বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) আলোচিত ‘লিফটকাণ্ড’ নিয়ে হাইকোর্টের রুলের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত টাকা পরিশোধের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। লিফট হস্তান্তরের আগেই এই তোড়জোড় নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আলোচিত ‘লিফটকান্ড’ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। এর আগে যবিপ্রবি’ ১৪টি লিফট স্থাপন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় দায়েরকৃত রিট আমলে নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছর মে মাসে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ১৪টি লিফট স্থাপন নিয়ে নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। প্রায় দশ কোটি টাকার এই কাজের অনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। দুর্নীতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবং লিফটের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাসিন্দা ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ যশোর জেলা শাখার প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল করিম হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। রিটটি আমলে নিয়ে গত ১২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসাইন রুল জারি করেন।
আদেশে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আদেশের কপি পাওয়ার পর সুষ্ঠু তদন্ত করে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। একইসাথে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বাদীর আইনজীবী মোস্তফা গোলাম কিবরিয়া জানান, যবিপ্রবিতে ১৪টি ‘মেশিনরুম টাইপ’ লিফট স্থাপনের দরপত্র আহ্বান করা হলেও সেখানে ‘মেশিনরুম লেস টাইপ’ লিফট গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ থাকায় হাইকোর্ট রিটটি আমলে নিয়ে রুল জারি করেছেন।
এদিকে, উচ্চ আদালতের আদেশের কপি হাতে পাওয়ার পর দ্রুত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পুরো টাকা পরিশোধের তোড়জোড় শুরু করেছে যবিপ্রবি’র পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ও পূর্ত দপ্তর।
সূত্র জানিয়েছে, লিফট স্থাপন সম্পন্ন হওয়ার আগেই গত ডিসেম্বরে প্রায় দশ কোটি টাকার পুরোটাই ব্যাংক একাউন্ট থেকে তুলে নেয়া হয়। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৬০ ভাগ টাকা পরিশোধের পর বাকি টাকা ব্যাংকে আরেকটি একাউন্ট খুলে জমা রাখা হয়। সম্প্রতি ১৪টি লিফট স্থাপন শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনও তা হস্তান্তর করা হয়নি। এরই মধ্যে উচ্চ আদালত রুল জারি করায় দ্রুত বাকী টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
যবিপ্রবি’র লিফট বুঝে নেয়া কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গালিব জানান, লিফট স্থাপনের পর স্পেসিফিকেশন মিলিয়ে প্রতিবেদন দিয়েছেন। তবে লিফট হস্তান্তর হয়েছে কিনা জানা নেই। আর বিল বা অর্থ পরিশোধের বিষয়টি আমার এখতিয়ারভুক্ত নয়।
তবে এ ব্যাপারে যবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, লিফট স্থাপনের ব্যাপারে একজন পিডি (প্রকল্প পরিচালক) আছেন। এ ব্যাপারে তিনিই বলতে পারবেন। লিফট নিয়ে কোনো কথা বলতে উপাচার্য অনীহা প্রকাশ করেন।
এদিকে, হাইকোর্টের রুলের পর যবিপ্রবি’র আলোচিত ‘লিফটকান্ড’ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যবিপ্রবি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে দুদক লিফট স্থাপন প্রক্রিয়া এবং কাগজপত্র পরীক্ষা নীরিক্ষা শুরু করেছে। দুদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিফট স্থাপনের দায়িত্বে (পিডি) থাকা যবিপ্রবি’র পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ও পূর্ত দপ্তরের পরিচালক পরিতোষ কুমার বিশ্বাসের সাথেও কথা বলেছেন।
এ ব্যাপারে দুদক যশোর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আল-আমিন বলেন, যবিপ্রবি’র লিফট স্থাপনে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে দুদক অনুসন্ধান শুরু করেছে। অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর মে মাসে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪টি লিফট স্থাপন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। প্রায় ১০ কোটি টাকার এই কাজে বড় ধরণের অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ‘যবিপ্রবি’র লিফট কান্ডের’ সংবাদ প্রকাশিত হয়। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, দরপত্রের একাধিক শর্ত লঙ্ঘন করে ১৪টি লিফটের এই মালামাল সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল, ‘মেশিনরুম টাইপ’এর পরিবর্তে ‘মেশিনরুম লেস টাইপ’ লিফট সরবরাহ। একইসাথে ডোর সাইজ এবং মোটরপাওয়ার দরপত্র অনুযায়ী কম মানের সরবরাহ করা হয়। দরপত্র অনুযায়ী সরবরাহকৃত লিফটের তিনটি ক্যাটাগরিতে ‘নন কমপ্লাই’ উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেয় লিফট বুঝে নেওয়া কমিটি। কিন্তু তারপরও সেই স্থাপন করা হয়।