♦ অভয়নগরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়
♦ বাজার তদারকিতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে
প্রতীক চৌধুরী
নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি কিংবা অবৈধ মজুদ ও দাম কারসাজিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন। যশোর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন পৃথকভাবে নিত্যপণ্যের বাজারে কারসাজিতে জড়িতে বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু করেছে। আজ (শনিবার) জেলা পুলিশের টিম শহরের বড়বাজারে অভিযান পরিচালনা করেছে। এদিন কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলেও কঠোর হুশিয়ারি দেয়া হয়েছে। একইদিন ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে অভয়নগরে অবৈধভাবে গম ও ডাল মজুদ করার দায়ে আকিজ এসেনসিয়ালস লিমিটেড ও মেসার্স সৈনিক ট্রেডার্স নামে দুই প্রতিষ্ঠানকে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ মজুদদার ও বাজারে কারসাজিতে জড়িতদের ছাড় দেয়া হবে না। বিশেষ ক্ষমতা আইনে ব্যবস্থা নিবে পুলিশ। আর জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীদের লাগাম টানবে। প্রশাসনের নড়েচড়ে বসাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ভোক্তারা।
জানা যায়, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অন্যতম নিত্যপণ্যের দাম ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা। বাজার নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ নিয়েছে সরকার। কারসাজি করে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করা চক্রের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তাদের হুশিয়ারির পরও বাজার স্বাভাবিক হয়নি। এই অবস্থায় শনিবার থেকে যশোরের বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযান শুরু করেছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন।
আজ (শনিবার) দুপুরে যশোর শহরের বড় বাজারের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মূল্য তালিকা পরিদর্শন এবং সরকারের নির্ধারিত দামে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে অভিযান পরিচালনা করেন জেলা পুলিশের টিম। এ সময় যে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মূল্য তালিকা নেই তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সরকারের অন্তত এক ডজন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছেন। কেউ পোষাকে, কেউ আবার ভোক্তার ছদ্মবেশে বাজার মনিটরিং করছেন। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন যশোর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) বেলাল হোসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফিরোজ কবির, ক সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান, কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক, যশোর সদর পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ ইন্সপেক্টর রোকিবুজ্জামান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে যাতে কেউ অধিক মুনাফা লুটতে না পারে সেজন্য বাজার তদারকি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় অবৈধ মজুদদার চক্রের বিরুদ্ধে পুরো জেলায় এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। কারো বিরুদ্ধে অবৈধ মজুদ, কৃত্রিম সংকটের অভিযোগ প্রমাণ পেলে পুলিশ বিশেষ ক্ষমতা আইনে ব্যবস্থা নিবে। আর যে অপরাধ মোবাইল কোর্টের আওতায় পড়বে, সেটি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে অনুরোধ করা হবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন আরও বলেন, শনিবার যশোর শহরের বড়বাজারের পাইকারী ও খুচরা বাজার তদারকি করা হয়েছে। কৃত্রিম সংকট, অবৈধ মজুদের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে। যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পাইকারী ও খুচরা দামের হেরফের ছিল, সেখানে ব্যবধান কমেছে। আমরা প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে সতর্ক করেছি। জেলার প্রত্যেক থানা এলাকায় আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে পণ্যের দাম রাখতে সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়নে পুলিশ কাজ করবে।এদিকে, যশোরের অভয়নগরে অবৈধভাবে গম ও ডাল মজুদ করার দায়ে আকিজ এসেনসিয়ালস লিমিটেড ও মেসার্স সৈনিক ট্রেডার্স নামে দুই প্রতিষ্ঠানকে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। শনিবার দুপুরে উপজেলার মশরহাটী গ্রামে এ রহমান পরশ অটোরাইস মিল সংলগ্ন গুদামে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযান শেষে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক অভয়নগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) থান্দার কামরুজ্জামান জানান, সরকারি নিয়মে আমদানি করা গম ৩০ দিন ও ডাল ৬০ দিনের বেশি গুদামে রাখা যাবে না। অথচ আকিজ এসেনসিয়ালস লিমিটেড নামে একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কয়েকটি গুদামে প্রায় ৬ মাস ধরে রাখা ২ হাজার ৪৬ মেট্রিক টন গোটা মসুর, ৪ হাজার ৯২৯ মেট্রিক টন মটর ডাল ও ৩১ মেট্রিক টন গম পাওয়া যায়। যা পোকায় খেয়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এছাড়া মেসার্স সৈনিক ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের দুটি গুদামে ৩ হাজার মেট্রিক টন গম পাওয়া যায়। যে গম প্রায় ৬ মাস ধরে গুদামে আটকে রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, অবৈধভাবে খাদ্যপণ্য মজুদ করার অপরাধে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৫৬ এর ৬ (১) ধারায় আকিজ এসেনসিয়ালস লিমিটেড কর্তৃপক্ষকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা ও একই আইনে মেসার্স সৈনিক ট্রেডার্সকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া মজুদকৃত পণ্য উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সমন্বয়ে আগামী ৩ দিনের মধ্যে বিক্রি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অভিযান চলাকালে উপস্থিত ছিলেন, অভয়নগর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাইদুর রহমান, অভয়নগর থানা এএসআই আলমগীর হোসেন প্রমুখ।