তিতাস গ্যাস কর্মকর্তা ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে যশোর দুদকে মামলা
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে যশোর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ে তিতাস গ্যাস কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দু’টি মামলা হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী মিলে ৮৫ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বৃহস্পতিবার মামলা দু’টি করেছেন দুদক যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক জালাল উদ্দিন। অভিযুক্তরা হলেন, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি.’র উপ-ব্যবস্থাপক রিয়াজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মনিকা রেজা।
রিয়াজুল ইসলাম নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার শামুকখোলা (দক্ষিণপাড়া) গ্রামের কাজী নূর জলিলের ছেলে। তিনি বর্তমানে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ কার্যালয়ে কর্মরত। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আল-আমিন।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, রিয়াজুল ইসলাম চাকরিজীবী ও তার স্ত্রী মনিকা রেজা গৃহিণী। তারা ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ পন্থায় সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অনুসন্ধানে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। রিয়াজুল ইসলামের ৩৯ লাখ ৯২ হাজার ৪০২ টাকার ও মনিকা রেজার ৪৫ লাখ ২৫ হাজার ২০৯ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ রয়েছে। অর্থাৎ দু’জনের অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ ৮৫ লাখ ১৭ হাজার ৬১১ টাকা।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, রিয়াজুল ইসলাম ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন এবং বর্তমানে উপ-ব্যবস্থাপক পদে জোনাল বিক্রয় অফিস (জোবিঅ), সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়নগঞ্জে কর্মরত আছেন। তার বিরুদ্ধে আনীত জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানকালে দেখা যায়, রিয়াজুল নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলায় ২০ লাখ ৪৩ হাজার ৭৬৯ টাকার সম্পত্তি ক্রয় করেছেন। এছাড়া ব্যাংকে তার অস্থাবর সম্পদের পরিমান ৩৮ লাখ ৫১ হাজার ৬২০ টাকা। তার নামে অর্জিত স্থাবর-অস্থাবরসহ মোট সম্পদের পরিমাণ ৫৮ লাখ ৯৫ হাজার ৩৮৯ টাকা। তার মোট পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় পাওয়া যায় ৩১ লাখ ৯০ হাজার ৮৭০ টাকা। পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত সম্পদের মূল্য ৯০ লাখ ৮৬ হাজার ২৫৯ টাকা। বেতন বিবরণী ও আয়কর নথি অনুযায়ী তার মোট গ্রহণযোগ্য আয় ৫০ লাখ ৯৩ হাজার ৮৫৭ টাকা। সে মোতাবেক তার জ্ঞাত আয়ের সাথে অসংগতিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ ৩৯ লাখ ৯২ হাজার ৪০২ টাকা।
রিয়াজুল ইসলামের স্ত্রী মনিকা রেজার বিরুদ্ধে দায়ের করা অপর মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি গৃহিণী হওয়া সত্ত্বেও জ্ঞাত আয়ের সাথে অসংগতিপূর্ণ ৪৫ লাখ ২৫ হাজার ২০৯ টাকার সম্পদ রয়েছে। তিনি এই সম্পদ নিজ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় এবং তার স্বামী রিয়াজুল ইসলাম ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দিয়ে তার স্ত্রী মনিকা রেজাকে ওই সম্পদ অর্জনে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, মনিকা রেজা ২০১৮ সালে রিয়াজুল ইসলামের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি একজন গৃহিণী। তার নিজের কোন বৈধ আয় নেই। তিনি ২০২০-২০২১ করবর্ষ হতে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন। মনিকা রেজা একজন গৃহিণী হয়েও দাখিলকৃত আয়কর রিটার্নে টেইলারিংয়ের ব্যবসা বাবদ আয় প্রদর্শন করেছেন। দাখিলকৃত আয়কর রিটার্ন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২০-২০২১, ২০২১-২০২২ ও ২০২২-২০২৩ করবর্ষসমূহে তিনি ব্যবসা খাত হতে মোট ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৯৮৩ টাকা আয় করেছেন। সরেজমিনে তার কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এছাড়াও তিনি ২০২০-২০২১ করবর্ষে ব্যবসা বহির্ভুত নগদ অর্থ বাবদ ৩০ লাখ ২৩ হাজার ৬০৪/- টাকা প্রদর্শন করেছেন। ব্যাংকে থাকা অর্থসহ তার নামে অর্জিত মোট সম্পদের পরিমান ৪৫ লাখ ২৫ হাজার ২০৯ টাকা। যা তার জ্ঞাত আয়ের সাথে অসংগতিপূর্ণ।
এর প্রেক্ষিতে রিয়াজুল ইসলাম ও মনিকা রেজার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় ও দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ১০৯ ধারায় পৃথক দু’টি মামলা হয়েছে। মামলা দু’টি তদন্ত করবেন দুদক যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক জালাল উদ্দিন।