স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
রমজান সমাগত। বাড়তে শুরু করেছে ফলের দাম। মৌসুমী ফলের সরবারহ কম থাকায় ভোক্তার নির্ভরতা বাড়ছে আমদানি করা ফলে। নানা অজুহাতে বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ফলের দাম। অধিকাংশ ফলের দাম নাগালের বাইরে। খুচরা ও পাইকারী পর্যায়ে ইচ্ছামত দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। বাজার ভেদে দামের হেরফেরও রয়েছে। ফলের বাজার মনিটরিংয়ে নেই কোন ব্যবস্থা। রোজার মাসে ইফতারিতে নিম্ন আয়ের মানুষ পর্যাপ্ত পছন্দের ফল খেতে পারবে কিনা সংশয়ে রয়েছে।
আজ যশোর শহরের ফলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজার ভেদে ফলের দামে তারতম্য রয়েছে। তবে সব ধরনের ফলের দাম চড়া। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মৌসুমী ও আমদানি করা অধিকাংশ ফলের দাম প্রতিকেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। বাজার ও মানভেদে ফলের দামে পার্থক্য রয়েছে। বাজারে দেশি নারকেল কুল ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহের যার দাম ৬৫ থেকে ৭০ টাকা ছিলো। দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা কেজিতে। নাইনটি জাতের কুলের দাম ১০০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে যা ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। এখানে দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা। পেঁয়ারা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। পেঁয়ারার দাম স্থিতিশীল থাকলেও সরবরাহ কমে গেছে।
তরমুজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা। চালতা, বেল ছোট বড় আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।
গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি পিসে দাম বেড়েছে ২ থেকে ৫ টাকা। ডাব বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। ডাবের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও বড় ডাবের সরবরাহ কম। কাগুজি লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। গত সপ্তাহে ২০ থেকে ২৫ টাকা বিক্রি হয়। দাম বেড়েছে হালিতে ৫ থেকে ১০ টাকা। দুধসাগর কলার ডজন প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা।
গত সপ্তাহে যা ৯০ থেকে ১০০ টাকা। ঠোঁটে কলার দামও বেড়ে ৭০টাকা ডজন হয়েছে। পাকা পেঁপে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। যা ৬৫ টাকা কেজি ছিলো।
অন্যদিকে, আমদানিকৃত ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে খেজুরের। মানভেদে প্রতিকেজি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২শ’ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত কেজি দরে। এর মধ্যে ফরিদা খেজুর ৫শ’ টাকা কেজি, দাবাস ৪৮০টাকা, জিহাদি ৩৫০টাকা, আজুয়া এক হাজার টাকা, মরিয়ম এক হাজার টাকা, নাগাল ৫৬০ টাকা, খোলা খেজুর ৬শ’ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খেজুরের দাম প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আঙ্গুর, কমলার দাম কিছুটা কমলেও নাগালের মধ্যে নেই। সাদা আঙুর ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কেনু লেবু ২শ’ টাকা কেজি ও কমলা লেবু ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা কমেছে। বড় সাইজের বেদানা ফল বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৩৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ বেদানার দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। আপেল বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে যা ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে। আপেলের ধরণ ভেদে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
শহরের দড়াটানায় ফল বিক্রেতা বাবু মির্জা বলেন, পাইকারি তরমুজ পিস হিসেবে কিনলেও দাম অনেক বেশি। এজন্য কেজি হিসেবে বিক্রি করতে হয়। ১৫ রোজা পর্যন্ত তরমুজের দাম বাড়বে। এরপর বাজুয়া, কয়রার তরমুজ বাজারে আসলে দাম কমার সম্ভাবনা আছে।
বড় বাজারের ফল ব্যবসায়ী মাহমুদ হাসান বাবু বলেন, দেশি ফলের দাম কিছুটা কম। বিদেশি ফলের দাম বেশি। বড় বড় ব্যবসায়ীরা ফলের দাম নিয়ন্ত্রণ করে। ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের।
আব্দুল জলিল নামে একজন ভোক্তা বলেন, ফলের দাম কিছুটা বাড়লেও ক্রয়সীমার মধ্যে আছে। এরপর রোজার ভিতরে দাম বাড়লে সেটা নাগালের বাইরে চলে যাবে। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থার ভিতরে আনলে সাধারণ ভোক্তার ভোগান্তি কমবে।
যশোর ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন চুন্নু বলেন, ফলের বাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই। যে দামে ফল কেনা হয়, তার উপর ১০ থেকে ২০ টাকা লাভে বিক্রি করা হয়। রোজার ভিতরে ফলের দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
দেশি ফলের মৌসুমে ফলের দাম কমে। মৌসুম ছাড়া দেশি ফলের সরবরাহ কম থাকে। বাজারে সরবরাহ কম থাকলে স্বাভাবিকভাবে দাম বৃদ্ধি পায়।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যশোরের সহকারী পরিচালক সৈয়দা তামান্না তাসনীমের মুঠো ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।