কাজী নূর
মায়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার এক অনুপম চিত্র দেখা গেল যশোরের মুনশি মেহেরুল্লাহ ময়দানে। ‘শেকড়’ যশোরের উদ্যোগে রোববার সন্ধ্যায় রওশন আলী মঞ্চে অনুষ্ঠিত হলো ‘রত্নগর্ভা সম্মাননা ও মায়েদের সমাবেশ’। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া গানের মূর্ছনা আর মাতৃবন্দনার আবেগঘন আবহে সম্মানিত করা হলো পাঁচ মহীয়সী রত্নগর্ভা মাকে।
কবি ও গীতিকার ড. শাহনাজ পারভীনের লেখা “মায়ের জন্য সৃষ্টি হলো দিবস রাতি” গানটি যখন মঞ্চে পরিবেশিত হচ্ছিল, তখন দর্শক সারিতে বহু নারী-পুরুষের চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। কেউ রুমাল দিয়ে চোখ মুছছিলেন, কেউ আবার অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন মঞ্চের দিকে। এমন এক আবেগপূর্ণ পরিবেশে প্রধান অতিথি ও অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা পাঁচজন গর্বিত মাকে সম্মাননা জানান। সম্মাননা স্বরুপ তাঁদের হাতে ক্রেস্ট ও ফুলের তোড়া তুলে দেয়া হয়।
সম্মাননাপ্রাপ্ত ৫ রত্মগর্ভা হলেন- সফল পাঁচ সন্তানের জননী রাজিয়া সুলতানা, সফল পাঁচ সন্তানের জননী সাহানারা খাতুন, সফল তিন সন্তানের জননী নাজমা খাতুন। মরনোত্তর সম্মাননাপ্রাপ্ত দুইজন হলেন- সফল সাত সন্তানের জননী নূরজাহান বেগম ঝরণা ও সফল সাত সন্তানের জননী শামসুন্নাহার বেগম।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন ‘শেকড়’ যশোরের প্রতিষ্ঠাতা রওশন আরা রাশু। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন যশোর ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু, প্রফেসর ড. মুস্তাফিজুর রহমান, বাঁচতে শেখার পরিচালক এঞ্জেলা গোমেজ, কবি হারুন অর রশীদ, নারী নেত্রী হাবিবা শেফা, কবি ও গীতিকার ড. শাহনাজ পারভীন, আবৃত্তিকার শ্রাবণী সুর প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ অটো’র ব্যাবস্থাপনা পরিচালক কবি কাসেদুজ্জামান সেলিমের পক্ষ থেকে সম্মাননাপ্রাপ্ত পাঁচজন মায়ের হাতে বিভিন্ন উপহার সামগ্রী তুলে দেয়া হয়। সম্মাননা প্রদান শেষে মা দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
‘শেকড়’ যশোরের প্রতিষ্ঠাতা রওশন আরা রাশু বলেন, একজন সন্তানকে সফল, যুগোপযোগী ও মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। মায়েরা তাঁদের সন্তানদের জন্য বহু ত্যাগ স্বীকার করেন। সেই ত্যাগ ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতি বছর আন্তর্জাতিক মা দিবসে ‘শেকড়’ এই সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। তিনি আরও বলেন, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অন্যান্য মায়েরাও তাদের সন্তানদের সুশিক্ষিত, সফল ও মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে উৎসাহিত হবেন।
সম্মাননা প্রাপ্তদের সংক্ষিপÍ পরিচিত তুলে ধরা হলো:
রাজিয়া সুলতানা:
তার ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে কর্মজীবনে সফল হয়েছেন। ছেলে খন্দকার এহতেশামুল কবীর হিল্লোল নেদারল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পান। বর্তমানে তিনি মিরপুর মেট্্েরারেলে যুগ্ম-সেক্রেটারি পদে কর্মরত আছেন। খন্দকার ইফতেখার কবীর হিন্দোল মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত আছেন। খন্দকার এহেসানুল কবীর হিমেল পেশায় একজন ব্যবসায়ী। মেয়ে নাসরিন সোনিয়া সুলতানা রিমা শিক্ষকতা করছেন। অন্যজন খন্দকার তানজিলা সুলতানা লোপা বর্তমানে রাজশাহীতে কর্মরত আছেন।
মোছা: সাহানারা খাতুন:
৩ ছেলে ২ মেয়ের জননী। মেয়ে হালিমা খাতুন ও তাসলিমা খাতুন পেশায় গৃহিনী। ছেলে সাইফুদ্দিন আহমেদ মনিরামপুর থানার মেডিকেল অফিসার, আবু সাঈদ ইসলামী ব্যাংক ঢাকার সিনিয়র অফিসার ও সাহাবুদ্দিন আহমেদ মাগুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
নাজমা খাতুন:
২ ছেলে ১ মেয়ের জননী নাজমা খাতুন। ছেলে এস এম আক্তারুজ্জামান সুমন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার, ঢাকায় কর্মরত আছেন, এস এম কামরুজ্জামান সোহান কুষ্টিয়া সরকারি হাসপাতালে ডেন্টাল চিকিৎসক ও মেয়ে মৌসুমি আক্তার ইভা পেশায় একজন গৃহিনী।
নূরজাহান বেগম ঝরণা:
২ ছেলে ও ৫ মেয়ের মা নূরজাহান বেগম ঝরণা। ছেলে আবুল কালাম আজাদ লিটু সদর সদর হাসপাতালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ও ঝরণা ক্লিনিকের মালিক। ছেলে ইশতিয়াক আহম্মেদ ও মেয়ে সামিয়া করিম আমেরিকা প্রবাসী। আরেক মেয়ে নার্গিস ইসলাম ঢাকায় বসবাস করে, ইসমাত আরা, জেসমিন আক্তার ও সাবরিনা আক্তার পেশায় গৃহিনী
শামছুন্নাহার বেগম:
৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জননী শামছুন্নাহার বেগম। ছেলে প্রফেসর মিজানুর রহমান বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে তিনি নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ইসলামীয়া চক্ষু হাসপাতাল ঢাকায় কর্মরত। আনিছুর রহমান মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক। মাহাবুবুর রহমান কালিগঞ্জের সরকারি মাহাতাব উদ্দীন ডিগ্রী কলেজ অধ্যক্ষ। তবিবর রহমান পেশায় একজন ব্যবসায়ী। আতিয়ার রহমান আমাদের বাড়ী যশোরের পরিচালক। মেয়ে এলিজা পারভীন কালীগঞ্জের ফয়লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ও রোমেনা খাতুন পেশায় গৃহিনী।