বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের অভয়নগরে সুন্দলী ইউনিয়নের ডহর মশিয়াহাটি গ্রামে বাড়েদাপাড়ার মতুয়া সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাটে ও অগ্নিসংযোগে ১৯ পরিবারের অন্তত ৪৯ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দায়েরকৃত মামলায় এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। ভুক্তভোগী সুশান্ত বিশ্বাসের স্ত্রী কল্পনা বিশ্বাস সোমবার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১০০-১৫০ জনকে আসামি করে অভয়নগর থানায় মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন, উপজেলার সরখোলা গ্রামের ইমন হোসেন (৩০), একই গ্রামের রিফাতুল ইসলাম রাতুল (২৩) ও বুইকারা গ্রামের সাজ্জাদ হোসেন (২৭)।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) নওয়াপাড়া পৌর কৃষকদল সভাপতি তরিকুল ইসলাম হত্যাকে কেন্দ্র করে মতুয়া সম্প্রদায়ের ১৯টি পরিবারের বসতবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তরিকুল হত্যায় এজাহারভুক্ত দিনেশ ও সুমন নামে আরোও দুই আসামিকে আটক করেছে পুলিশ। এই দিয়ে হত্যাকান্ডে মোট চার আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মামলার বাদী কল্পনা বিশ্বাস উল্লেখ করেছেন, ‘গত ২২ মে বৃহস্পতিবার কৃষকদল নেতা তরিকুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে অজ্ঞাতপরিচয় ১০০ থেকে ১৫০ জন দেশীয় অস্ত্র ও পেট্রোলসহ বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তারা বসতঘরের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে এবং নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মালামাল লুট করে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার প্রায় ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
কল্পনা বিশ্বাস জানান, ‘হামলাকারীরা আমার প্রতিবেশী শংকর বিশ্বাস, মহিতোষ বিশ্বাস, দিলীপ বিশ্বাস, বিষ্ণু বিশ্বাস, বিপ্রজিৎ বিশ্বাস, অজিত বিশ্বাস, বিকাশ বিশ্বাস, প্রতাপ বিশ্বাস, প্রণব বিশ্বাস, বাসুদেব বিশ্বাস, সুকৃতি বিশ্বাস, পরিতোষ বিশ্বাস, বারিন বিশ্বাস, মনিশান্ত বিশ্বাস, পবন বিশ্বাস, অমর বিশ্বাস, সমর বিশ্বাস ও দিনেশ বিশ্বাসের বাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। সব মিলিয়ে ১৯টি পরিবারের প্রায় ৪৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পরে হামলাকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। মামলা করা হলে বাদীকে হত্যা করা হবে বলে তারা হুমকি দিয়ে চলে যায়।’ কল্পনা বিশ্বাস বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে সোমবার রাতে বাদী হয়ে অভয়নগর থানায় মামলাটি দায়ের করেছি। চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটছে।’
এ ব্যাপারে বুধবার অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আলীম বলেন, ‘ডহর মশিয়াহাটি গ্রামে মতুয়া সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৩জনকে আটক করা হয়েছে। আটকের পর তাদের বুধবার আদালতে পাঠালে বিচারক কারাগারে প্রেরণ করেছে। এই ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তকরণের পাশাপাশি আটকের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
ওসি আরো বলেন, ‘তরিকুল হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত ফিরোজ খান, সাগর বিশ্বাস, দিনেশ ও সুমন নামে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের আটকে অভিযান চলমান রয়েছে।’
বৃহস্পতিবার উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের ডহর মশিয়াহাটি গ্রামে বেড়েধাপাড়ায় পিন্টু বিশ্বাসের বাড়িতে খুন হয় নওয়াপাড়া পৌর কৃষক দলের সভাপতি তরিকুল ইসলাম। মৎস্যঘেরের জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে অজ্ঞাতনামা ৬-৭ জন অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা তরিকুলকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই রাতে বিক্ষুব্ধ জনতা পিন্টু বিশ্বাসের বাড়িসহ মতুয়া সম্প্রদায়ের ১৯টি পরিবারের ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।