# মুরগির বাচ্চার চাহিদা ৩৬ লাখ
# উৎপাদন হচ্ছে দেড় লাখ
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
৬২ বছর আগে ১৯৫৯ সালে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন ও আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে যশোর শহরের শংকরপুর এলাকায় ২৭ বিঘা জমির ওপরে যশোর সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামার গড়ে তোলা হয়। যশোর অঞ্চলে মুরগির বাচ্চা পালনের চাহিদা রয়েছে বছরে ৩৬ লাখের বেশি। অথচ এ খামারে বছরে মাত্র দেড় লাখ বাচ্চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। লোকবলের তীব্র সংকট আর নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। কখনও লাভের মুখ দেখেনি প্রতিষ্ঠানটি। তবে খামারটির কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের কাছে ২৭ কোটি টাকার চাহিদা চাওয়া হয়েছে। এই টাকার বরাদ্দ পেলে বদলে দেয়া হবে খামারটি।
মুরগি খামার সূত্রে জানা গেছে, গরমসহিষ্ণু ফাউমি জাতের মুরগির বাচ্চার চাহিদা এ অঞ্চলে বেশি। দেশে গরমসহিঞ্চু জাতের মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয় যশোর সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে। তবে এখানে চাহিদা অনুযায়ী মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হচ্ছে না।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, যশোর অঞ্চলে এই মুরগির বাচ্চা পালনের চাহিদা রয়েছে বছরে ৩৬ লাখের বেশি। অথচ এ খামারে বছরে মাত্র দেড় লাখ বাচ্চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। অথচ ৪০ লাখ ৩২ হাজার বাচ্চা উৎপাদনের আধুনিক যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। ডিমপাড়া মুরগি রাখার ঘর আধুনিকায়ন করে প্রয়োজনীয় জনবল ও বরাদ্দ বাড়লে বাচ্চা উৎপাদন সম্ভব।
সরেজমিন দেখা গেছে, মুরগির বাচ্চা ফোটানোর মাত্র দুটি যন্ত্রের (ইনকিউবেটর) মাধ্যমে বাচ্চা ফুটানো হয়। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই এখানে। ডিম পাড়া মুরগি ও মোরগ পালনের জন্য ২২টি শেড (ঘর) রয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি ব্যবহারের অনুপযোগি। ওই শেডগুলোর চাল টিনের ও মেঝে নিচু। ফলে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে থাকে না। যে শেডগুলোতে মুরগি পালন করা হচ্ছে, সেগুলোও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়নি। স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুরগির বিষ্ঠা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না।
খামার সূত্রে জানা গেছে, উষ্ণ জলবায়ুতে খোলা পদ্ধতিতে ফাউমি জাতের মুরগির বাচ্চা পালনের উপযোগী। এই মুরগির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। খাদ্য কম লাগে। এক দিনের মুরগির বাচ্চা সরকারি ভর্তুকি মূল্যে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। এ কারণে এই বাচ্চার চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। তবে এই বাচ্চা উৎপাদনে খরচ হয় ২৫ টাকা। আর ডিম বিক্রি করা ক্রয় সাড়ে ৭ টাকা পিস।
২০২০ সালে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক উদ্যোক্তা ৫০ লাখ মুরগির বাচ্চার চাহিদা দিয়ে আবেদন করেছেন। খামারের বাচ্চা উৎপাদন সীমিত। যে কারণে আবেদন নেওয়া বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
এ ব্যাপারে খামারের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো: বখতিয়ার হোসেন বলেন, বছরে মাত্র দেড় লাখ বাচ্চা উৎপাদনের অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ ২৫ হাজার বাচ্চা আবার সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা ও যশোরের নিজস্ব খামারে পালনের জন্য রাখতে হয়। অবশিষ্ট ২৫ হাজার বাচ্চা বিক্রির সুযোগ রয়েছে। অথচ বছরে বাচ্চার চাহিদা রয়েছে ৩৬ লাখের বেশি। বর্তমানে এক দিনের মুরগির বাচ্চার চাহিদার ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। সক্ষমতা না থাকায় মুরগির বাচ্চার চাহিদার আবেদন বন্ধ রাখা হয়েছে। আমাদের এখানে বছরে সরকারের ব্যয় হচ্ছে এক কোটি টাকা। আয় হচ্ছে ৭০ লাখের মতো।
তিনি বলেন, এ প্রতিষ্ঠানে ডিম পাড়া মুরগি আড়াই হাজারটি পালন ও দুই লাখ বাচ্চা উৎপাদনের জন্য সরকারি বাজেট-বরাদ্দ রয়েছে। ডিম ফোটানোর আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। আবার মুরগি রাখার ঘরসহ অন্যান্য অবকাঠামো অতি প্রাচীন আমলের। এজন্য আমরা ২৭ কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়েছি। এটি পাওয়া গেলে উন্নত খামার হিসেবে এটিকে প্রতিষ্ঠা করা যাবে। তা ছাড়া ২৫ জন জনবলের স্থলে রয়েছেন মাত্র ৭ জন। ১৮টি পদ বছরের পর বছর শূন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কোনো রকমে কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। খামারটি পূর্ণভাবে চালু করা সম্ভব হলে বছরে ৪০ লাখ ৩২ হাজার মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হবে।
এই প্রতিষ্ঠানে যে সামান্য সংখ্যক বাচ্চা উৎপাদন হয়, এর বেশির ভাগ আবার চলে যায় কালোবাজারে। ১৫ টাকা দামের এক দিনের মুরগির বাচ্চা দ্বিগুণ দামে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কিনতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
যশোর ঝিকরগাছা উপজেলার আবিদুর রহমান নামের একজন উদ্যোক্তা বলেন, ‘সরকারি খামারের ফাউমি জাতের মুরগির বাচ্চা নেওয়ার জন্য গত ৩ বছর আগে আবেদন করেছি। কিন্তু এখনো সেই বাচ্চা হাতে পাইনি। ১৫ টাকা দামের মুরগির বাচ্চা ৩০-৩৫ টাকা দামে কিনতে হয়েছে।’