মনিরামপুর সংবাদদাতা
জাহিদুল ইসলামের হাত আছে, তবে কনুই পর্যন্ত। দুর্ঘটনায় তাঁর দুই হাতের কনুইয়ের নিচের অংশ কেটে ফেলতে হয়। আঙুল না থাকায় স্বাভাবিক ভাবে কিছু ধরতে পারত না। এরপরও থেমে থাকেনি। শারিরীক প্রতিবন্ধতাকে পিছনে ফেলে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলছে সামনে। কনুইয়ের সাহায্যে লিখে সে এবার মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করছে। যশোরের মনিরামপুর উপজেলার আগরহাটি গ্রামের মাহাবুবুর রহমানের ছেলে জাহিদুল ইসলাম।
জানা যায়, তৃতীয় শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় ২০০৮ সালে বাড়ির পাশে একটি তিন তলা ভবনের ছাদে খেলা করার সময় বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে গুরুত্বর আহত হয় জাহিদুল ইসলাম। পরে ঢাকার একটি হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। কেটে ফেলা হয় তাঁর দুই কনুইয়ের হাতের নিচের অংশ। এ অবস্থায় সে দুই হাতের কনুই ব্যবহার করে তাঁর জামা-কাপড় গায়ে দেওয়াসহ অন্যান্য কাজ করতে শিয়ে নেয়। লেখালেখি দুঃসাধ্য হলেও লেখাপড়ার প্রয়োজনে দুই হাতের কনুই দিয়ে কলম চেপে লিখতে শেখা রপ্ত করে ফেলে। চিকিৎসা শেষে চার বছর পর পুনরায় তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হয়। লাউড়ী-রামনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ সম্পন্ন করে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয় সে। ধলিগাতী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষা অংশ নিয়ে ৪ দশমিক ৬ নম্বর পেয়ে ভর্তি হয় মনিরামপুর সরকারী কলেজে। চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় মনিরামপুর মহিলা কলেজের দ্বিতীয় তলায় ২০৭ (খ) নম্বর কক্ষে তাঁর আসন পড়েছে। সেখানে অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রতিবন্ধী জাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রথম দিকে অন্যর সহযোগীতা ছাড়া কোন কাজ করতে গেলে অনেক কষ্ট হত। কলম ধরে লেখা আয়ত্ব করতে সক্ষম হয়েছি। সাইকেল চালিয়ে কলেজে যাই। বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলায়ও অংশ নেই। এখন নিজের সব কাজ নিজেই করতে পারি।
জাহিদুলের বাবা মাহাবুবুর রহমান বলেন, বিদ্যুতিক দুর্ঘটনার কারণে ছেলের দুই হাতের নিচের অর্ধেক অংশ কেটে ফেলতে হয়। তবে, তাঁরা এ অবস্থার জন্য কখনো হতাশ হননি। কনুই সাহায্যে এখন সে নিজেই নিজের কাজ করতে পারে। পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ থাকায় তাঁকে কলেজে ভর্তি করে দেওয়া হয়।
মনিরামপুর সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ জিএম রবিউল ইসলাম ফারুকী বলেন, শারিরীক প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে মেধার সাক্ষর রেখেছে জাহিদুল। মানবিক বিভাগ থেকে জাহিদুল ইসলাম চলতি এইসএসসি পরীক্ষা অংশ গ্রহন করছে।
মনিরামপুর মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও কেন্দ্র সচিব আফরোজা মাহমুদ বলেন, কলেজের দ্বিতীয় তলায় ২০৭ (খ) কক্ষে কনুই দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিচ্ছে জাহিদুল ইসলাম।