কেশবপুর প্রতিনিধি
শ্রী নদীর নাব্যতা না থাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে চলতি মৌসুমে যশোরের কেশবপুর উপজেলার ৫ ইউনিয়নের ২০টি বিলের প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ নিযে অনিশ্চয়তায় কৃষকরা। উপজেলার পূর্বাংশের কালিচরণপুর, বাগডাঙ্গা, বুড়ুলি,খুকশিয়া, গরালিয়া বিলসহ ২০টি বিলের ২ হাজার ৪শ’ ৪৭ হেক্টর জমিতে এবারও বোরো আবাদ করা যাবে না। গত ৪ বছর ধরে জলাবদ্ধতার কারণে এসব বিলের জমিতে বোরো আবাদ করতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাজারো কৃষক।
উপজেলার পূর্বাংশের পাঁজিয়া,সুফলাকাটি, মঙ্গলকোট গৌরিঘোনা ও কেশবপুর সদর ইউনিয়নে ২২টি ছোট বড় বিল রয়েছে। পলি জমে শ্রী নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টিতে জমে থাকা বিলের পানি বিভিন্ন খাল দিয়ে শ্রী নদীতে নিস্কাশিত হতে পারছে না। ৮০’র দশক থেকে উপজেলার বিশাল এলাকার এ বিলগুলো স্থায়ী জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে।
বাগডাঙ্গা ও মনোহরনগর বিলে স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে গত চার বছর ধরে কোন ধরনের ফসল হয়নি। সারা বছর বিলসহ বাড়ি ঘরে জমে থাকে পানি। মনোহরনগর ও বাগডাঙ্গা বিলের পানি ডায়ের খাল দিয়ে শ্রী নদীতে নিস্কাশিত হতো।
বিল গরালিয়া গত বছর পর্যন্ত বোরো আবাদ হলেও হরিহর নদী দিয়ে পানি বের হতে না পেরে এবার বিল গরালিয়ায় জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। এ বছর বিলের জমিতে ইরি বোরো ধানের আবাদ হবে না বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। মাগুরাডাঙ্গা গ্রামের ছহিল উদ্দিন, জামাল হোসেনসহ একাধিক কৃষক জানান, এবার ঘের মালিক পানি সেচ দিয়ে বের করতে পারছেন না। কারণ পানি বের হওয়ার কোন পথ নেই।
সরেজমিনে রাজনগর বাঁকাবর্শী গ্রামের এক কৃষককে বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলে ফেলে দিতে দেখা যায়। তিনি জানান, গরালিয়া বিলে সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে ধান লাগানোর জন্য বিজতলা তৈরি করলেও বিলে পানি জমে থাকায় ধান চাষ করতে না পেরে ধানের চারা ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
বাগডাঙ্গা গ্রামের রবিন সরকার জানান, মনোহরনগর ও বাগডাঙ্গা বিলে এ বছরও ধান হবে না। গত ৪/৫ বছর ধরে কোন আবাদ হয় না ওই দুই বিলে। বাগডাঙ্গা গ্রামের বিষেশ^র সরকার, অমিয় সরকারসহ অনেক কৃষক জানান, বিলে তাদের ২ থেকে ৮ বিঘা জমি থাকলেও ৪ বছর ধরে ধান চাষ না হয় না। তাই শ্রমিকের কাজ করতে অন্য উপজেলার ফুলতলা, জামিরাসহ বিভিন্ন এলাকায় যেতে হয়। মিলন সরকার, পালিতা সরকার, রিতা সরকার, গৌতম, অসীম সরকারের বাড়িসহ প্রায় দুই শতাধিক বাড়িতে এখনও পানি জমে রয়েছে। জগদিশ সরকারের উঠানে হাঁটু পানি। ঘর থেকে রান্নাঘর ও গোয়ালঘরে যাতায়াতের জন্য উঠানে বাঁশ দিয়ে সাঁকো বানিয়ে নিয়েছেন। তিনি জানান, এভাবে ৬ মাস জল থাকে বাড়িতে। ঘেরের পানি সেচ দিয়ে খালে ফেললে তা বের হতে না পেরে বাড়িঘর তলিয়ে যায়।
খুকশিয়া বিলের কৃষক ময়নাপুর গ্রামের মহেন্দ্র মন্ডল জানান, গত ৪ বছর তিনি কোন ফসল ফলাতে পারেননি। তার গ্রামের সকলেরই একই অবস্থা। কালিচরণপুর গ্রামের মহিতোষ, কৃঞ্চপদ মল্লিক, গোবিন্দ, তপন, সাধনসহ অনেকেই জানান, টিআরএম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা কোন ফসল করতে পারেন না। মাছের ঘেরে কাজ করে কোন রকম তাদের সংসার চলে। এই গ্রামের অনেকেই জলাবদ্ধতার কারণে এলাকা ছেড়ে পরিবার নিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন বলে এলাকাবাসী জানান।
জলাবদ্ধ বিলগুলো হলো বিল খুকশিয়া, নারায়ণপুর, কালিচরণপুর, বড়ুলি, হাড়িয়াঘোপ, কায়েমখোলা, সারুটিয়া, কৃঞ্চনগর, ডহুরি, বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর, হদের, গড়ভাঙ্গা, গরালিয়া, নোনাডাঙ্গা, বলধালি, আলতাপোল, টেপুর, ভায়না, চুয়াডাঙ্গা, ঘাঘা, পাথরা এবং আগরহাটি বিল। সরকারি হিসেবে এই ২২টি বিলে মোট জমির পরিমাণ ৫ হাজার ৪শ’ হেক্টর। এর মধ্যে ২ হাজার ৪শ’ ৪৭ হেক্টর জমিতে এবার বোরো আবাদ হবে না বলে কৃষি অফিস জানিয়েছে। তবে বাস্তবে আরও বেশি পরিমাণ জমিতে আবাদ হবে না বলে কৃষদের দাবি। গোটা উপজেলায় এবার বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমি। এ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ৩শ’ হেক্টর জমি।
কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার জানান, নদী ও খালের তলদেশ পলি জমে উঁচু হয়ে যাওয়ার পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় এসব বিলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বিলের পানি সেচ দিয়ে বের করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কৃষকরা বোরো আবাদ করতে পারছেন না। জলাবদ্ধতার কথা উপজেলার প্রতিটি সভায় তোলা হয়েছে। তবে কোন ব্যবস্থা হয়নি।
শিরোনাম:
- একই সঙ্গে দুই কলেজের অধ্যক্ষ জাহিদুলের নজিরবিহীন দুর্নীতি
- অভয়নগরকে হারিয়ে ফাইনালে কালীগঞ্জ
- অফিস সহকারী পদে হেলালের এমপিওভুক্তি নিয়ে লুকোচুরি
- শিক্ষার মান উন্নয়নে ভালো শিক্ষক দরকার
- উপশহর টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষা সফর অনুষ্ঠিত
- ‘বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম গড়তে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে’
- যশোরে নতুন আঙ্গিকে ব্রাদার্স ফার্নিচার শো রুম উদ্বোধন
- আলুর দাম লাগামহীন ভোক্তার নাভিশ্বাস