মণিরামপুর সংবাদদাতা
জন্মগতভাবে লিতুন জিরার দু’টি হাত নেই! তবুও থেমে নেই তার লেখাপড়া! অদম্য স্পৃহা নিয়ে মুখ দিয়ে লিখেই পিইসিতে জিপিএ-৫.০০ অর্জন, মাধ্যমিক স্তরে স্কুল ফার্স্ট হবার গৌরবের অধিকারী লিতুন জিরা এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মুখ দিয়ে লিখে প্রথম দিনের বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা ভালভাবে সম্পন্ন করেছে সে। বাকি সকল বিষয়ের পরীক্ষা কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করার পাশাপাশি লিজুন জিরা জিপিএ-৫.০০ পেয়ে এসএসসি পাশ করার ব্যপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। যশোরের মণিরামপুর উপজেলার গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী লিতুন জিরা মণিরামপুর উপজেলার নেহালপুর স্কুল এণ্ড কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
মণিরামপুর উপজেলার শেখপাড়া খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান ও জাহানারা বেগমের মেয়ে লিতুন জিরা। দুই হাত-পা বিহীন অবস্থায় জন্ম নেয় সে। লিতুন জিরা স্থানীয় খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে ২০১৯ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) অংশ নিয়ে জিপিএ-৫.০০ পাওয়ার গৌরব অর্জন করে ।
সহপাঠ্যক্রমিকের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে দেশ সেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে লিতুন জিরা ।
লিতুন জিরার বাবা হাবিবুর রহমান বলেন, লিতুনজিরার লেখাপড়ার অদম্য আগ্রহে আমরা তাকে বোঝা মনে না করে সর্বদা তার পাশে থেকে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি। লিতুনজিরা তার প্রতিভা দিয়ে একের পর এক কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। তার মেধার ও অনন্য প্রতিভার কারণে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে দেশ ও জাতির কাছে এক পরিচিত মুখ লিতুন জিরা। লিতুন জিরা জাতীয় পর্যায়ে মেধার স্বাক্ষর রেখে সর্বোচ্চ পুরস্কার পেয়েছে। বাবা হিসেবে আমি গর্ববোধ করি।
প্রতিবেশী শিক্ষক কায়ছেদ আলী বলেন, লিতুন জিরা অস্বাভাবিক শিশু হলেও তার মধ্যে রয়েছে অদম্য মেধা ও ইচ্ছা শক্তি। সকলের সাথে হেসে খেলে কথা বলে সে। সে ২০১৯ সালে পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫.০০ পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল । এবারও ২০২৫ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫.০০ পাবে বলে আমরা আশা করছি।
লিতুন জিরার গোপালপুর স্কুল এণ্ড কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল করিম বলেন, লিতুন জিরা অসম্ভব মেধাবী, সে তার শ্রেণিতে শুধু প্রথম নয় স্কুলের মধ্যেও সে অন্যতম ও অনন্য। শুধু লেখাপড়ায় না, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও অন্যদের চেয়ে ভালো সে। চলতি এসএসসি পরীক্ষাতেও সে ইনশাআল্লাহ জিপিএ ৫.০০ পাবে।
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না বলেন, কঠোর অধ্যবসায় ও অদম্য ইচ্ছা শক্তি দিয়ে যে সবকিছু অর্জন করা যায় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত লিতুন জিরা। তার সর্বাঙ্গীন সাফল্য ও মঙ্গল কামনা করি।