যের নামে থাকলেও কার্যক্রম চালাতে পারছেন না। এমনকি সিটি ক্যাবল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তারা।

তবে, আদালত আবেদনকারীর দাখিলকৃত আর্জি মঞ্জুর করে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, যশোর সিটি ক্যাবলকে ২০০৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বকেয়া এজিএমগুলো এই রায় ও আদেশের তারিখ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এজিএম অনুষ্ঠিত না হওয়ার বিলম্বকে আদালত ক্ষমা করেছে। প্রতিষ্ঠার সময় (২০০২ সাল) উল্লেখ করা মূল ২০ জন শেয়ারহোল্ডারই কেবল এজিএম-এ অংশগ্রহণের সুবিধা পাবেন। আর্টিকেলস অফ অ্যাসোসিয়েশনের ম্যান্ডেট ছাড়া পরে অন্তর্ভুক্ত হওয়া কোনো শেয়ারহোল্ডার এজিএম-এ অংশগ্রহণের অধিকার পাবেন না।

কোম্পানিকে দ্রুত উপযুক্ত অডিট ফার্মের মাধ্যমে ২০০৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য অডিট রিপোর্ট তৈরি করে এজিএম-এ পেশ করতে হবে। ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত রুহুল কুদ্দুস মুকুল, আবুল কালাম আজাদ, শংকর পাল, খায়রুল বাশার শাহিন, মোস্তফা গোলাম কাদের, উত্তম কুমার চক্রবর্তী, আমিনুল ইসলাম, রিজাউল হাসানদের কমিটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে আফজালুল করিম রানুকে চেয়ারম্যান করে গঠিত ২০০৩ সালের পরিচালনা কমিটি এবং ২০ জন মূল শেয়ারহোল্ডারকে বহাল রাখা হয়েছে।

আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, মেমোরেন্ডা এবং আর্টিকেলস অফ অ্যাসোসিয়েশনে আহ্বায়ক কমিটির কোনো উল্লেখ না থাকায়, এই কমিটি কোম্পানির কার্য পরিচালনায় কোনো প্রভাব ফেলবে না এবং এজিএম-এ কোনো ভূমিকা পালন করবে না। এজিএম অনুষ্ঠিত না হওয়ার জন্য আবেদনকারী ও কোম্পানির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জরিমানা প্রদানের দায় থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের এমন সুস্পষ্ট রায় থাকা সত্ত্বেও, অভিযোগ উঠেছে যে হাইকোর্টের রায়ে বাতিল হওয়া কমিটির কেউ কেউ এখনও জোরপূর্বক যশোর সিটি ক্যাবল নিয়ন্ত্রণ করছে।

বিগত কমিটির একাধিক নেতা ও শেয়ারহোল্ডার জানিয়েছেন, আদালতের রায় হাতে থাকা সত্ত্বেও তারা এক প্রকার ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না এবং তাদের দায়িত্ব বুঝে নিতে পারছেন না।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ফ্যাসিস্টের দোসর কাজী বর্ণ উত্তম গা ঢাকা দিলেও, বর্তমানে যশোর শহরের রেলগেট এলাকার প্রভাবশালী নগর বিএনপির সহ-সভাপতি খাইরুল বাশার শাহিন মূলত সিটি ক্যাবলের ব্যবসা দেখভাল করছেন। অথচ খায়রুল বাশার শাহিনদের কমিটি হাইকোর্ট বাতিল ঘোষণা করেছে। তারা প্রকৃত শেয়ারহোল্ডারদের বাদ দিয়ে এক প্রকার জোর-জবর দখল করে মুনাফা ভোগ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অবৈধ নিয়ন্ত্রণে কাজী বর্ণ উত্তমের জায়গায় নিজেকে রিপ্লেস করেছেন শাহিন।

এদিকে, ৩১ জুন ঢাকার মিডওয়ে হোটেলে বোর্ড মিটিং এ আফজাজুল করিমকে সভাপতি ও ফ্যাসিস্টের দোসর আ.লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক কাজী বর্ণ উত্তমকে ম্যানেজিং ডিরেক্টর করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিতে পরিচালক রয়েছেন, মিজানুর রহমান, রুহুল কুদ্দুস, মাহমুদুল ইসলাম, মারুফ হাসান ও মীর মোশাররফ হোসেন। এছাড়া ওই বোর্ড মিটিং এ কোম্পানি পরিষদ আরও সক্রিয় করার জন্য নতুন পরিচালক সংযুক্ত করা হয়। নতুন পরিচালকদের মধ্যে হাইকোর্টের রায়ে বাতিল হওয়া কমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ, খায়রুল বাশার শাহিন, আমিনুল ইসলাম ও রিজাউল হাসানকে সংযুক্ত করা হয়েছে।

সিটি ক্যাবল নিয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের একপর্যায়ে খায়রুল বাশার শাহিন এই প্রতিবেদককে ফোন করে অফিসে ডাকেন। তার ভাষ্য মতে, তিনি ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নিজেকে নগর বিএনপির সহ সভাপতি এবং শহরের রেলগেট এলাকার বাসিন্দা বলেও পরিচয় দেন।

সাবেক পরিচালক একেএম ওয়াহিদুজ্জামান বাপ্পি বলেন, আমি দীর্ঘদিন পরিচালক ছিলাম। এখন ওই দিকে যাই না। আপাতত শেয়ার হোল্ডার আছি। যারা যখন আসে তারা তাদের মত চালায়। এ বিষয়ে অন্য কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
মারুফ হোসেন বলেন, এক সময় পরিচালক ছিলাম। এখন অনেকে অভিমানে ওইদিকে যায় না। অনেক কিছু তো নিয়ম মানে না। কোম্পানির স্বার্থে অনেক কিছু করতে হয়।

হাইকোর্টের রায়ে বাতিল হওয়া কমিটির নেতারা পুনরায় কমিটিতে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না। এখন শাহিনরা চালাচ্ছে।

এ বিষয়ে সিটি কেবলের চেয়ারম্যান আফজালুল করিম রানু বলেন, আমরা গত বছর আদালতের রায় পেয়েছি। তারপর থেকে দায়িত্ব পালন করছি। কাজী বর্ণ উত্তম আমার কমিটির এমডি। ২০০৩ সালের পর ৪ থেকে ৫ টা কমিটি হয়েছিলো। সব কমিটি অবৈধ হিসেবে বাদ দেয়া হয়েছে।

Share.
Leave A Reply

Home
News
Notification
Search
Exit mobile version